Logo
Logo
×

ইসলাম

নবীজিকে (সা.) যে গুণে রঙিন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২১ পিএম

নবীজিকে (সা.) যে গুণে রঙিন হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ

মানুষের চরিত্রের সৌন্দর্য অনেক রঙে রঙিন—কারও বিনয়ী আচরণ, কারও কোমল হৃদয়, কারও দয়ার স্পর্শ। কিন্তু এসবের চূড়ায় যে গুণটি সবচেয়ে উজ্জ্বল, সবচেয়ে মূল্যবান এবং সর্বাধিক সম্মানজনক—তা হলো ক্ষমাশীলতা। ক্ষমাশীল ব্যক্তি পৃথিবীতে সৌন্দর্য ছড়িয়ে দেয়, মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেয় এবং আল্লাহর বিশেষ রহমতের ছায়া লাভ করে। এই কারণেই আল্লাহ তাআলা তার সবচেয়ে প্রিয় বান্দা, আমাদের নবীজিকে (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন—

خُذِ الۡعَفۡوَ وَ اۡمُرۡ بِالۡعُرۡفِ وَ اَعۡرِضۡ عَنِ الۡجٰهِلِیۡنَ

(হে নবি!) আপনি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করুন। সৎ কাজের নির্দেশ দিন এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা আরাফ: আয়াত ১১৯)

ক্ষমা শুধু এক মানবিক গুণ নয়; বরং আল্লাহ তাআলার নিজস্ব মহানাত্মক গুণ, যা তিনি পছন্দ করেন এবং তাঁর নিকটবর্তী বান্দাদের মাঝে দেখতে চান। কারণ এই তিন গুণ মানুষকে আল্লাহর নিকট সম্মানিত করে, সমাজে মর্যাদা বাড়ায় এবং অন্তরকে প্রশান্তির স্বাদ দেয়। এ কারণেই কুরআন-হাদিসে মানুষকে বার বার তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা নির্দেশ ও উপদেশ দিয়েছেন। এ একটি গুণেই মানুষ ইজ্জত ও সম্মানের অধিকারী হন।

নবীজিও (সা.) আল্লাহর এ বিশেষ গুণে নিজেকে রঙিন করেছেন, তার উম্মতকে রঙিন হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। যদি কেউ বিনয় ও নম্রতা অবলম্বন করে এবং কেউ অন্যায় করলে তাকে ক্ষমা করে তবে মহান আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির মর্যাদা ও ইজ্জত বাড়িয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ وَمَا زَادَ اللَّهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلاَّ عِزًّا وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلَّهِ إِلاَّ رَفَعَهُ اللَّهُ

‘সাদাকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে তিনি তার মর্যাদা উঁচুতে তুলে দেন।’ (মুসলিম ৬৩৫৬ ইফা)

ক্ষমা এমন একটি মহান গুণ যা মানুষের সম্মান বাড়িয়ে দেয়। আল্লাহর কাছে তারা সৎকর্মশীল বান্দা হিসেবে পরিচিত। আল্লাহ নিজেই ক্ষমাশীল। তিনিও ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। ক্ষমা করার মতো সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের কথা কুরআনে তুলে ধরে মহান আল্লাহ বলেন-

الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الۡکٰظِمِیۡنَ الۡغَیۡظَ وَ الۡعَافِیۡنَ عَنِ النَّاسِ ؕ وَ اللّٰهُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৪)

উচ্চ মর্যাদার একটি আমল— ক্ষমা

ক্ষমা এমন একটি গুণ, যা শুধু মানুষের ভুলকে ঢেকে দেয় না; বরং ক্ষমাকারী ব্যক্তির মর্যাদাকে আকাশের মতো উচ্চ করে তোলে। ক্ষমা মানুষকে ছোট করে না—উল্টো সম্মানকে বাড়িয়ে দেয়। কারণ এটি আল্লাহর প্রিয় গুণ এবং তার কাছাকাছি বান্দাদের অন্যতম পরিচয়।

ক্ষমার এত উচ্চ মর্যাদা কেন?

> এটি হৃদয়কে বিশুদ্ধ করে

> সম্পর্ককে মজবুত করে

> শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মানুষকে রক্ষা করে

> অহংকার ভেঙে বিনয় সৃষ্টি করে

> আল্লাহর রহমত ও বরকতকে আমন্ত্রণ জানায়

ভুল-ভ্রান্তি আর ভালোমন্দ নিয়েই মানুষের জীবন। এ ভুলের কারণেই মানুষের মাঝে তৈরি হয় ক্ষোভ, রাগ ও বিদ্বেষ। যা এক সময় মারাত্মক অপরাধে পরিণত হয়। যদি কেউ মানুষের এ পারস্পরিব ভুল-ভ্রান্তিকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ে মিলেমিশে চলে; ভুলকারীকে ক্ষমা করে দেয় তবে ক্ষমাকারী ব্যক্তির ইজ্জত সম্মান বেড়ে যায়। ক্ষমাশীলতাই মানুষের ভেতরের আঁধার ঘুচিয়ে দেয়। এ জন্য কুরআনের একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ক্ষমার কথা তুলে ধরেছেন—

اِنۡ تُبۡدُوۡا خَیۡرًا اَوۡ تُخۡفُوۡهُ اَوۡ تَعۡفُوۡا عَنۡ سُوۡٓءٍ فَاِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَفُوًّا قَدِیۡرًا

‘যদি তোমরা ভালো কিছু প্রকাশ করো কিংবা গোপন করো অথবা মন্দ ক্ষমা করে দাও, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, ক্ষমতাবান।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৪৯)

وَ جَزٰٓؤُا سَیِّئَۃٍ سَیِّئَۃٌ مِّثۡلُهَا ۚ فَمَنۡ عَفَا وَ اَصۡلَحَ فَاَجۡرُهٗ عَلَی اللّٰهِ ؕ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیۡنَ

‘আর মন্দের প্রতিফল মন্দ। এরপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপস নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা শুরা : আয়াত ৪০)

মানুষের এ ক্ষমায় বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ পায়। ক্ষমায় ব্যক্তি পরিবার সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্ষমাকারী আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হন। ক্ষমার এ গুণ অর্জনে মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনার বিকল্প নেই। যিনি মহান ক্ষমাকারী। এ কারণেই রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-

‘অপরাধ মার্জনা (ক্ষমা) করার কারণে, আল্লাহ (মার্জনাকারীর) সম্মান ও ইজ্জত বাড়িয়ে দেন।’ (মুসলিম)

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার