ব্যাংকে চাকরির টাকায় জীবিকা নির্বাহ কি হালাল?
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:০৪ পিএম
ইসলামে জীবিকা উপার্জন করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা এবং পরিস্কার নির্দেশনা রয়েছে। যেকোনো উপার্জন শুধুমাত্র হালাল উপায়ে হওয়া উচিত এবং কোনোক্রমে হারাম উপার্জন করা উচিত নয়। ব্যাংকে চাকরি করার ক্ষেত্রে তা যদি সুদী কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তবে সে উপার্জন হালাল নয়, বরং হারাম হবে।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে
ইসলামে সুদ (রিবা) অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সুদী ব্যবসায় অংশগ্রহণ করা, সুদ গ্রহণ করা বা সুদ দেওয়া সবই হারাম। বর্তমান ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বিশেষ করে যে ব্যাংকগুলো সুদী কার্যক্রম পরিচালনা করে, সেখানে কর্মরত লোকেরা যদি সুদী লেনদেনের মধ্যে জড়িত থাকেন, তবে তাদের উপার্জন হারাম বলে বিবেচিত হবে।
কুরআনের নির্দেশনা
আল্লাহ তাআলা কুরআনে সুদী লেনদেনের ব্যাপারে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কুরআনে এসেছে-
اَلَّذِیۡنَ یَاۡكُلُوۡنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا كَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّ ؕ ذٰلِكَ بِاَنَّهُمۡ قَالُوۡۤا اِنَّمَا الۡبَیۡعُ مِثۡلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الۡبَیۡعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا
‘যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন।’ (সুরা আল-বাকারা: ২৭৫)
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡكُلُوا الرِّبٰۤوا اَضۡعَافًا مُّضٰعَفَۃً ۪ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা দ্বিগুণের উপর দ্বিগুণ সুদ ভক্ষণ করনা এবং আল্লাহকে ভয় কর যেন তোমরা সুফল প্রাপ্ত হও।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৩০)
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ ذَرُوۡا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنۡ كُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا فَاۡذَنُوۡا بِحَرۡبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ ۚ وَ اِنۡ تُبۡتُمۡ فَلَكُمۡ رُءُوۡسُ اَمۡوَالِكُمۡ ۚ لَا تَظۡلِمُوۡنَ وَ لَا تُظۡلَمُوۡنَ
‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং বাকী সূদ ছেড়ে দাও, যদি তোমরা ঈমানদার হও। অতঃপর যদি না ছাড় তবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নিকট হতে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে লও। কিন্তু যদি তোমরা তাওবাহ কর, তবে তোমরা তোমাদের মূলধন পাবে, এতে তোমাদের দ্বারা অত্যাচার হবে না, আর তোমরাও অত্যাচারিত হবে না।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৭৮-২৭৯)
হাদিসের আলোকে
সুদের সাথে সম্পৃক্ত যে কোনো চাকরি হোক, ব্যাংক বা ব্যাংকের বাহিরে হোক, এটা করা ঠিক না। কেননা, হাদিসের মধ্যে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর অভিশাপ থাকবে, সুদ যে নেয়, যে দেয়, যে লিখে এবং সুদের যে সাক্ষী থাকে, এই চার ব্যক্তির উপর। সুদী ব্যাংক বা সুদী কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে থাকা অথবা তাদের সহযোগিতা করে, এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরি না করাই উত্তম।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَشَاهِدَيْهِ وَكَاتِبَهُ
‘রাসূলুল্লাহ (সা.) সুদখোর, সুদ দাতা, সুদের সাক্ষীদ্বয় ও সুদের (চুক্তি বা হিসাব) লেখককে অভিসম্পাত করেছেন।’ (তিরমিজি ১২০৬)
সুদ এতই জঘন্য আপরাধ যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সুদের ৭২টি আপরাধ রয়েছে, তার মধ্যে নূন্যতম আপরাধ হলো, মায়ের সঙ্গে জেনা করার মতো। এই জন্য প্রত্যেক মুমিনের হালাল উপায়ে চাকরির জন্য চেষ্টা করা উচিত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যারা সুদ খায়, তারা কেবল তাদের পেটকে আগুনে পূর্ণ করে।’ (মুসলিম ১৫৯৮)
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘সুদ একটি কুকর্ম, যা ব্যক্তির ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’ (বুখারি ৩০৫৮)
ব্যাংক চাকরির ক্ষেত্রে সতর্কতা
ব্যাংকের অবস্থা এই যে, তার পূর্ণ সম্পদ কয়েকটি বিষয়ের সমষ্টি। যথা-
১. মূলধন।
২. সঞ্চয়কারীদের জমাকৃত টাকা।
৩. জায়েজ ব্যবসার আমদানী।
৪. সুদ এবং হারাম ব্যবসার আমদানী।
এ চারটি বিষয়ের মাঝে কেবল ৪র্থ সুরতটি হারাম। বাকিগুলো যদি কোন হারাম কাজ না হয় তাহলে মূলত জায়েজ।
যেসব ব্যাংকে প্রথম ৩টি বিষয়ের লেনদেন অধিক। আর ৪র্থ বিষয়টি তথা হারাম লেনদেনের লভ্যাংশ কম সেসব ব্যাংকে সেসব ডিপার্টমেন্টে চাকরী করা যাতে হারাম কাজ করতে না হয় তাহলে তা জায়েজ হবে। এবং বেতন নেওয়াও জায়েজ হবে। তবে উত্তম হল এ চাকরীও ছেড়ে দেয়া।
কিন্তু যদি হারাম আমদানী বেশি হয় হালালের তুলনায়, বা হারাম কাজে জড়িত হতে হয় তাহলে উক্ত ব্যাংকে চাকরী করা জায়েজ নয়। এ থেকে বেতন নেওয়াও জায়েজ নয়। বেতন নিলে তা হারাম হিসেবে গণ্য হবে। (ফাতওয়ায়ে উসমানী-৩/৩৯৪-৩৯৬)