সত্যবাদিতা মুমিনের গুন, মিথ্যা মুনাফিকের স্বভাব। মিথ্যা মানুষকে লাঞ্চিত ও অপমানিত করে। একটি মিথ্যার কারণে জীবনের সমস্ত অর্জন ম্লান হয়ে যেতে পারে।
মিথ্যা একটি জঘন্য অপরাধ, মহাপাপ এবং কবিরা গুনাহ। সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পেছনে কোন না কোন মিথ্যার ভূমিকা থাকে। অন্যায় কাজে সর্বদা মিথ্যার আশ্রয় পাওয়া যায়। এক মিথ্যা গোপন করতে হাজারো মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়।
সভ্য জাতির বৈশিষ্ট্য কখনো মিথ্যা হতে পারে না। মিথ্যা কেবল মুনাফিকদের জন্যই শোভা পায়। মুমিন ও মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্যই হলো— সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য। মুমিন সত্য কথা বলে, আর মুনাফিক মিথ্যাকে জীবনের অংশ বানিয়ে নেয়।
মুমিন আল্লাহর প্রিয় বান্দা। সর্বদা আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করে। মিথ্যা থেকে দূরে থাকে। মিথ্যাকে ঘৃণা করে। মিথ্যা কর্মকাণ্ড অপছন্দ করে। সদা সত্য কথা বলে।
হে মুমিনগণ! আল্লহকে ভয় কর এবং সত্য সঠিক কথা বল। (আল-আহযাব-৭০)
মিথ্যা একটি জঘন্য অপরাধ। তাই মিথ্যাবাদী ব্যক্তি আল্লাহর রহমত ও দয়া থেকে বঞ্চিত থাকে। মিথ্যুক সীমালঙ্ঘনকারী, আর আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারী ও মিথ্যুককে হেদায়াত দান করেন না।
আল্লাহ কোন সীমালঙ্ঘনকারী, মিথ্যুককে হেদায়াত দান করেন না। (আল-মুমিন-২৮)
সত্যবাদিতা মুমিনের পাথেয়, নেক আমল তার সম্পদ, আর জান্নাত তার গন্তব্য। অন্যদিকে, অসত্য হলো পাপাচার, আত্মিক কলুষতা এবং জাহান্নামের কারণ।
মিথ্যা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত ঘৃণিত
এবং মিথ্যা কথা থেকে বেঁচে থাক, (আল-হাজ্জ্ব-৩০)
মুমিন মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না
এবং (রহমানের বান্দা তারা) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়না। (আল-ফুরকান-৭২)
আজকের সমাজে এক ভয়াবহ প্রবণতা দেখা দিয়েছে যে, কোনো খবর যাচাই না করেই প্রচার করে দেওয়া। এটি মিথ্যার এক নতুন রূপ, যা বিভ্রান্তি ছড়ায় ও সম্পর্ক নষ্ট করে।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম(সা.) বলেছেন, কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে কোন কথা শোনামাত্রই (যাচাই না করে) বলে বেড়ায়। (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৯২)
রসিকতার ছলেও মিথ্যা বলা ইসলাম অনুমোদন করে না। যারা হাস্যরসের অজুহাতে অসত্য বলে, তারা নিজের অজান্তেই গুরুতর অপরাধে লিপ্ত হয়।
মিথ্যা মুনাফিকের স্বভাব
আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হচ্ছে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোন একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়।
১. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে;
২. কথা বললে মিথ্যা বলে;
৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে; এবং
৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীলভাবে গালাগালি (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৪)
অতএব মিথ্যা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাক। (আত-তাওবাহ্- ১১৯)
সত্যবাদিতার পুরস্কার জান্নাত
আল্লাহ বলেন, সেই দিন, যে দিন সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যতা উপকৃত করবে। তাদের জন্য রয়েছে এমন সব উদ্যান, যার তলদেশে নহর প্রবহমান। তাতে তারা সর্বদা থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটাই মহা সাফল্য।(আল-মায়িদাহ-১১৯)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে মিথ্যা কথাবার্তা ও কাজকর্ম পরিহার করার তাওফিক দিন। আমিন।