Logo
Logo
×

ইসলাম

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার ১০ দেশ

Icon

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশ: ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:২৩ পিএম

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলিম জনসংখ্যার ১০ দেশ

বিশ্বে আজ মুসলমানের সংখ্যা দুইশ’ কোটিরও বেশি। সংখ্যায় যেমন বড় একটি জনগোষ্ঠী, তেমনি বিস্তৃতি এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ থেকে আমেরিকা–অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত। তবে বিশ্বের যে দশটি দেশে সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করেন, তার অধিকাংশই এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী দেশগুলোর মুসলিম জনসংখ্যা, তাদের বৈশিষ্ট্যসহ নানা বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো।

১) ইন্দোনেশিয়া

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমানের দেশ ইন্দোনেশিয়া। ২৪ কোটি ২৭ লাখের মতো মুসলমানের আবাস এই দ্বীপ–দেশে। দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার হাজারো দ্বীপে ছড়িয়ে থাকা এ দেশের মুসলমানরা শান্তিপ্রিয় সহাবস্থান, সংস্কৃতি এবং ইসলামের নরম সৌন্দর্যের মাধ্যমে পরিচিত। জাভা, সুমাত্রা, বালি, বোর্নিও—প্রতি অঞ্চলে ইসলামী সংস্কৃতির সঙ্গে স্থানীয় ঐতিহ্যের এক অনন্য মিশ্রণ দেখা যায়।

২) পাকিস্তান

দ্বিতীয় স্থানে পাকিস্তান—যেখানে মুসলমানের সংখ্যা ২৪ কোটির মতো। ভারত বিভাজনের ইতিহাস থেকে উঠে আসা এই দেশটি মুসলিম পরিচয়, ধর্মীয় সংস্কৃতি, মাদরাসা শিক্ষা, সুফি ঐতিহ্য, ধর্মীয় উৎসব এবং ইসলামী স্থাপত্যে সমৃদ্ধ। লাহোর, ইসলামাবাদ ও কারাকোরাম অঞ্চলে ইসলামী ইতিহাস ও প্রকৃতির সৌন্দর্য পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে।

৩) ভারত

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী বাস করে ভারতে—সংখ্যা ২০ কোটির বেশি। এটি জনসংখ্যার হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ মুসলমান–অধ্যুষিত দেশ। আগ্রার তাজমহল থেকে দিল্লির লাল কেল্লা, লখনৌয়ের নবাবি সংস্কৃতি—ভারতে মুসলমানদের অবদান ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিল্প, কবিতা, সংগীত এবং স্থাপত্যে অমর হয়ে আছে। শত শত বছরের সহাবস্থানের দেশে আজও মুসলমানরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ বাহক।

৪) বাংলাদেশ

চতুর্থ স্থানে আমাদের বাংলাদেশ—মুসলমানের সংখ্যা ১৫ কোটির বেশি। বঙ্গীয় মুসলমানদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ইসলামি শিক্ষা, মসজিদ–মাদরাসা, আধ্যাত্মিক চর্চা এবং ভাষার সঙ্গে ধর্মীয় পরিচয়ের এক স্বতন্ত্র সম্পর্ক রয়েছে।

সোনার বাংলা শুধু নদী–খাল–সবুজ প্রান্তরের দেশ নয়—এ দেশের মুসলমানরা সহনশীলতা, মানবতা ও সহাবস্থানের মূল্যবোধে পরিচিত। অসাধারণ স্থাপত্যকীর্তির বিভিন্ন মসজিদের জন্যও আলাদা নাম আছে বাংলাদেশের। রাজধানী শহর ঢাকার আরেক পরিচয় মসজিদের শহর।

৫) নাইজেরিয়া

আফ্রিকার বৃহৎ দেশ নাইজেরিয়ায় ১০ কোটির কাছাকাছি মুসলমান বসবাস করেন। পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, ইসলামী শিক্ষার বিস্তার, উত্তর নাইজেরিয়ার ঐতিহাসিক সুলতানি ও মসজিদ সংস্কৃতির জন্য পরিচিত। একই দেশের উত্তর–দক্ষিণ ভাগে ধর্মীয় প্রভাবের বৈচিত্র্য নাইজেরিয়ার ধর্মীয় সমাজ–গঠনে গভীর ভূমিকা রাখে।

৬) মিশর

আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম দেশ মিশরে মুসলমানের সংখ্যা ৯ কোটির কাছাকাছি। কায়রোর আল–আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বে ইসলামী জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে স্বীকৃত। মিশর ইসলামী ইতিহাস, আরব সংস্কৃতি, নীলনদ–কেন্দ্রিক সভ্যতা এবং জ্ঞান–শিক্ষার জন্য সমানভাবে পরিচিত।

৭) তুরস্ক

ইউরোপ–এশিয়া সংযোগস্থল তুরস্কে বসবাস করছে প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মুসলমান। ইস্তাম্বুলের ব্লু মস্ক, আয়া সোফিয়া, উসমানীয় সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন—সব মিলিয়ে ইসলামি ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে তুরস্ক অনন্য। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের কারণে মুসলিম বিশ্বেও তুরস্কের বিশেষ স্থান রয়েছে।

৮) ইরান

প্রায় ৮ কোটি মুসলমানের দেশ ইরান। প্রধানত শিয়া মুসলমান–অধ্যুষিত এই দেশ ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন, সুফিবাদ, বিজ্ঞান, স্থাপত্য ও ইসলামি সভ্যতায় বিশাল অবদান রেখেছে। পারস্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ইসলামের রেশ মেখে বিশ্ব–ইতিহাসে গভীর ছাপ রেখে গেছে।

৯) আলজেরিয়া

উত্তর আফ্রিকার এই দেশটিতে ৪ কোটির বেশি মুসলমান বাস করেন। আরব–বেরবার সংস্কৃতির মিশ্রণে আলজেরিয়া মুসলিম বিশ্বে স্বতন্ত্র পরিচয় তৈরি করেছে। সাহারা মরুভূমি থেকে ভূমধ্যসাগর—ভৌগোলিক বৈপরীত্যের মাঝে ইসলামী ঐতিহ্য ও আরব–আফ্রিকান সংস্কৃতি এখানে পাশাপাশি বিকশিত হয়েছে।

১০) সুদান

মুসলমানের সংখ্যা ৪ কোটির বেশি। সে হিসেবে মুসলিম জনসংখ্যার দিকে থেকে দশম স্থানে সুদান। নীল নদের প্রবাহ, প্রাচীন নুবীয় সভ্যতা এবং আরব–আফ্রিকান সংস্কৃতির মিলনে গড়া এই দেশে ইসলামী জীবনযাত্রা দৈনন্দিন সংস্কৃতি ও সামাজিক মূল্যবোধে গভীরভাবে গেঁথে আছে।

অবশ্য ইরাকের জনসংখ্যাও সুদানের কাছাকাছি। দেশটির মুসলিস জনসংখ্যার চার কোটির মতো। ইসলামের ইতিহাসে ইরাকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ—কারণ বাগদাদ একসময় ছিল জ্ঞান, সংস্কৃতি ও সভ্যতার কেন্দ্র। খিলাফতের রাজধানী হিসেবে বাগদাদ থেকে বিজ্ঞান, চিকিৎসা, সাহিত্য, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞানসহ বহু বিদ্যার আলো ছড়িয়েছে বিশ্বে। শিয়া ও সুন্নি মুসলমান—উভয় সম্প্রদায়েরই পবিত্র ধর্মীয় স্থান ও ঐতিহ্য ইরাকে অবস্থিত। ইতিহাস ও ইসলামী ঐতিহ্যের দিক থেকে মুসলিম বিশ্বের জন্য এই দেশটির গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আজকের মুসলিম বিশ্ব বৈচিত্র্যময়—সংস্কৃতি, ভাষা, খাদ্য, পোশাক, আচার–ব্যবহার, ইতিহাস এবং ভাবধারার পার্থক্য সত্ত্বেও একটি বিশ্বাস তাদের একসূত্রে বেঁধে রাখে। সহাবস্থান, ন্যায়, করুণা, জ্ঞান ও মানবিকতার মূল্যবোধেই ইসলামের সৌন্দর্য।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার