আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি ধারণা আছে যে, ওজু করার সময় বা ওজু করার পর ‘হাঁটুর উপর কাপড় উঠে গেলে ওজু নষ্ট হয়ে যায়। ধারণাটি কি সঠিক? ইসলামে এ বিষয়ে কী বলা হয়েছে?
না, হাঁটুর উপর কাপড় ওঠে গেলে ওজু নষ্ট হয় না বা ভাঙে না। হাঁটুর ওপরে কাপড় উঠা ওজু ভঙ্গকারী কোনো কাজ নয়। ওজু ভঙের যেসব কারণ উল্লেখ আছে তাতে এটি অন্তর্ভুক্ত নয়। এটি কেবল শালীনতা ও শিষ্টাচারের বিষয়। ওজু আমাদের ইবাদতের সংযোগ ও আত্মার শান্তির চাবিকাঠি। তাই ছোটখাটো আবরণ কাপড় উঁচু হলেও ইবাদতে মনোযোগ ও দৃষ্টি রাখাই মূল। এ বিষয়ে বিখ্যাত ইসলামি স্কলারদের মতে- শরীরের কোনো অংশ দৃশ্যমান হলে তাতে ওজু নষ্ট করে না।
ইমাম নববি (রহ.) বলেন, ‘ওজু শুধু নির্দিষ্ট কিছু কাজের মাধ্যমে ভাঙে। শরীরের কোনো অংশ খোলা হলে তা ওজু ভঙের কারণ নয়।’ (আল মাজমু: ২/১০০)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘কাপড় সরে যাওয়া বা শরীরের কোনো অংশ দৃশ্যমান হওয়া ওজু নষ্ট করে না বরং এটি সতর খোলা হওয়ার আলাদা বিষয়।’ (মাজমুউল ফতোয়া: ২১/২২৫)
ধারণাটি যে কারণে অমূলক
ওজু শুদ্ধ হওয়ার জন্য সতর (শরীরের যে অংশ ঢাকা ফরজ) ঢাকা কোনো শর্ত নয়। ওজু করার সময় বা ওজু করার পর হাঁটুর ওপর কাপড় উঠে গেলেও ওজু নষ্ট হবে না। কারণ এটি ওজু ভঙ্গের কারণগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়। একইভাবে নারীদের ক্ষেত্রেও ওজু করার পর মাথার কাপড় পড়ে গেলে ওজু ভাঙবে না। তবে মনে রাখতে হবে, অপ্রয়োজনে সতর খোলা রাখা অনুচিত এবং এটি দৃষ্টির সামনে থাকলে গুনাহ হবে।
ওজু ভঙের কারণ
ইসলামি ফিকহ অনুযায়ী, যেসব কারণে ওজু নষ্ট হয় বা ভেঙে যায়, সেগুলো হলো-
১. পায়খানা ও প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। যেমন- বায়ু, প্রস্রাব-পায়খানা, পোকা ইত্যাদি। (হেদায়া: ১/৭)
২. শরীরে যেকোনো জায়গা থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে ওজু ভেঙে যায়। (হেদায়া: ১/১০)
৩. মুখ ভরে বমি, নাক দিয়ে রক্ত বা মজি (সহবাসের আগে বের হওয়া সাদা পানি) বের হলে ওজু ভেঙে যায়। (ইবনে মাজাহ: ১২২১)
৪. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ১৩৩০)
৫. চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুমাালে ওজু ভেঙে যায়। (মুসনাদে আহমদ: ২৩১৫, আবু দাউদ: ২০২)
৬. পাগল, মাতাল বা অচেতন হয়ে গেলে ওজু ভেঙে যায়। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ৪৯৩)
৭. নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে ওজু ভেঙে যায়। (দারাকুতনি: ৬১২)
৮. নারীদের ইস্তেহাজার রক্ত বের হলে। ইস্তেহাজায় নামাজ-রোজার বিরতি হয় না; তবে প্রতি ওয়াক্তের শুরুতে নতুন ওজু করে নিতে হয়। (মাজমাউল বাহরাইন পৃ. ৯৮; আদ্দুররুল মুখতার: ১/২৮৫)
উপরের কারণগুলোই মূলত ওজু ভঙের জন্য যথেষ্ট। এর বাইরের কোনো কাজ বা শরীরের কোনো অংশ, যেমন হাঁটু অসাবধানতাবশত অল্প সময়ের জন্য প্রকাশ পেলে তা ওজু ভঙের কারণ নয়।
সতর্কতা
ওজুর পর যদি হঠাৎ কাপড় সরে গিয়ে হাঁটু বা অন্য কোনো সতর প্রকাশ পায়, তবে ওজু নষ্ট হয় না; কিন্তু সতর খোলা থাকলে দ্রুত তা ঢেকে নেওয়া ফরজ। যদি অসাবধানতাবশত এমন পরিস্থিতিতে কেউ (বিশেষ করে নন-মাহরাম) দেখে ফেলে, তাহলে তা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। তাই ওজু অবস্থায় সতর ঢাকার বিষয়ে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।