Logo
Logo
×

ইসলাম

নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার সহজ ৬ উপায়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৭ পিএম

নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার সহজ ৬ উপায়

নামাজ শুধু হাত তোলা বা কিছু আয়াত পাঠ করার নাম নয় বরং এটি হলো দাসের অন্তর আল্লাহর সামনে নিঃস্বভাবে সিজদায় লুটিয়ে দেওয়া। হৃদয়কে আল্লাহর দরবারে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান। তাই নামাজে মনোযোগ ধরে রাখতে সহজ কিছু উপায় তুলে ধরছি-

১. নিয়তকে পরিশুদ্ধ করুন

নামাজ শুরুর আগে এক মুহূর্ত থেমে ভাবুন— আমি এখন কার সামনে দাঁড়াতে যাচ্ছি? তিনি হলেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। এ ভাবনা নিয়ে দাঁড়ালেই নামাজ হবে সফল। আল্লাহ তাআলা বলেন-

قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلَاتِهِمْ خَاشِعُونَ

‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ; যারা নিজেদের সালাতে বিনয়, নম্র।’ (সুরা আল-মু’মিনূন: আয়াত ১-২)

এই ‘খুশু’ বা মনোযোগ ও বিনয় নামাজের প্রাণ। নিয়তকে পরিষ্কার রাখলে নামাজে খুশু স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জন্ম নেয়।

২. নামাজের সুরাগুলো অর্থ বুঝে পড়া

সুরাগুলোর অর্থ অন্তরে অনুভব করলে তখন নামাজ আর মুখের শব্দ থাকবে না, তা হয়ে যাবে  আল্লাহর সঙ্গে আন্তরিক সংলাপ। যখন নামাজে পড়া হয়-

الحمد لله رب العالمين

তখন মনে মনে ভাবুন-

‘হে আল্লাহ! সব প্রশংসা তোমারই জন্য, তুমি আমার প্রতিটি প্রয়োজনের একমাত্র অভিভাবক।’

যখন নামাজে পড়া হয়-

إياك نعبد وإياك نستعين

‘শুধু তোমারই ইবাদত করি, আর তোমারই সাহায্য চাই।’

তখন নামাজের এ ভাষা মুখের কথা থাকে না, তা হয়ে যায় আল্লাহর সঙ্গে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক।

৩. ওজুর সময় মনকে প্রস্তুত কর

ওজু শুধু শারীরিক পবিত্রতা নয়, এটি মন ও আত্মাকে প্রস্তুত করার এক প্রশান্ত ধাপ। তাই ওজুর সময় ভাবুন, আমি এখন নিজেকে আল্লাহর সামনে হাজির করার জন্য পরিশুদ্ধ করছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

إِذَا تَوَضَّأَ الْعَبْدُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ، خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ الْمَاءِ

‘যখন বান্দা ওযু করে তার মুখ ধোয়, তখন তার চোখের মাধ্যমে করা প্রতিটি পাপ পানিসহ ধুয়ে যায়।’ (মুসলিম ২৪৪)

৪. দুনিয়ার চিন্তা অন্তর থেকে বাইরে রাখা

নামাজে দাঁড়ানোর আগে মনের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার বিকল্প নেই। মানুষের দ্বিতীয় জীবন ফোন সাইলেন্ট তো মনও সাইলেন্ট। তখন মনে মনে ভাবুন, ‘আমি এখন নামাজে দাঁড়িয়েছি, আল্লাহ তাআলা আপনার দিকে তাকিয়ে আছেন।’ এভাবে ভাবলে মন দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। নামাজি হয়ে যায় পাপমুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

إِنَّ الْعَبْدَ إِذَا قَامَ يُصَلِّي أُتِيَ بِذُنُوبِهِ فَوُضِعَتْ عَلَى رَأْسِهِ وَعَاتِقَيْهِ، فَكُلَّمَا رَكَعَ أَوْ سَجَدَ تَسَاقَطَتْ عَنْهُ

‘যখন বান্দা নামাজে দাঁড়ায়, তার পাপগুলো মাথা ও কাঁধে রাখা হয়। সে যতবার রুকু বা সিজদা করে, ততবার সেই পাপগুলো ঝরে পড়ে।’ (মুসনাদে আহমাদ ২২৯৭৩)

৫. নামাজে মনোযোগী হওয়া

মনোযোগ ছাড়া দীর্ঘ নামাজের চেয়ে মনোযোগসহ সংক্ষিপ্ত নামাজ আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তাই ধীরে ধীরে, অর্থসহ, প্রেম ও ভয় মিশিয়ে নামাজে কুরআন তেলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

رُبَّ قَائِمٍ حَظُّهُ مِنْ صَلَاتِهِ التَّعَبُ

‘অনেক নামাজি আছেন, যার নামাজ থেকে শুধু ক্লান্তি লাভ করে।’ (ইবনে মাজাহ ১৪২৪)

৬. সিজদায় আল্লাহর সান্নিধ্য অনুভব করা

সিজদায় মহান আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য অনুভব করা হচ্ছে নামাজের সর্বোচ্চ মুহূর্ত। তাই সিজদায় গিয়ে মনের গভীর থেকে বলুন- ‘হে আল্লাহ! এই পৃথিবীতে আমার একমাত্র নিরাপদ স্থান তোমার দরবার।’ এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ

‘বান্দা তার প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটে থাকে যখন সে সিজদায় থাকে।’ (মুসলিম ৪৮২)

পরিশেষে নামাজ হলো আত্মার প্রশান্তির উৎস। এটি শুধু কর্তব্য নয়, একটি প্রেমের আহ্বান— যেখানে আল্লাহ তার বান্দাকে বলেন-

فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ

‘তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব।’ (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ১৫২)

প্রতিটি নামাজে অন্তত এক রাকাতে এমন মনোযোগ আনতে চেষ্টা করেন; যেন মনে হয়, এটাই হয়তো আমার জীবনের শেষ নামাজ। এভাবেই ধীরে ধীরে নামাজে মনোযোগী হওয়া অভ্যাসে পরিণত হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার