জান্নাত, এক চিরন্তন সুখের নিবাস, যেখানে নেই কোনো দুঃখের ছায়া, নেই বিচ্ছেদের বেদনা, নেই কোনো অভাব। দুনিয়ার সম্পর্ক, সুখ-দুঃখ, কষ্ট-পরীক্ষা,সবকিছুই সেখানে সম্পূর্ণ নতুন, পরিপূর্ণ এবং অনবদ্য সৌন্দর্যে রূপান্তরিত। মানুষের হৃদয়ে তাই একটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই মাথা আসে ,জান্নাতে কি একজন স্বামীর সঙ্গে তার দুনিয়ার স্ত্রীও থাকবে?
এ প্রশ্নের জবাব অত্যন্ত স্পষ্ট, প্রশান্তিদায়ক। জান্নাতে পরিবার বিচ্ছিন্ন হবে না; বরং সত্যিকার মুমিন স্বামী-স্ত্রী তাদের ইহজীবনের ঈমানি সম্পর্কের পূর্ণতা লাভ করবে চিরস্থায়ী শান্তি ও সুখের মাঝে।
জান্নাতে স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকবে
আল্লাহ তাআলা বলেন, جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَنْ صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে; তাদের সন্তান, পিতা-মাতা এবং তাদের স্ত্রীগণও (যারা সৎকর্মশীল ছিল) তাদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুরা রদ:২৩)
এখানে আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলেছেন, মুমিন স্ত্রী মুমিন স্বামীর সাথে জান্নাতে একত্রিত হবে। অতএব, দুনিয়ার স্ত্রী যদি ঈমানদার হয় এবং জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য হয়, তবে তিনি স্বামীর সঙ্গেই জান্নাতে থাকবেন।
জান্নাতে কোনো দ্বন্দ্ব, ঈর্ষা বা কষ্ট থাকবে না
অনেকে মনে করেন, স্বামীকে যদি হুর দেওয়া হয়, তবে স্ত্রী কষ্ট পাবে না? কিন্তু জান্নাতে দুঃখ-যন্ত্রণা,কোনো কিছুই থাকবে না। আল্লাহ বলেন,
وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِمْ مِنْ غِلٍّ আমি তাদের বক্ষ থেকে সকল বিদ্বেষ, হিংসা ও বিরূপতা দূর করে দেব। (সুরা আরাফ:৪৩) তাই জান্নাতে কেউ কোনো কষ্ট, হিংসা বা দুঃখ অনুভব করবে না, বরং প্রত্যেকে থাকবে পরিপূর্ণ শান্তি ও সুখে।
স্বামীর মর্যাদা বেশি হলে স্ত্রীকে তার কাছে উন্নীত করা হবে
দুনিয়াতে স্বামী-স্ত্রীর আমল সমান নাও হতে পারে। কিন্তু জান্নাতে পরিবারকে একত্রিত রাখার বিশেষ ব্যবস্থা আছে। রসুল সল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলেন,
يُرْفَعُ دَرَجَةُ الوَلَدِ إِلَى دَرَجَةِ أَبِيهِ فِي الجَنَّةِ জান্নাতে সন্তানের মর্যাদা কম হলেও আল্লাহ তাকে তার পিতার মর্যাদায় উন্নীত করে দেবেন। (ইবনু মাজাহ:৪৩৪২) উলামায়ে কেরাম বলেন, এ বিধান স্ত্রী-স্বামীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য অর্থাৎ স্ত্রী স্বামীর মর্যাদায় উন্নীত হবে যেন দুজন একই স্তরে থাকতে পারেন।
স্ত্রী যদি দুনিয়াতে একাধিক স্বামীর অধিকারী হতেন
যে নারীর একাধিক বিয়ে হয়েছে (প্রথম স্বামী মারা গেছে বা তালাক হয়েছে) তিনি জান্নাতে সর্বশেষ স্বামীর সাথে থাকবেন। المرأة لآخر أزواجها জান্নাতে নারী তার সর্বশেষ স্বামীর সাথে থাকবে। (সহি জামে: ৬৬৯১) তাই দুনিয়ায় একাধিক বিয়ে থাকলেও নারীর জান্নাতি সঙ্গী হবেন শেষ স্বামী, যদি উভয়েই মুমিন হন।
জান্নাতে স্ত্রী দুনিয়ার তুলনায় বহু গুণ সুন্দর হবেন
হুরদের প্রসঙ্গে মানুষের মনে প্রশ্ন আসে, স্ত্রী কি হুরের চেয়ে কম হবে? উত্তর না। বরং উলামায়ে কেরাম বলেন, মুমিনা স্ত্রী জান্নাতে হুরের চেয়ে বহু গুণ সুন্দর ও সম্মানিত হবেন। কারণ হুর সৃষ্টি করা হয়েছে জান্নতের জন্য, কিন্তু মুমিনা নারীরা পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের মর্যাদা আরও উচ্চ।
রসুল সল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বলেন,
يا رسولَ اللَّهِ نساءُ الدُّنيا أفضلُ أمِ الحورُ العينُ قالَ بل نساءُ الدُّنيا أفضلُ منَ الحورِ العينِ كفضلِ الظِّهارةِ على البطانَةِ. قلتُ يا رسولَ اللَّهِ وبمَ ذلك قالَ بصلاتِهنَّ হে আল্লাহর রসুল! জান্নাতে দুনিয়ার নারীরা উত্তম, নাকি হুরুলঈন উত্তম? তিনি সল্লাল্লাহু আলাই ওয়া সাল্লাম বললেন, বরং দুনিয়ার নারীরাই হুরুলঈনের চেয়ে উত্তম, যেমন বাহ্যিক পোশাক (ওপরের কাপড়) ভেতরের পোশাক-এর চেয়ে উত্তম।
জান্নাতে পরিবার কখনো আলাদা হবে না
অবশেষে, আল্লাহর প্রতিশ্রুতি, ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীগণ আনন্দের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করো। এই আয়াতই প্রমাণ করে, স্বামী ও স্ত্রী জান্নাতে একসাথে, আনন্দে, শান্তিতে থাকবে। (সুরা জুখরুফ: ৭০)