শীতকালে ঠোঁট শুকিয়ে যায়, ফেঁটে যায়। তাই অনেকেই ঠোঁকে লিপজেল ব্যবহার করে থাকেন। আবার এ বিষয়ে অনেকর মনে প্রশ্ন জাগে— ঠোঁটে লিপজেল লাগানো অবস্থায় অজু করলে কি অজু শুদ্ধ হবে? নাকি অজু শুদ্ধ হওয়ার জন্য ঠোঁট ভালো করে ধুয়ে লিপজেল দূর করে নিতে হবে?
অজু শুদ্ধ হওয়ার জন্য অন্যতম শর্ত হচ্ছে— অজুর অঙ্গগুলোর প্রতিটি অংশে পানি পৌঁছানো। অজুর অঙ্গগুলোর কোনোটির মধ্যে যদি পানি না পৌঁছে বা শুকনো থাকে তবে অজু হবে না। লিপজেল, লোশন বা গ্লিসারিন ইত্যাদি চামড়ার সঙ্গে মিশে যায় এবং চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছতে বাধা সৃষ্টি করে না। তাই লিপজেল, গ্লিসারিন বা যে কোনো ধরনের লোশন ঠোঁটে লাগানো অবস্থায় অজু করলে শুদ্ধ হবে। ঠোঁটে লিপজেল লাগানো অবস্থায় অজু করার সময় শুদ্ধ হওয়ার জন্য সাধারণভাবে ঠোঁটসহ পুরো চেহারা ধোয়া ও কুলি করাই যথেষ্ট, ভালো করে ধুয়ে লিপজেল দূর করা জরুরি নয়।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের পেছনে রয়ে গিয়েছিলেন। আমরা আসরের নামাজ শুরু করতে দেরি করে ফেলেছিলাম। তিনি যখন আমাদের কাছে পৌঁছলেন, আমরা অজু করছিলাম এবং তাড়াহুড়ার কারণে আমাদের পা মাসেহ করার মতো হালকাভাবে ধুয়ে নিচ্ছিলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) উচ্চস্বরে বললেন, ‘পায়ের গোড়ালির জন্য জাহান্নামের শস্তি রয়েছে।’ দুবার অথবা তিনবার তিনি এ কথা বললেন। (বুখারি, মুসলিম)
এখানে নবিজী (সা.) সাহাবাদেরকে সাবধান করেছেন তারা যেন অজুর অঙ্গগুলো সচেতনতার সঙ্গে ভালোভাবে ধুয়ে নেন, তাড়াহুড়োর কারণে কোনো অংশ যেন শুকনো না রেখে দেন।
তবে যদি অজুর অঙ্গে এমন কিছু লেগে থাকে যা চামড়ার ওপর আলাদা আবরণ তৈরি করে এবং চামড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছতে বাধা দেয়, তাহলে অজু শুদ্ধ হবে না। যেমন নখে নেইল পলিশ ব্যবহার করা। কোনো ভারী রঙ ব্যবহার করা। যার ফলে আবরণ তৈরি হয়। অজুর সময় অজুর কোনো অঙ্গের কিছু অংশ শুকনো থেকে, কোনো কিছু লেগে থাকার কারণে পানি না পৌঁছলে অজু হবে না। এ অবস্থায় নামাজ পড়লে নামাজও হবে না। অজু করার পর কোনো অঙ্গের কিছু অংশ শুকনো মনে হলে তা ধুয়ে নিতে হবে। হাদিসে এসেছে—
হজরত ওমর (রা.) বলেন, একবার এক ব্যক্তি অজু করে এলে দেখা গেলো তার পায়ের এক নখ পরিমাণ জায়গা শুকনো রয়ে গেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, ফিরে গিয়ে সুন্দরভাবে আবার অজু করুন। ওই ব্যক্তি ফিরে গিয়ে আবার অজু করে তারপর নামাজ আদায় করল। (মুসলিম)