তুরস্কে তৈরি করা হলো বিশ্বের বৃহত্তম হাতে লেখা কোরআন
আনাদোলু এজেন্সি
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৩ এএম
ইস্তাম্বুলে ছয় বছর ধরে বিশ্বের বৃহত্তম হাতে লেখা কোরআন তৈরি করেছেন আলী জামান নামে ইরাকের একজন সাবেক স্বর্ণকার। তিনি চার মিটার লম্বা ও দেড় মিটার চওড়া পৃষ্ঠাসহ একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন।
আলী জামান ১৯৭১ সালে ইরাকে সুলায়মানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই ইসলামী ক্যালিগ্রাফির প্রতি তার আগ্রহ ছিল।
২০১৩ সালে জুয়েলারি ব্যবসা ছেড়ে দেয়ার পর তিনি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে এ শিল্পে নিয়োজিত করেন।
জামান তার কাজ আরো এগিয়ে নিতে ২০১৭ সালে পরিবারসহ ইস্তাম্বুলের ফাতিহ জেলায় চলে আসেন।
বিশাল এই কোরআন হাতে লেখা হয়েছিল থুলুথ লিপিতে, ঐতিহ্যবাহী খাগড়া কলম দিয়ে। এ লিপি ইসলামী ক্যালিগ্রাফির আরবি লিপির একটি সংস্করণ।
প্রতিটি পৃষ্ঠা খোলার পর এটি তিন মিটার বিস্তৃত হয়। জামান আধুনিক সরঞ্জাম ছাড়া প্রতিটি অক্ষর নিজ হাতে অত্যন্ত যত্ন সহকারে তৈরি করেন।
ইস্তাম্বুলের মিহরিমাহ সুলতান মসজিদ কমপ্লেক্সের একটি ছোট ঘরে একা বসে কাজ করেছেন। তিনি পাণ্ডুলিপিটি লেখার জন্য প্রতিদিন সময় ব্যয় করতেন। শুধুমাত্র খাবার ও নামাজের জন্য বিরতি দিতেন।
প্রকল্পটি সম্পূর্ণ তার নিজের অর্থায়নে পরিচালিত হয়েছিল। গুরুতর স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও জামান কাজ চালিয়ে যান।
তিনি থুলুথ ও নাসখ ক্যালিগ্রাফিতে প্রথম পুরস্কারসহ সিরিয়া, মালয়েশিয়া, ইরাক ও তুরস্কের একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছেন।
তিনি বিশিষ্ট শিল্পীদের কাছ থেকে ক্যালিগ্রাফিতে ইজাজাহ পেয়েছেন। ২০১৭ সালে তুরস্কের আন্তর্জাতিক হিলিয়ে-ই সেরিফ প্রতিযোগিতায় রাষ্ট্রপতি রজব তাইয়্যেব এরদোগানের কাছ থেকে ‘ডিস্টিংকশন’ পুরস্কার পেয়েছেন।
আনাদোলুকে প্রকল্পটি সম্পর্কে জামান বলেন, ‘এমন কিছু তৈরি করা আনন্দের, যা খুব কম লোকই করতে পারে। এর প্রতিটি অক্ষর আমার আত্মা ও প্রচেষ্টাকে প্রতিফলিত করে।’
তার ছেলে রেকার জামান বলেন, ‘আমার পরিবার তুরস্কে চলে এসেছে কারণ এরা ইরাকের চেয়ে ক্যালিগ্রাফি ও ইসলামী শিল্পকে বেশি মূল্য দেয়।’
তিনি আরো বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারীর সময় উপকরণ সংগ্রহ করা কষ্টকর ছিল কিন্তু তিনি অধ্যবসায় বজায় রেখেছিলেন।’
এই কোরআর পূর্বের বৃহত্তম পরিচিত পাণ্ডুলিপিকে ছাড়িয়ে গেছে, যেটি ২.২৮ মিটার লম্বা ও ১.৫৫ মিটার চওড়া ছিল।