Logo
Logo
×

ইসলাম

যেসব ফল ছিল নবীজির (সা.) খুব প্রিয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম

যেসব ফল ছিল নবীজির (সা.) খুব প্রিয়

নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সা.) শরীরকে শক্তি জোগানোর উদ্দেশ্যে খাবার খেতেন, যাতে ইবাদত ও দায়িত্ব পালনে তার শরীর দুর্বল না হয়ে পড়ে। তিনি কখনও রসনার তৃপ্তির জন্য অতিরিক্ত খেতেন না বা শুধুমাত্র স্বাদে আনন্দের জন্য খাবারকে গুরুত্ব দিতেন না। যে খাবার তিনি পছন্দ করতেন, তা খেতেও তিনি পরিমিত পরিমাণ বজায় রাখতেন। তিনি কখনো অতিভোজন করতেন না, বরং মধ্যম পরিমাণে খাওয়া ও নিয়মিত খাওয়া—এটাই ছিল তার খাদ্যাভ্যাসের মূল নীতি। হাদিসে এসেছে-

হযরত মিকদাম ইবনু মাদীকারিব (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি-

مَا ملأَ آدمِيٌّ وِعَاءً شَرًّا مِنْ بَطنٍ، بِحَسْبِ ابنِ آدمَ أُكُلاتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ، فإِنْ كَانَ لا مَحالَةَ فَثلُثٌ لطَعَامِهِ، وثُلُثٌ لِشرابِهِ، وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ

মানুষ পেট হতে অধিক নিকৃষ্ট কোন পাত্র পূর্ণ করে না। মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে এমন কয়েক গ্রাস খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হলে পাকস্থলীর এক-তৃতীয়াংশ খাদ্যের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে। (তিরমিজি ২৩৮০, নাসাঈ ৬৭৬৯, ইবনে মাজাহ ৩৩৪৯, মুসনাদে আহমদ ১৭১৮৬)

নবীজি (সা.)-এর এই খাদ্যাভ্যাস আমাদের জন্য মধ্যপন্থা, পরিমিতি, শরীর ও আত্মার সুস্থতার শিক্ষা দেয়। নবীজির (সা.) জীবন থেকে বোঝা যায়, খাবারকে জীবন চালানোর জন্য, ইবাদতের সহায়ক হিসেবে নেওয়া উচিত।  স্বাদ বা আসক্তির উদ্দেশ্যে নয়।

ইবনুল কাইয়িম (রহ.) এ সম্পর্কে বলেন, নবীজির (সা.) খাদ্যাভ্যাস ছিল এমন যে, তিনি সামনে যা পেতেন তা ফিরিয়ে দিতেন না, আর যা পেতেন না—তার জন্য কষ্টও করতেন না। কোনো খাবার তার সামনে আনা হলে তিনি খেতেন, যদি ভালো না লাগত তবে খেতেন না, কিন্তু কখনও নিন্দা করতেন না। পেলে খেতেন, না পেলে ধৈর্য ধরতেন। তার রীতি ছিল—যা সহজে পাওয়া যায় তা-ই খাব। (যাদুল মাআদ, পৃষ্ঠা ৪৬)

খাবার গ্রহণে নবীজির আদর্শ কত সুন্দর ছিল! নবীজি (সা.) নিজেকে নির্দিষ্ট একটি খাবারেও সীমাবদ্ধ রাখতেন না, বরং শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নানা রকমের খাবার খেতেন। যদি কোনো খাবারে এমন গুণ থাকত যা ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে, তিনি তা অন্য কিছু দিয়ে সামঞ্জস্য করতেন—যেমন খেজুরের মধ্যে শরীর গরম করে ফেলার গুণ আছে, অন্যদিকে বিত্তিখ (এক ধরনের ফল) আবার পেট ঠাণ্ডা করে। তাই তিনি এই দুটো মিলিয়ে খেতেন। যদি সামঞ্জস্যের উপকরণ না মিলত, তিনি অল্প পরিমাণে খেতেন—যেন শরীর তা সইতে পারে, অপচয় বা অপকার না হয়।

নবীজি (সা.)-এর প্রিয় খাবার

নবীজি (সা.) খাবার গ্রহণ করতেন শরীরকে শক্তিশালী রাখার জন্য, যাতে ইবাদত ও দৈনন্দিন দায়িত্বে দুর্বল না হন।  নবীজির (সা.) প্রিয় খাবারগুলো ছিল-

১. খেজুর

আরবে খেজুর সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই খেজুর নবীজির (সা.) দস্তরখানে থাকত। তিনি খেজুর বিশেষভাবে পছন্দও করতেন।  হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-

> হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত যে, নবী (সা.) বলেছেন-

 لاَ يَجُوعُ أَهْلُ بَيْتٍ عِنْدَهُمُ التَّمْرُ

‘যে পরিবারের লোকদের কাছে খেজুর আছে, তারা অনাহার থাকে না। ’(মুসলিম ৫২৩১ ২০৪৬)

> হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-

يَا عَائِشَةُ بَيْتٌ لاَ تَمْرَ فِيهِ جِيَاعٌ أَهْلُهُ يَا عَائِشَةُ بَيْتٌ لاَ تَمْرَ فِيهِ جِيَاعٌ أَهْلُهُ أَوْ جَاعَ أَهْلُهُ ‏.‏ قَالَهَا مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا

‘হে আয়েশা! যে ঘরে খেজুর নেই সে ঘরের মানুষজন ক্ষুধার্ত।  হে আয়েশা! যে ঘরে খেজুর নেই সে ঘরের মানুষজন ক্ষুধার্ত। এ কথাটি তিনি দু’বার বা তিনবার বলেছিলেন।’ (মুসলিম ৫২৩২ ২০৪৬)

> নবীজি (সা.) রুটির সঙ্গেও খেজুর খেতেন।  হযরত ইউসুফ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন-

رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ كِسْرَةً مِنْ خُبْزِ شَعِيرٍ فَوَضَعَ عَلَيْهَا تَمْرَةً، وَقَالَ: هَذِهِ إِدَامُ هَذِهِ

‘আমি দেখলাম নবী (সা.) এক টুকরা যবের রুটি নিয়ে তাতে একটি খেজুর রেখে বললেনঃ এই খেজুর এই রুটির তরকারী।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৩০) 

> প্রচুর দান-সদকা করার কারণে নবীজির (সা.) ঘরে অভাব লেগেই থাকত। অনেক সময় দীর্ঘ দিন নবীজির (সা.) একমাত্র খাবার হতো খেজুর ও পানি।  হযরত আয়েশা (রা.) বলেন-

كَانَ يَأْتِي عَلَيْنَا الشَّهْرُ مَا نُوقِدُ فِيهِ نَارًا إِنَّمَا هُوَ التَّمْرُ وَالْمَاءُ إِلاَّ أَنْ نُؤْتَى بِاللُّحَيْمِ

‘আমাদের উপর দিয়ে মাস কেটে যেত, আমরা এর মধ্যে ঘরে (রান্নার) আগুন জ্বালাতাম না। আমরা কেবল খুরমা ও পানির উপর চলতাম। তবে যৎ সামান্য মাংস আমাদের নিকট এসে যেত।’ (বুখারি ৬৪৫৮)

২. তরমুজ

আরবে এক ধরনের ফল আছে যার ভেতরটা বাঙ্গির মতো কিন্তু খোসা কিছুটা আলাদা। ইংরেজিতে একে বলে Melon।  হযরত আয়েশা (রা.) বলেন-

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَأْكُلُ الْبِطِّيخَ بِالرُّطَبِ فَيَقُولُ: نَكْسِرُ حَرَّ هَذَا بِبَرْدِ هَذَا، وَبَرْدَ هَذَا بِحَرِّ هَذَا

‘নবীজি (সা.) পাকা খেজুরের সঙ্গে মিলিয়ে বিত্তিখ বা তরমুজ খেতেন আর বলতেন—এর গরমকে এটা ঠাণ্ডা করে, আর এর ঠাণ্ডাকে ওটা গরম করে ভারসাম্য আনে।।’ (আবু দাউদ: ৩৮৩৬)

৩. আঙ্গুর

নবীজি (সা.) পানিতে ভিজিয়ে আঙ্গুর খেতেন।  হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

كُنَّا نَنْبِذُ لِرَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فِي سِقَاءٍ فَنَأْخُذُ قَبْضَةً مِنْ تَمْرٍ أَوْ قَبْضَةً مِنْ زَبِيبٍ فَنَطْرَحُهَا فِيهِ ثُمَّ نَصُبُّ عَلَيْهِ الْمَاءَ فَنَنْبِذُهُ غُدْوَةً فَيَشْرَبُهُ عَشِيَّةً وَنَنْبِذُهُ عَشِيَّةً فَيَشْرَبُهُ غُدْوَةً ‏.‏ وَقَالَ أَبُو مُعَاوِيَةَ نَهَارًا فَيَشْرَبُهُ لَيْلاً أَوْ لَيْلاً فَيَشْرَبُهُ نَهَارًا

আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য একটি পাত্রে নাবীয বানাতাম। আমরা এক মুঠো খেজুর অথবা এক মুঠো আঙ্গু তুলে নিয়ে পাত্রের মধ্যে ছেড়ে দিতাম, অতঃপর তাতে পানি ঢেলে দিতাম। আমরা সকালবেলা তা ভিজাতাম এবং তিনি সন্ধ্যাবেলা তা পান করতেন। আবার কখনও আমরা সন্ধ্যাবেলা তা ভিজাতাম এবং তিনি সকালবেলা তা পান করতেন।  আবু মুআবিয়া (রা.) তার বর্ণনায় বলেন, দিনে ভিজাতেন এবং তিনি রাতের বেলা তা পান করতেন অথবা রাতের বেলা ভিজাতেন এবং তিনি দিনের বেলা তা পান করতেন।’ (ইবনে মাজাহ ৩৩৯৮, মুসলিম ২০০৫, তিরমিজি ১৮৭১, আবু দাউদ ৩৭১১)

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার