সঞ্চয়পত্র কিনে মুনাফা গ্রহণ কি জায়েজ?
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪২ পিএম
সঞ্চয়পত্র বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি আর্থিক পদ্ধতি। এই সঞ্চয়পত্রের পলিসির ওপর নির্ভর করবে এর বৈধতা এবং এর মুনাফার বৈধতা। এর পলিসি যদি সুদভিত্তিক হয়, তাহলে ইসলামে সুদ হারাম। অবশ্যই ইমানদার ব্যক্তিরা সুদের কোনো লেনদেন করতে পারবেন না। সেটাকে যদি আপনি মুনাফা নাম দেন তাও সেটা আপনার জন্য হারাম হবে। আপনি সেটা গ্রহণ করতে পারবেন না। ইমানদার ব্যক্তির জন্য সেটা হারাম, কোনো সন্দেহ নেই। এক কথায় সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ যদি সুদের অন্তর্ভুক্ত হয় তবে এটি গ্রহণ করা ইসলামি শরিয়তে জায়েজ নয়।
ইসলামিক স্কলারদের মতে, ‘প্রচলিত সঞ্চয়পত্রের প্রদত্ত টাকা সুদী লেনদেনের অন্তর্ভুক্ত। তাই এভাবে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করা মানেই হলো সুদের অংশীদার হওয়া। তাই তা জায়েজ হবে না। কেননা সুদ যে হারাম আল্লাহ তাআলা তা একাধিক আয়াতে নিশ্চিত করেছেন—
১. وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন, আর সুদকে করেছেন হারাম।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৭৫)
২. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللَّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় পাও। আর সুদের অংশকে ছেড়ে দাও যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৭৮)
৩. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً
‘হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেয়ো না।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৩০)
৪. عبد الله بن مسعود عن أبيه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال لعن الله آكل الربا وموكله وشاهديه وكاتبه
হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.)-এর পিতা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন- ‘যে সুদ খায়, যে সুদ খাওয়ায়, তার সাক্ষী যে হয়, আর দলিল যে লিখে তাদের সবার ওপর আল্লাহ তাআলা অভিশাপ করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ ৩৮০৯, মুসনাদে আবি ইয়ালা ৪৯৮১)
সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে সরকার নির্দিষ্ট একটি মেয়াদে বিনিয়োগকারীর টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং এর বিপরীতে একটি নির্ধারিত লভ্যাংশ প্রদান করে। এই লভ্যাংশ মূলত বিনিয়োগের ওপর সুদের ভিত্তিতে নির্ধারিত। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগের ওপর অতিরিক্ত মুনাফা পান, যা ইসলামি শরিয়তে সুদ হিসেবে গণ্য হয়।
সঞ্চয়পত্রের লভ্যাংশ কেন গ্রহণযোগ্য নয়?
সঞ্চয়পত্রের মেয়াদে বিনিয়োগকারী মূলধন ফেরত পান না। বরং নির্ধারিত হারে লভ্যাংশ পান। এই লভ্যাংশ কোনো উপঢৌকন নয়, বরং মূলত সুদ। ইসলামি শরীয়ত সুদ গ্রহণ ও প্রদানে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
তাছাড়া সঞ্চয়পত্র কোনো বাণিজ্য-চুক্তিপত্র নয়। কারণ, এতে ক্রেতা ‘লাভ-লোকসান’ বহন করে না। বরং ক্রেতা নির্দিষ্ট অর্থে সঞ্চয়পত্র কিনে মূলত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়, বিনিময়ে তাকে নির্দিষ্ট হারে মুনাফা দেওয়া হয়। সুতরাং এটা এক প্রকারের সুদভিত্তিক চুক্তিপত্র। এর থেকে প্রাপ্ত মুনাফা সুদের-ই অন্তর্ভুক্ত। আর সুদ অকাট্য হারাম।