শীত—আল্লাহর সৃষ্টি করা ঋতুগুলোর একটি। কখনো তা হয় রহমত, আবার কখনো হয়ে ওঠে কঠিন পরীক্ষা। তীব্র শীতের কামড় যখন শরীর ভেদ করে, জীবনযাত্রা যখন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে, তখন মুমিনের প্রথম অবলম্বন হয় তার রবের দিকে ফিরে যাওয়া। কারণ আসমান-জমিনের ঋতু, বৃষ্টি, বাতাস ও তাপমাত্রা—সবই আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। শীতের কাঁপুনি থেকে শুরু করে মহামারী ও অসুখ—কোনোটাই তার ইচ্ছা ছাড়া ঘটে না। আর তাই বিপদ এলে, কষ্ট এলে, তীব্র ঠান্ডার দিনগুলোতে আমরা আল্লাহর দরবারেই আশ্রয় চাই। দোয়া মুমিনের ঢাল—যা তাকে দুর্যোগ, রোগব্যাধি, বিপদ ও কষ্ট থেকে রক্ষা করে।
শীতের কষ্ট দূর করতে দোয়া
শীত আসলে রোগ, কষ্ট সব কিছু থেকেই আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা সুন্নাহ। নবীজি (সা.) গরম ও ঠান্ডা দুটো থেকে রক্ষা চেয়ে এ দোয়া করতেন-
اللَّهُمَّ أَذْهِبْ عَنَّا حَرَّهَا وَبَرْدَهَا
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আজহিব আ’ন্না হার্রাহা ওয়া বারদাহা।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের থেকে এর তাপ আর শীত দূর করো।’ (মুসনাদে আহমদ)
আসুন তীব্র শীতের মহামারী থেকে মুক্তি পেতে আরও কয়েকটি দোয়া শিখে নিই-
১. اللّهُمَّ اجْعَلْ هَذَا الشِّتَاءَ بَرْدًا وَسَلاَمًا عَلَيْنَا
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাঝআল হাজাশ শিতাআ বারদাও ওয়া সালামান আলাইনা’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! এই শীতকে আমাদের জন্য শান্তি ও স্বস্তি দিন।’
যেহেতু শীতকালীন দুর্যোগের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সাধারণভাবে আপনি সবসময় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে পারেন।
২. اللّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنْ أَهْلِ التَّقَى وَالْعَمَلِ الصَّالِحِ، اللّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنْ عِبَادِكَ المُقَرَّبِينَ، وَاحْفَظْنَا مِنْ كُلِّ مَكْرُوهٍ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাঝআলনা মিন আহলিত তাক্বা ওয়াল আমালিস সালিহি; আল্লাহুম্মাঝআলনা মিন ইবাদিকাল মাক্বাররাবিনা; ওয়াহফাজনা মিন কুল্লি মাকরুহিন।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে তাওয়ার ও সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত করুন, হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার নিকটবর্তী বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন, এবং আমাদেরকে প্রতিটি খারাপ পরিস্থিতি ও বিপদ থেকে রক্ষা করুন।’
৩. اللّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الزَّلَازِلِ وَالْمِحَنِ، مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ، وَمِنَ الجُوعِ وَالفَقْرِ، وَمِنَ فِتْنَةِ الدَّجَّالِ، وَمِنَ فِتْنَةِ القَبْرِ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনায যালাযিলি ওয়ালমিহানি; মা জাহারা মিনহা ওয়ামা বাত্বানা; ওয়া মিনাল ঝুয়ি’ ওয়াল ফাক্বরি; ওয়া মিন ফিতনাতিদ দাজ্জালি; ওয়া মিন ফিতনাতিল ক্ববরি।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি- ভূমিধ্বস, বিপদ, প্রকাশিত বা গোপন দুর্যোগ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, মিথ্যা মসীহের পরীক্ষার (দাজ্জালের) এবং কবরের পরীক্ষা থেকে।’
বিশেষ করে শীত ও গ্রীষ্ম যেন স্বাভাবিক থাকে, অস্বাভাবিক বিপদ, দুর্ভোগ, প্রাকৃতিক সমস্যা বা কষ্ট যেন না আসে, এ মর্মে আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করা যেতে পারে—
৪. اللَّهُمَّ اجْعَلْ صَيْفَنَا صَيْفًا، وَشِتَاءَنَا شِتَاءً
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাঝআ’ল সাইফানা সাইফান, ওয়া শিতাআনা শিতাআন।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাদের গ্রীষ্মকে (যেমন হওয়া উচিত) গ্রীষ্ম করুন এবং আমাদের শীতকে (যেমন হওয়া উচিত) শীত করুন।’
শীতের কঠোরতা আমাদেরকে দুর্বল করে দিতে পারে, কিন্তু আল্লাহর রহমত ও তাঁর কাছে করা দোয়া আমাদের হৃদয়কে দৃঢ় করে তোলে। আমরা যতই শক্তিশালী হই না কেন, প্রকৃতির সামনে মানুষ ভীষণ অসহায়। তাই শীতের এই কঠিন সময়ে আমরা যেন আল্লাহর দিকে ফিরে যাই, তাঁর কাছে নিরাপত্তা, আরাম, সুস্থতা ও সুরক্ষা প্রার্থনা করি। দোয়া শুধু ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে না—দোয়া ঈমানকে উষ্ণ করে, হৃদয়কে শান্ত করে, এবং মানুষকে তার রবের কাছে আরো নিকটবর্তী করে দেয়।
আল্লাহ আমাদের সকলকে শীতের কষ্ট, রোগ, বিপদ ও পরীক্ষাগুলো থেকে হেফাজত করুন। আমিন।