হাজারো হাফেজের মিলনমেলা, কুরআনের আলোয় আলোকিত এক শহর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২৭ পিএম
মিশরের গিজা প্রদেশের শান্ত শহর আল-সাফ। গত সপ্তাহান্তে শহরটি যেন রূপ নিয়েছিল এক আধ্যাত্মিক উৎসবে, যেখানে পবিত্রতার ছোঁয়া মিশে গিয়েছিল আনন্দ, গর্ব আর কৃতজ্ঞতার অশ্রুর সঙ্গে।
কুরআনের তিলাওয়াতের সুরে ভেসে উঠেছিল চারপাশের বাতাস, আর সেই সুরে যেন দুলছিল পুরো শহর এক উৎসব, এক ভালোবাসা, এক আলোকিত প্রজন্মের কণ্ঠে।
আল-গাম্মাজা আল-কুবরা গ্রামের ইসলামিক সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই মহিমান্বিত আয়োজনে সম্মানিত করা হয় এক হাজার ত্রিশ জন হাফেজে কুরআনকে। কুরআনের আলোয় বেড়ে ওঠা এই নবীন প্রজন্মকে ঘিরে উৎসবটি পরিণত হয়েছিল গিজা অঞ্চলের ইতিহাসে এক অনন্য স্মৃতিচিহ্নে। অনুষ্ঠানে যোগ দেন হাজারো মানুষ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, আলেম, স্থানীয় সমাজনেতা, এমনকি সরকারি কর্মকর্তারাও।
মঞ্চে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল তিলাওয়াতের সুমধুর ধ্বনি, আর দর্শকদের চোখে-মুখে ফুটে উঠছিল গভীর প্রশান্তি। কেউ দাঁড়িয়ে চোখের পানি মুছছিলেন, কেউবা গর্বভরে তাকিয়ে ছিলেন সেই ছোট ছোট হাফেজদের দিকে যারা আল্লাহর বাণী নিজের হৃদয়ে ধারণ করেছে।
অনেক মা তাদের সন্তানদের বুকভরা ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরেছিলেন, মাথায় পরেছিলেন বিশেষ মুকুট যার লেখা ছিল “প্রথম সহস্র হাফেজ প্রজন্মের প্রতীক”। দৃশ্যটি যেন এক জীবন্ত কবিতা, যেখানে ভালোবাসা, ঈমান ও আত্মত্যাগ একসাথে মিলেমিশে গেছে।
স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, আল-সাফের এই ঐতিহাসিক আয়োজন সমাজে নৈতিক জাগরণ সৃষ্টি করেছে, এখানকার পরিবারগুলো আজ গর্বিত, কারণ তাদের সন্তানরা কুরআনের হেফাজতকারীতে পরিণত হয়েছে।
গিজার মানুষদের চোখে-মুখে ছিল এক অদ্ভুত তৃপ্তি যেন শত বছরের স্বপ্নের পূর্ণতা। যখন সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ছিল, তখনো মঞ্চের আলো নিভছিল না। শিশুরা কণ্ঠে তুলেছিল কুরআনের আয়াত, আর আকাশ জুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল আল্লাহর পবিত্র নাম।
সেই রাতটি আর পাঁচটা রাতের মতো ছিল না। এটি ছিল এমন এক রাত, যখন একটি শহর কুরআনের আলোয় সত্যিই আলোকিত হয়ে উঠেছিল। আল-সাফের মানুষ যেন সেদিন বলেছিল যে সমাজ কুরআনকে হৃদয়ে ধারণ করে, তার অন্ধকার আর থাকে না।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা মুবাশির