মানুষ যখন কষ্টে পড়ে, তখন তার হৃদয় আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু আল্লাহর কাছে দোয়া কেবল বিপদের সময় নয় বরং প্রতিটি অবস্থায় করা উচিত। কারণ, যে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চায়— আল্লাহ তাকে বেশি ভালোবাসেন। আর যে চায় না, তার প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। এ ঘোষণা এভাবে দেন নবীজি (সা.)-
مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে কিছু চায় না, আল্লাহ তার ওপর ক্রুদ্ধ হন।’ (তিরমিজি ৩৩৭৩)
রাতের সময় দোয়ার বিশেষ মর্যাদা
রাতে, বিশেষ করে শেষ তৃতীয়াংশে, আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর আকাশে অবতীর্ণ হন এবং ডাক দেন—
يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا
‘আমাদের রব, মহান ও বরকতময়, প্রতি রাতে আসমানের নিকটবর্তী আকাশে অবতীর্ণ হন এবং বলেন, কে আছে যে আমার কাছে দোয়া করবে, আমি তার দোয়া কবুল করব?’ (বুখারি ১১৪৫, মুসলিম ৭৫৮)
অতএব, রাতের সময় হলো দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। এটি কুরআন ও হাদিসের আলোকে রাতের সেই অনন্য দোয়া— যা আল্লাহ ফেরত দেন না। তাহলো-
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদির। সুবহানাল্লাহি, ওয়াল হামদু লিল্লাহি, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার; ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ: ‘আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই। রাজত্ব তারই, প্রশংসাও তারই। তিনি সব কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান। মহাপবিত্র আল্লাহ, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ মহান। কোনো শক্তি ও ক্ষমতা নেই, শুধুমাত্র আল্লাহর কাছেই সব ক্ষমতা।’
এরপর বলা উচিত —
رَبِّ اغْفِرْ لِي
‘রাব্বিগফিরলি — ‘হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন।’ (ইবন মাজাহ ৩৮৬০, আল-জামি‘ ৬১৩৪)
বান্দা যখন মহান আল্লাহকে ডাকে, প্রার্থনা করে, দোয়া করে বা কোনো কিছু চায়, তখন আল্লাহ বলেন, আমি কাছেই আছি। আল্লাহ বলেন-
وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ
‘আর যখন আমার বান্দারা তোমার কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে, আমি তো কাছেই আছি। আমি দোয়া কবুল করি, যখন সে আমাকে ডাকে।’ (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ১৮৬)
আরও বলা হয়েছে—
ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
‘তোমরা তোমাদের রবকে ডাকো বিনীতভাবে ও গোপনে। নিশ্চয়ই তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আল-আ‘রাফ: আয়াত ৫৫)
এই দোয়া কেন এত মূল্যবান?
এই দোয়াটিতে রয়েছে তাওহিদ তথা একত্ববাদ, আল্লাহর প্রশংসা, তাকদিরের প্রতি সন্তুষ্টি এবং আত্মসমর্পণ— যা একত্রে বান্দাকে করে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয়। রাতে নিঃশব্দে, একান্ত মনে এই দোয়াটি করলে, আল্লাহ তা কখনোই ফেরত দেন না ইনশাআল্লাহ।
মনে রাখতে হবে
রাতের নীরবতা হলো হৃদয়ের ইবাদতের সময়। যে সময় মানুষ ঘুমিয়ে থাকে, আর একজন বান্দা উঠে তার রবের সামনে হাত তুলে দোয়া করে, তাইতো মহান আল্লাহ বলেন —
هَلْ مِنْ سَائِلٍ فَأُعْطِيَهُ؟
‘কে আছে যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দেব?’ (মুসলিম ৭৫৮)
তাই আজ থেকে প্রতি রাতেই এই দোয়াটি পড়ুন। নিজের ও প্রিয়জনদের জন্য দোয়া করুন। কারণ রাতের এই দোয়া আল্লাহ কখনোই ফিরিয়ে দেন না।