রাতের যে ৭ আমল আপনাকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যাবে
জাগো বাংলা প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২১ পিএম
নিশ্চয়ই রাত এমন এক সময়—যখন নিস্তব্ধতার আড়ালে দুনিয়ার কোলাহল থেমে যায়, আর মানুষের হৃদয় আল্লাহর দিকে ফিরে যায়। এ সময়েই মুমিন বান্দা তার রবের সামনে চোখের অশ্রু ঝরিয়ে আত্মসমর্পণ করে, নিজের ভুলের ক্ষমা চায়, আর শান্তির প্রশান্ত সাগরে ডুবে যায়। রাত হলো আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সর্বোত্তম মুহূর্ত। আর সেই বরকতময় সময়ে কিছু বিশেষ আমল আছে, যা বান্দাকে দুনিয়া ও আখিরাতের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করে, আল্লাহর রহমতের ছায়ায় রাখে। রাতে নিয়মিত করার ৭টি গুরুত্বপূর্ণ আমল তুলে ধরা হলো—
১. অজু করা
ঘুমানোর আগে অজু করা ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। এতে দুটি নেয়ামত অর্জিত হয়। ফেরেশতারা ওই ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আবার ওই ব্যক্তির রাতের দোয়া কবুল হয়। পৃথক দুটি হাদিসে বিষয় দুটি ওঠে এসেছে-
> ফেরেশতাদের ক্ষমা প্রার্থনা
হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘তোমরা তোমাদের শরীরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমাদেরকে পরিচ্ছন্ন করে দেবেন। আর যখন আল্লাহর কোনো বান্দা ওজু করে বিছানায় ঘুমাতে যায়, আল্লাহ ওই ব্যক্তির সঙ্গে (তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনায়) একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেন। ঘুমের মধ্যে ওই বান্দা যখনই নড়াচড়া করে কিংবা এপাশ-ওপাশ করে তখনই ওই ফেরেশতা তার জন্য এ বলে দোয়া করে- ‘اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِعَبْدِكَ (আল্লাহুম্মাগফির লি-আবদিকা)- ‘হে আল্লাহ! আপনার এ বান্দাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা সে পবিত্রতা অর্জন করে ঘুমিয়েছে।’ (তাবারানি, ইবনে হিব্বান)
> দোয়া কবুল হয়
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যখন ওজু করে পবিত্র হয়ে ঘুমায় আর ঘুমানোর পর যদি কোনো কারণে রাতে ঘুম ভেঙে যায় তবে সে যেন (একটু হলেও) আল্লাহর জিকির করে। যদি কেউ জিকির করার পর আল্লাহ কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করে তবে আল্লাহ তাআলা তাকে (চাহিদা অনুযায়ী) তা-ই দিয়ে দেন।’ (মুসনাদে আহমদ)
২. আয়াতুল কুরসি এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের তেলাওয়াত
ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন হেফাজতকারী থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত তার কাছে শয়তান আসতে পারবে না। হাদিসের পুরো বর্ণনাটি এমন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: وَكَّلَنِي رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ، فَأَتَانِي آتٍ، فَجَعَلَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ، فَأَخَذْتُهُ، فَقُلْتُ: لَأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ. قَالَ: إِنِّي مُحْتَاجٌ وَعَلَيَّ عِيَالٌ، وَلِي حَاجَةٌ شَدِيدَةٌ. قَالَ: فَخَلَّيْتُ عَنْهُ، فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «يَا أَبَا هُرَيْرَةَ، مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ الْبَارِحَةَ؟» قُلْتُ: شَكَا حَاجَةً وَعِيَالًا، فَرَحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ. قَالَ: «إِنَّهُ كَذَبَكَ، وَسَيَعُودُ». فَعَرَفْتُ أَنَّهُ سَيَعُودُ، لِقَوْلِ النَّبِيِّ ﷺ إِنَّهُ سَيَعُودُ، فَرَصَدْتُهُ، فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ، فَأَخَذْتُهُ... إِلَى أَنْ قَالَ: قَالَ: «إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ آيَةَ الْكُرْسِيِّ، لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ اللَّهِ حَافِظٌ، وَلَا يَقْرَبُكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ». فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوبٌ، تَعْلَمُ مَنْ تُخَاطِبُ مُنْذُ ثَلَاثِ لَيَالٍ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟» قَالَ: لَا.
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বলেন— রসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে রমজানের সদকা পাহারার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এক রাতে একজন চোর এসে খাবার নিতে লাগল। আমি তাকে ধরলাম এবং বললাম, ‘আমি তোমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে নিয়ে যাব।’ সে অনুনয় করল— ‘আমি অভাবী, পরিবার আছে, আমাকে ছেড়ে দিন।’ আমি দয়া করে ছেড়ে দিলাম। পরদিন নবী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন— ‘তোমার বন্দির কী হলো?’ আমি বললাম— ‘অভাবের কারণে ছেড়ে দিয়েছি।’ নবী (সা.) বললেন— ‘সে তোমাকে মিথ্যা বলেছে, কিন্তু সে আবার আসবে।’ তৃতীয় রাতে আবার এলো। তখন সে বলল-
‘তুমি যখন ঘুমাতে যাবে, আয়াতুল কুরসি পড়বে। আল্লাহ তোমার জন্য একজন পাহারাদার ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন, আর শয়তান সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে আসতে পারবে না।”
নবী (সা.) বললেন, ‘সে তোমাকে সত্য বলেছে, যদিও সে এক মিথ্যাবাদী। তুমি জানো সে কে?’ আবু হুরাইরা (রা.) বললেন— ‘না।’ নবী (সা.) বললেন— ‘সে হচ্ছে শয়তান।’ (বুখারি ২৩১১)
উচ্চারণ ও অর্থসহ আয়াতুল কুরসি
اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
উচ্চারণ: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’ খুযুহু সিনাতুও ওয়া লা নাওম। লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ্বি। মাং জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইংদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম, ওয়া লা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ ওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল আলিয়্যুল আজিম। (উচ্চারণটি কোনো কুরআন বিশেষজ্ঞের কাছে বিশুদ্ধভাবে পড়ে নেওয়া জরুরি)
অর্থ: (তিনিই) আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং ঘুমও নয়। সবই তার, আসমান ও জমিনের মধ্যে যা কিছু রয়েছে। কে আছো এমন- যে সুপারিশ করবে তার কাছে তার অনুমতি ছাড়া? (চোখের সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তার জ্ঞানের সীমা থেকে কোনো কিছুকেই তারা পরিবেষ্টিত করতে পারবে না, কিন্তু ‘হ্যাঁ’, তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ছাড়া। সমগ্র আসমান এবং জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে তার সিংহাসন। আর সেগুলোকে ধারণ (নিয়ন্ত্রণ) করা তার জন্য কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।’
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
রাতের বেলায় ভয় ও অপ্রীতিকর ঘটনা থেকে বাঁচতেও সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের আমল কার্যকরী। যা মানুষকে দুনিয়ার যাবতীয় অনষ্টিতা থেকে মুক্তি দেয়। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু মাসউদ বদরি (রা.) বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের বেলায় সুরা বাকারার শেষ আয়াত দুটি তেলাওয়াত করবে, তার জন্য এ দুটিই যথেষ্ট।’ (বুখারি ৫০০৯) অর্থাৎ সুরা বাকারা শেষ আয়াত দুটির তেলাওয়াত সে রাতের অপ্রীতিকর জিনিসের মোকাবেলায় যথেষ্ট হবে। আর তাহলো-
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ - كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ - وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ - لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا - لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ - رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا - رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا - رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ - وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا - أَنتَ مَوْلَانَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
উচ্চারণ : আমানার রাসুলু বিমা উংযিলা ইলাইহি মিররাব্বিহি ওয়াল মুমিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালায়িকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি লা নুফাররিকু বাইনা আহাদিমমির রুসুলিহি। ওয়া কালু সামিনা ওয়া আত্বানা গুফরানাকা রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির। লা ইকাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উসআহা – লাহা মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত – রাব্বানা লা তুআখিজনা ইন-নাসিনা আও আখত্বানা – রাব্বানা ওয়া লা তাহমিল আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহু আলাল্লাজিনা মিং ক্বাবলিনা – রাব্বানা ওয়া লা তুহাম্মিলনা মা লা ত্বাকাতা লানা বিহি – ওয়াফু আন্না ওয়াগফিরলানা ওয়ারহামনা – আংতা মাওলানা ফাংচুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরিন।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৮৫-২৮৬)
৩. সুরা মুলক তেলাওয়াত ও ইসতেগফার করা
রাতের নিস্তব্ধতায় কয়েক আয়াত হলেও তিলাওয়াত করুন। কুরআনের প্রতিটি অক্ষর হৃদয়ে নুরের আলো ছড়িয়ে দেয়, ঘর ভরে যায় রহমতে। আর সুরা মুলক রাতের বেলা পড়া উত্তম, তবে অন্য যেকোনো সময়ও পড়া যাবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
إِنَّ سُورَةً مِنَ الْقُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتَّى غُفِرَ لَهُ، وَهِيَ:
تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ
‘কুরআনের একটি সুরা আছে, যার ত্রিশটি আয়াত একজন ব্যক্তির পক্ষে সুপারিশ করবে, যতক্ষণ না তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আর সেটি হলো — ‘تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ’ (সুরা আল-মুলক)।’ (তিরমিজি ২৮৯১, আবু দাউদ ১৪০০, ইবন মাজাহ ৩৭৮৬)
> রাসুলুল্লাহ (সা.) সুরা মুলক তেলাওয়াত না করে রাতে ঘুমাতে যেতেন না।’ (তিরমিজি)
> হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ (সা.) আলিফ লাম মীম তানযিল ও তাবারাকাল্লাজি (সূরা মুলক) না পড়ে কখনো ঘুমাতে যেতেন না।’
৪. সুরা নাস, ফালাক্ব ও ইখলাস পড়া
নিরাপত্তার জন্য এ তিন সুরার আমল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক্ব এবং সুরা নাস ৩ বার পড়বে; এগুলোই তার সবকিছুর (নিরাপত্তার) জন্য যথেষ্ট হবে।’ হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এ সুরার অনেক বৈশিষ্ট্য ও প্রাপ্তির কথা ওঠে এসেছে-
হযরত আয়েশা (রা.) বলেন—
كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ، جَمَعَ كَفَّيْهِ، ثُمَّ نَفَثَ فِيهِمَا، فَقَرَأَ فِيهِمَا: قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ، وَقُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ، وَقُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ
‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন রাতে তার বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করতেন, তারপর তাতে ফুঁ দিতেন এবং তাতে সূরা ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’, ‘কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক’ ও ‘কুল আউজু বিরাব্বিন নাস’ পাঠ করতেন। এরপর দুই হাত দিয়ে শরীরের যতটুকু অংশে পৌঁছাতেন, ততটুকুতে হাত বুলাতেন— মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। এভাবে তিনি তিনবার করতেন।’ (বুখারি ৫০১৭, মুসলিম ২১৯২)
> এই আমল রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়মিত ঘুম-পূর্ব অভ্যাস ছিল।
> এটি এক ধরনের রুকইয়াহ (আত্মরক্ষা ও দোয়া)— শারীরিক ও আত্মিক নিরাপত্তার জন্য।
> এর মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে শয়তান, জিন ও অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করেন।
> তিনবার করা— নবীজির সুন্নাহ অনুযায়ী সবচেয়ে পূর্ণ রূপ।
৫. সুরা কাফিরুন পড়া
রাতের বিশেষ আমল হিসেবে পরিচিত সুরা কাফিরুন। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-
হযরত নওফাল ইবন মুআবিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
اقْرَأْ قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ عِنْدَ مَنَامِكَ، فَإِنَّهَا بَرَاءَةٌ مِنَ الشِّرْكِ
‘তুমি যখন ঘুমাতে যাবে, তখন সুরা ‘কুল ইয়াআয়্যুহাল কাফিরুন’ পাঠ করো, নিশ্চয়ই এটি শিরক থেকে মুক্তির ঘোষণা।’ (আবু দাউদ ৫০৫৫, তিরমিজি ৩৪০৩)
> সুরা আল-কাফিরূনে একনিষ্ঠ তাওহিদের ঘোষণা আছে— ‘আমি তোমাদের উপাস্যদের উপাসনা করি না।’
> তাই ঘুমানোর আগে এটি পাঠ করা আন্তরিক ঈমান নবায়ন ও শিরক থেকে সুরক্ষার দোয়া হিসেবে কাজ করে।
> অনেক আলেম বলেন, এটি সুরা আল-ইখলাসের মতোই ঈমান পুনর্ব্যক্ত করার সুরা।
৬. তাসবিহাতুল ফাতিমা
রাসুলুল্লাহ (সা.) তার কন্যা হযরত ফাতিমাকে (রা.) শিক্ষা দিয়েছিলেন ঘুমানোর আগে এবং প্রতিটি নামাজের পর তা পাঠ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘুমের আগে আল্লাহকে স্মরণ করুন— ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ুন। তারপর অন্তরের গভীর থেকে দোয়া করুন। আল্লাহ প্রতিটি কান্নার সাড়া দেন। হাদিসে এসেছে-
হযরত আলী ইবনু আবি তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত ফাতিমা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) নবী করিম (সা.)-এর কাছে একজন দাসী চাইলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন-
أَلَا أَدُلُّكُمَا عَلَى مَا هُوَ خَيْرٌ لَكُمَا مِنْ خَادِمٍ؟ إِذَا أَوَيْتُمَا إِلَى فِرَاشِكُمَا أَوْ أَخَذْتُمَا مَضَاجِعَكُمَا، فَكَبِّرَا أَرْبَعًا وَثَلَاثِينَ، وَسَبِّحَا ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَاحْمَدَا ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ
‘আমি কি তোমাদের এমন কিছু বলে দেব না, যা একজন দাসীর চেয়েও উত্তম? যখন তোমরা বিছানায় যাবে, তখন বলবে— ‘আল্লাহু আকবার’ ৩৪ বার, ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ৩৩ বার, ‘সুবহানাল্লাহ’ ৩৩ বার।এটি তোমাদের জন্য একজন দাসীর চেয়েও উত্তম।’ (বুখারি ৬৩১৮, মুসলিম ২৭২৭)
৭. ঘুমানোর সময় ডান কাতে শোয়া এবং দোয়া পড়া
اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ اَمُوْتُ وَ اَحْيَا
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনার নামে মৃত্যুবরণ করি এবং জেগে ওঠি।’