নামাজের জামাতে কিছু রাকাত ছুটে গেলে কী করবেন?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫১ পিএম
জামাতে নামাজ আদায় করতে গিয়ে যে ব্যক্তির এক বা একাধিক রাকাত ছুটে যায়, তাকে ‘মাসবুক’ বলা হয়। মাসবুক ব্যক্তি ইমামকে যে অবস্থায় পাবে, সে অবস্থাতেই ইমামের সঙ্গে নামাজে শরিক হয়ে যাবে এবং যথাযথভাবে নামাজটি আদায় করবে। যদি সে প্রথম রাকাতের রুকুতে ইমামের সঙ্গে পৌঁছাতে না পারে, তবে সে বাকি নামাজ ইমামের সঙ্গে আদায় করবে এবং শেষ বৈঠকে শুধু তাশাহহুদ পড়ে চুপচাপ বসে থাকবে। এরপর, ইমামের উভয় দিকে সালাম ফেরানোর পর সে তার ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো আদায় করে নেবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/৩১৪)
মাসবুকের নামাজ আদায়ের পদ্ধতি
• মাসবুকের ছুটে যাওয়া নামাজ আদায়ের পদ্ধতি হলো, কিরাত পড়ার ক্ষেত্রে তার ছুটে যাওয়া রাকাতকে প্রথম ও শুরু রাকাত ধরা হবে অর্থাৎ ফাতিহা পড়ার পর সুরা মেলাবে, আর বৈঠক ও তাশাহহুদ পড়ার ক্ষেত্রে ইমামের সঙ্গে পঠিতগুলোকে প্রথম ধরে বাকিগুলোকে পরবর্তী রাকাত গণ্য করে নামাজ আদায় করবে—(আল মাবসুত সারাখসি : ১/১৯০, আল বাহরুর রায়েক : ১/৩৭৯)
ওই নিয়মানুসারে কোনো ব্যক্তির এক রাকাত ছুটে গেলে সে ওই রাকাতে কিরাত সুরা মিলিয়ে পড়ে শেষ বৈঠক করে সালাম ফেরাবে।
• চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের জামাতে দুই রাকাত ছুটে গেলে যথারীতি উভয় রাকাতে কিরাত সুরা মিলিয়ে পড়বে এবং এর প্রথম রাকাতে না বসে শেষ রাকাতে বসে তাশাহহুদ, দরুদ ও দোয়া পড়ে সালাম ফেরাবে। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ১/১৬৫)
• তিন রাকাতবিশিষ্ট নামাজের জামাতে দুই রাকাত ছুটে গেলে ইমামের সালামের পর যথারীতি উভয় রাকাতেই কিরাত সুরা মিলিয়ে পড়বে এবং প্রথম রাকাতে বসে তাশাহহুদ পড়ে উঠে যাবে। কেননা এ রাকাত বৈঠকের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকাত হিসেবে ধর্তব্য হবে। অতঃপর শেষ রাকাতে বসে সালাম ফেরাবে। (রদ্দুল মুহতার : ১/৫৯৬)
• যদি চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের জামাতে তিন রাকাত ইমামের পেছনে না পায়, তাহলে সালাম ফেরানোর পর ছুটে যাওয়া রাকাতের মধ্যে প্রথম দুই রাকাতে ফাতিহার সঙ্গে সুরা মিলিয়ে পড়বে এবং শেষ রাকাতে সুরা না মিলিয়ে শুধু ফাতিহা পড়বে। আর প্রথম রাকাতে বসে তাশাহহুদ পড়ে উঠে যাবে। এরপর দ্বিতীয় রাকাতে না বসে শেষ রাকাত পড়ে বৈঠক করবে। (রদ্দুল মুহতার : ১/৫৯৬)
মোট কথা, ইমাম সাহেব উভয় দিকে সালাম ফিরানোর পর মাসবুক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বাকি নামাজ আদায় করবে। এক্ষেত্রে সে একাকী নামাজ আদায়কারীর হুকুমে চলে যাবে। অর্থাৎ কোনো কারণে নামাজে ভুল হলে সেজদায়ে সাহু আবশ্যক হবে; তাকে সে সেজদায়ে সাহু দিতে হবে। নামাজ ভঙ্গের কারণ হলে, নামাজ ভেঙে যাবে ইত্যাদি।
আর কেরাতের ক্ষেত্রে প্রথম দিককার রাকাতের হুকুম আরোপিত হবে। অর্থাৎ যদি এক রাকাত না পায়, তাহলে দাঁড়িয়ে সানা পড়বে, তারপর ফাতিহা ও সুরা মিলাবে এভাবে বাকি নামাজ পূর্ণ করবে। আর যদি দুই রাকাত না পায়, তাহলে প্রথম রাকাতে, সানা, ফাতিহা, সুরা মিলিয়ে নিয়মমাফিক পূর্ণ করবে, তারপর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা মিলাবে। আর যদি তিন রাকাত না পায়, তাহলে প্রথমে দুই রাকাত পূর্বের মত পড়বে। আর তৃতীয় রাকাতে শুধু ফাতিহা পড়বে কিন্তু সুরা মিলাবে না।
মোটকথা, রাকাত হিসেবে প্রথম রাকাত আদায়কারীর মত নামাজ আদায় করবে।
কিন্তু বৈঠক হিসেবে ধর্তব্য হবে শেষ। তথা এক রাকাত না পেলে, এক রাকাত পূর্ণ করেই শেষ বৈঠক আদায় করবে নিয়মমাফিক। আর দুই রাকাত না পেলে তা পূর্ণ করে শেষ বৈঠক আদায় করবে। এভাবে তিন রাকাত ও চার রাকাতের একই হুকুম।
দলীল
أما المسبوق له أحكام كثيرة: منها أنه إن أدرك الإمام في ركعة سرية أتى بالثناء بعد تكبيرة الإحرام، وإن أدركه في صلاة ركعة جهرية لا يأتي به على الصحيح مع الإمام، وإنما يأتي به عند قضاء ما فاته وحينئذ يتعوذ، ويبسمل للقراءة كالمنفرد. (كتاب الفقه على المذاهب الاربعة، مباحث الامامة والجماعة، إذا فات المقتدي بعض الركعات أو كلها-1/439
والدر المختار- (وَالْمَسْبُوقُ مَنْ سَبَقَهُ الْإِمَامُ بِهَا أَوْ بِبَعْضِهَا وَهُوَ مُنْفَرِدٌ) حَتَّى يُثْنِيَ وَيَتَعَوَّذَ وَيَقْرَأَ، وَإِنْ قَرَأَ مَعَ الْإِمَامِ لِعَدَمِ الِاعْتِدَادِ بِهَا لِكَرَاهَتِهَا مِفْتَاحُ السَّعَادَةِ (فِيمَا يَقْضِيهِ) أَيْ بَعْدَ مُتَابَعَتِهِ لِإِمَامِهِ، فَلَوْ قَبِلَهَا فَالْأَظْهَرُ الْفَسَادُ، وَيَقْضِي أَوَّلَ صَلَاتِهِ فِي حَقِّ قِرَاءَةٍ، وَآخِرَهَا فِي حَقِّ تَشَهُّدٍ؛ فَمُدْرِكُ رَكْعَةٍ (وَالْمَسْبُوقُ مَنْ سَبَقَهُ الْإِمَامُ بِهَا أَوْ بِبَعْضِهَا وَهُوَ مُنْفَرِدٌ) حَتَّى يُثْنِيَ وَيَتَعَوَّذَ وَيَقْرَأَ، وَإِنْ قَرَأَ مَعَ الْإِمَامِ لِعَدَمِ الِاعْتِدَادِ بِهَا لِكَرَاهَتِهَا مِفْتَاحُ السَّعَادَةِ (فِيمَا يَقْضِيهِ) أَيْ بَعْدَ مُتَابَعَتِهِ لِإِمَامِهِ، فَلَوْ قَبِلَهَا فَالْأَظْهَرُ الْفَسَادُ، وَيَقْضِي أَوَّلَ صَلَاتِهِ فِي حَقِّ قِرَاءَةٍ، وَآخِرَهَا فِي حَقِّ تَشَهُّدٍ؛ فَمُدْرِكُ رَكْعَةٍ (الدر المختار مع رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الامامة، مطلب فيما لو اتى بالركوع او السجود او بهما مع الامام او قبله او بعده-1/596-597، سعد كرتاشى
আবার ইমাম সাহেব নামাজের জামাতের শেষ বৈঠকে বসেছেন, এমন সময় একজন মুসল্লি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন। এখন এ ব্যক্তির নামাজ কী জামাতে গণ্য হবে?
ইমাম সাহেব যদি নামাজের জামাতের শেষ বৈঠকে বসে থাকেন এবং একজন মুসল্লি বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন, তবে ওই ব্যক্তির নামাজ জামাতে গণ্য হবে। কারণ, জামাতে শরিক হওয়া এবং ইমামের সঙ্গে শেষ বৈঠকে অংশ নেওয়া, নামাজের মূল লক্ষ্য পূর্ণ করার জন্য যথেষ্ট। তবে, জামাতে যোগদানকারী ব্যক্তি যখন শেষ বৈঠকে পৌঁছান, তখন তার জন্য সঠিক নিয়ম হলো, সে ইমামের সঙ্গে নামাজ শেষ করতে হবে এবং পরে তার ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো পূর্ণ করে নিতে হবে।
দলীল
> إِذَا أَتَى أَحَدُكُمُ الصَّلاةَ وَإِمَامُهُ فِي الرُّكُوعِ فَلْيَرْكَعْ فِيهِ مَعَهُ، وَإِذَا رَفَعَ فَلْيُصَلِّ لِمَا فَاتَهُ
‘যদি তোমাদের কেউ নামাজে আসে এবং ইমাম রুকুতে থাকে, তাহলে সে ইমামের সঙ্গে রুকু করতে থাকবে। আর যখন ইমাম রুকু থেকে উঠবে, তখন সে তার যেটুকু ছুটে গেছে, সেটুকু পূর্ণ করবে।’ (মুসলিম ১০৭৩)
এই হাদিসটি প্রমাণ করে যে, জামাতে ইমামের সাথে শরিক হতে হলে, ইমামের শেষ বৈঠকে অংশগ্রহণ করলেও, ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো পূর্ণ করতে হবে।
> إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ وَإِمَامُهُ جَالِسٌ فَاجْلِسْ حَتَّى يُسَلِّمَ
‘যদি তোমাদের কেউ আসে এবং ইমাম বসে থাকে (অর্থাৎ নামাজের শেষ বৈঠকে), তখন তাকে বসে থাকতে হবে যতক্ষণ না ইমাম সালাম ফেরান। তারপর সে তার ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো পূর্ণ করবে।’ (আবু দাউদ ৮৩৩)
এই হাদিসটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে, যেখানে ইমামের সঙ্গে শেষ বৈঠকে শরিক হওয়ার পর, মুসল্লির উচিত তার ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো পূর্ণ করে নেওয়া।
> ইমাম আল-খাত্তাবি (রহ.) তার ফিকহী ব্যাখ্যায় বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতে যোগ দেয় এবং ইমামের সঙ্গে নামাজের শেষ বৈঠকে বসে থাকে, তার নামাজ জামাতে গণ্য হবে। কিন্তু সে অবশ্যই তার ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো পরবর্তীতে আদায় করবে।’
এটা বলা যায় যে, জামাতে যোগদান করার পর সে মূল নামাজের অংশ হিসেবেই গণ্য হবে, তবে ছুটে যাওয়া রাকাতগুলো পরে আদায় করতে হবে।