Logo
Logo
×

ইসলাম

দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর হয় যে আমলে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৬ পিএম

দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর হয় যে আমলে

মানুষের জীবনে দারিদ্র্য ও গুনাহ—দুই বড় সংকটের নাম। দারিদ্র্য মানুষকে দুর্বল করে, আর গুনাহ তাকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ইসলাম এমন কিছু আমল শিখিয়েছে যা মানুষের দুশ্চিন্তা দূর করে, রিজিক বাড়ায় এবং গুনাহ থেকে পরিশুদ্ধ করে। এসব আমল শুধু আধ্যাত্মিক উন্নতি আনে না, বরং মানুষের জীবনে বরকত ও সমৃদ্ধি এনে দেয়। বিশেষত ওমরাহ এমন ইবাদত যা মানুষের আত্মাকে ধুয়ে-মুছে পবিত্র করে এবং দারিদ্র্য দূর করার গুরুত্বপূর্ণ উপায় হিসেবে কুরআন-সুন্নাহতে প্রশংসিত হয়েছে।

হাদিস: ওমরাহ দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

عَلَيْكُمْ بِالْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلَّا الْجَنَّةُ.

‘ধারাবাহিকভাবে হজ ও ওমরা করে যেতে থাকো। কারণ এ দুটি দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে যেমন হাঁপর (ভাঁড়ার আগুন) লোহা, সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে। আর মাবরুর হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।’ (নাসাঈ ২৬৩১, তিরমিজি ৮১০)

বছরে পাঁচ দিন ছাড়া সারা বছর ওমরাহ পালন করা যায়। ওই পাঁচ দিন হলো হিজরি ক্যালেন্ডারের জিলহজ মাসের ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখ। এ দিনগুলোতে ওমরাহ করা মাকরুহ তাহরিমি। এ ছাড়া সারা বছরই ওমরাহ করা জায়েজ ও সওয়াবের কাজ। বিশেষত রমজানে ওমরাহ করার বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে–

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন—

فَإِذَا كَانَ رَمَضَانُ اعْتَمِرِي فِيهِ فَإِنَّ عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ حَجَّةٌ

‘রমজানের ওমরাহ একটি হজের সমতুল্য অথবা আমার সঙ্গে হজ করার সমতুল্য।’ (বুখারি ১৭৮২)

এ ছাড়া যার মক্কায় পৌঁছার সামর্থ্য আছে, তার জন্য জীবনে একবার ওমরাহ করা সুন্নতে মুআক্কাদা এবং সামর্থ্য অনুযায়ী অধিক ওমরাহ করা মুস্তাহাব ও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। হাদিসে এসেছে—

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, এক ওমরাহর পর অন্য ওমরাহ উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহের জন্য কাফফারাস্বরূপ। আর কবুল হজের প্রতিদান হলো জান্নাত।’ (বুখারি ১৭৭৩)

ওমরাহ কেন দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে?

১. হৃদয়কে গুনাহ থেকে শুদ্ধ করে

ওমরাহ মানুষকে তওবার দিকে ফিরিয়ে আনে। তাওবা গুনাহ ধুয়ে দেয় এবং নতুনভাবে জীবন শুরু করার শক্তি দেয়।

২. আল্লাহর ওপর ভরসা বৃদ্ধি করে

যখন একজন মুমিন আল্লাহর পথে (ওমরাহ পালনে) সম্পদ ব্যয় করে, আল্লাহ তার রিজিকে বরকত দেন।

৩. আল্লাহর ঘরে আগমন দারিদ্র্য দূর করার দ্বার

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে— ওমরা দারিদ্র্যকে এমনভাবে দূর করে, যেমন আগুনের হাঁপরে লোহা ও সোনার ময়লা দূর হয়ে যায়। অর্থাৎ আর্থিক সংকট ও গুনাহ উভয়ই ঝরে পড়ে।

৪. মাবরুর হজের পুরস্কার—জান্নাত

হজের মতো মহিমান্বিত ইবাদত মানুষের জীবনকে আমূল পরিবর্তন করে। আল্লাহ স্বয়ং তাঁর বান্দাকে সমস্ত গুনাহ থেকে মুক্ত করে দেন।

হজ ও ওমরাহ শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি দারিদ্র্য, গুনাহ এবং জীবনের নানা দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার মহৌষধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই এই ইবাদতের শক্তি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্টভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে নিয়মিত নেক আমল ও ইবাদতে অবিচল থাকবে— আল্লাহ তাআলা তার রিজিক প্রশস্ত করবেন, গুনাহকে ক্ষমা করবেন এবং জীবনে জান্নাতের পথ সহজ করে দেবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হজ ও ওমরা আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং এ ইবাদতের বরকতে জীবনের সব দুশ্চিন্তাসহ দারিদ্রতা ও গুনাহ দূর করে দিন— আমিন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার