Logo
Logo
×

ইসলাম

যেভাবে কথা বলার নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:৩১ পিএম

যেভাবে কথা বলার নির্দেশনা দিয়েছে ইসলাম

মানুষের জীবনে ভাষা একটি শক্তিশালী উপহার। ভাষা শুধু তথ্য বিনিময় নয়, বরং এটি অন্যের মন জয় করার, সম্পর্ক গড়ে তোলার এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম। কিন্তু অশালীন ও রুঢ় কথায় মনোভাব ও সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ইসলামে কথা বলার বিশেষ নিয়মাবলি এবং সঠিক আদব রয়েছে, যা প্রতিটি মুসলিমকে অনুসরণ করতে হবে।

১. সত্য কথা বলা: সৎ কথার শক্তি

সত্য কথা বলা ইসলামে নৈতিকতার একটি মৌলিক ভিত্তি। কথা ছোট হোক, তাতেও সতর্ক থাকুন; সত্য বলা ছোট কাজ হলেও এটি মানুষের মন ও সম্পর্কের জন্য বড় প্রভাব ফেলে। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন—

وَقُولُوا لِلنَّاسِ حُسْنًا

‘আর মানুষের সঙ্গে ভালো কথা বলুন।’ (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ৮৩)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

إِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ (الصِّدْقُ بِرٌّ) وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَصْدُقُ (لَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ) حَتَّى يُكْتَبَ (عِنْدَ اللهِ) صِدِّيقًا

‘সত্য পুণ্য। সত্য পুণ্যের দিকে পরিচালিত করে এবং পুণ্য জান্নাতের দিকে পরিচালিত করে। যে মানুষটি সদা সর্বদা সত্য বলতে সচেষ্ট থাকেন তিনি একপর্যায়ে আল্লাহর কাছে ‘সিদ্দীক’ বা মহা-সত্যবাদী বলে লিপিবদ্ধ হন।’ (বুখারি ২২৬১, মুসলিম ২০১২-২০১৩)

২. মিষ্টি ও নম্র ভাষা ব্যবহার: হৃদয় জয়ের কৌশল

কঠোর বা কড়া ভাষা মানুষের মন দূরে ঠেলে দেয়। ইসলামে কোমল ও নম্র ভাষা ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কথা বলার আগে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন— এই কথাটি কি মানুষকে উপকার করবে? যদি হ্যাঁ হয়, তবে বলুন। হাদিসে পাকে এসেছে—

أَحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللهِ تَعَالَى أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ

‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয়তম লোক হল সেই ব্যক্তি যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি উপকারী।’ (ত্বাবারানি ১৩৪৬৮, তারগিব ২০৯০, সিলসিলাহ সহীহাহ ৯০৬, জামে’ ১৭৬)

৩. মিথ্যা ও অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকা

অযথা বা মিথ্যা কথা সম্পর্ক ও সমাজে সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই কথার আগে ভাবুন, ‘আমার এই কথা কি সত্য এবং প্রয়োজনীয়? কুরআনে আল্লাহ বলেন—

وَاجْتَنِبُوا قَوْلَ الزُّورِ

‘মিথ্যা কথার থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা হজ: আয়াত ৩০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلَا يُؤْذِ جَارَهُ

‘যে আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।’ (বুখারি ৫৫৯৩)

৪. সময়মতো কথা বলা ও চুপ থাকা

অত্যধিক কথা বা অযথা মন্তব্য অপ্রয়োজনীয় এবং কখনও কখনও ক্ষতিকর। তাই কথার আগে ‘চুপ’ থাকা একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ। কিছু সময়ে চুপ থাকা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে সাহায্য করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ

‘যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস করে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ করে থাকে।’ (বুখারি ৫৫৯৩)

৫. ভালো কথা: ইসলামের সৌন্দর্য

মিষ্টি ভাষা ও সদয় আচরণ শুধু সম্পর্ক নয়, হৃদয়ও জয় করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলো অনুসরণ করলে সমাজে শান্তি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। তাই প্রতিদিন অন্তত একবার কারও সঙ্গে সদয় ও উৎসাহজনক কথা বলুন। এটি ছোট হলেও বড় প্রভাব ফেলে।

কথা বলার উত্তম আদব শুধু সামাজিক শিষ্টাচার নয়, এটি একটি ইবাদতও বটে। সত্য বলা, মিষ্টি ও নম্র ভাষা ব্যবহার করা, মিথ্যা ও অপ্রয়োজনীয় কথা থেকে বিরত থাকা, সময়মতো কথা বলা বা চুপ থাকা— এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আলোকিত করে, মানুষের মন জয় করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের এই আদবগুলো অনুসরণ করতে উৎসাহিত করেছেন। তাই প্রতিটি মুসলিমের জন্য এটি অপরিহার্য যে সে কথায় সতর্ক, হৃদয়বান ও ন্যায়পরায়ণ হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার