
আল্লাহ তাআলার দয়া অসীম। তিনি তাঁর সৃষ্টিকূলের প্রতি বড়ই মেহেরবান। তবে মুমিনদের জন্য শোভনীয় হলো আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়া এবং যেকোনো বিষয়ে তাঁর শরণাপন্ন হওয়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা মুমিন: ৬০)
কোরআন-হাদিসের আলোকে আল্লাহর কাছে নিয়মিত এই ৬টি প্রার্থনা করা উচিত:
১. দেহ-মন সুস্থ রাখার দোয়া
শারীরিক সুস্থতা মহান আল্লাহর অপার নেয়ামত। আবার সুস্থ শরীর আল্লাহর দেওয়া আমানতও বটে। এই নেয়ামত ও আমানতের যথার্থ রক্ষণাবেক্ষণ করা আমাদের কর্তব্য। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘দুইটি নেয়ামত এমন আছে, যে দুইটিতে (অবহেলার কারণে) অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর তা হলো, সুস্থতা আর অবসর সময়।’ (বুখারি: ৬৪১২)
স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে অবহেলা করা বা স্বেচ্ছায় শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষত করা ইসলামে নিষিদ্ধ। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো, পরিমিত আহার, শরীরচর্চা, হাসিখুশি থাকা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার নির্দেশনা রয়েছে হাদিসে। শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন নবীজি (স.)।
দোয়া: اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি সাম-ই, আল্লাহুম্মা আ-ফিনি ফি বাসারি, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ, আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।’ (আবু দাউদ: ৫০৯০)
২. হালাল রিজিকের প্রার্থনা
ইসলামে হালাল উপার্জন জরুরি। ইবাদত কবুল হওয়ার জন্যও হালাল উপার্জন গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানবজাতি। পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে তা হতে তোমরা খাও ও শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না, নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা: ১৬৮)
দোয়া ১: اللهُ لَطِيفٌ بِعِبَادِهِ يَرْزُقُ مَنْ يَشَاءُ،وَهُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহু লাতিফুম বি-ইদিহি ইয়ারজুকু মাই ইয়াশায়ু ওয়া হুয়াল ক্ববিউল আজিজ।’
অর্থ: ‘আল্লাহ নিজ বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ, যাকে ইচ্ছা তিনি রিজিক দেন, তিনি শক্তিশালী, পরাক্রান্ত।’ (সুরা আশশুরা: ১৯)
দোয়া ২: اَللّهُمَّ اكْفِنِى بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَاغْنِنِى بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম মাকফিনি-বিহালালিকা ‘আন হারামিকা ওয়াগনিনী- বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান ওয়াকা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! হালাল কামাই যেন আমার জন্যে যথেষ্ট হয় । হারামের যেন দরকারই না হয়। আর তোমার অনুগ্রহের মাধ্যমে আমাকে অভাবমুক্ত কর, যাতে অন্য কারও মুখাপেক্ষী হতে না হয়।’ (তিরমিজি: ৩৫৬৩; মুসনাদে আহমদ: ১৩২১)
৩. নিরাপদ বাসস্থানের জন্য দোয়া
নিরাপত্তা মানুষের অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। সুন্দর-স্বাধীনভাবে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য, নিরাপদ রিজিকের জন্য, ঈমান হেফাজতের জন্য এবং বিভিন্ন রকম জুলুম থেকে বাঁচার জন্য নিরাপদ বাসস্থানের বিকল্প নেই।
দোয়া: اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، عَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَأَنْتَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، مَا شَاءَ اللهُ كَانَ، وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ، أَعْلَمُ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا، إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা আলাইকা তাওয়াক্কালতু ও আনতা রাব্বুল আরশিল আজিম, মাশাআল্লাহু কা’না, ওয়ামা লাম ইয়াশা’লাম ইয়াকুন ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যি আজিম, আলামু আন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাই ইন ক্বাদীর ও আন্নাল্লাহা ক্বাদ আহাতা বিকুল্লি শাই ইন ইলমা, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি নাফসি ওয়ামিন শাররি কুল্লি দাব্বাতিন; আনতা আখিজুম বিনাসিয়াতিহা ইন্না রাব্বি’আলা সিরাতিম মুস্তাকিম।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ্ ! আপনি আমার প্রভু, আপনি ছাড়া অন্যকোনো ইলাহ্ নাই, আপনার ওপর ভরসা করলাম, আপনি সম্মানিত আরশের মালিক। আল্লাহ তাআলা যা ইচ্ছা করেন, তাই হয়; আর তিনি যা ইচ্ছা করেন না তা হয় না, আল্লাহ তাআলার শক্তি ও সামর্থ্য ছাড়া অন্যকোনো শক্তি বা সামর্থ্য নেই, জেনে রেখো যে আল্লাহ তাআলা সমস্ত জিনিসের উপর শক্তিশালী, ক্ষমতাবান এবং তার জ্ঞান সমস্ত জিনিসব্যাপ্ত। হে আল্লাহ! আমার নফসের মন্দ হতে আপনার নিকট আশ্রয় চাই এবং প্রত্যেক প্রাণীর মন্দ হতে যার ঝুঁটি আপনি ধরে রেখেছেন; নিশ্চয়ই আমার প্রভু সরল পথে অধিষ্ঠিত আছেন।’ (ইবনুস সুন্নি: ৫৭, তাবারানি, মুজামে কাবির: ৩৪৩)
৪. নেক জীবনসঙ্গীর জন্য প্রার্থনা
নেককার স্বামী-স্ত্রী পৃথিবীর মহামূল্যবান সম্পদ। আল্লাহ তাআলার কাছে নেককার জীবনসঙ্গী চেয়ে দোয়া করার শিক্ষা রয়েছে ইসলামে।
দোয়া: ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮٌ
উচ্চারণ: ‘রাব্বি ইন্নি লিমা- আনজালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির।’
অর্থ: ‘হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী।’ (সুরা কাসাস: ২৪)
৫. নেক সন্তান লাভের দোয়া
নেক সন্তান অনেক বড় নেয়ামত। নেক সন্তান চেয়ে পবিত্র কোরআনে দোয়ার শিক্ষা রয়েছে।
দোয়া ১: رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا উচ্চারণ: ‘রব্বানা হাব্লানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুর্রিয়াতিনা কুর্রাতা আইয়ুনিও ওয়াঝআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন। যারা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় আর আমাদেরকে (পুরুষদেরকে) মুত্তাকি লোকদের নেতা বানিয়ে দিন।’ (সুরা ফুরকান: ৭৪)
দোয়া ২: رَبِّ هَبۡ لِیۡ مِنَ الصّٰلِحِیۡنَ ‘রাব্বি হাবলি মিনাস সলিহিন।’ অর্থ: ‘হে আমার প্রতিপালক, আমাকে এক সুপুত্র দান করুন।’ (সুরা সাফফাত: ১০০)
৬. ঈমানের সঙ্গে মৃত্যুর আবেদন
একজন মুমিনের জন্য ঈমানের সঙ্গে মৃত্যু সবচেয়ে বড় পাওয়া। সারাজীবন নেকআমল করে যদি কেউ ঈমানহীন হয়ে মারা যায়, তাহলে তার চেয়ে হতভাগা কেউ হতে পারে না। সেজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে বেশি বেশি ঈমানি মৃত্যু চেয়ে দোয়া করা উচিত।
দোয়া: رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
উচ্চারণ: ‘রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাও ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমিন।’
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের ধৈর্যদান করুন এবং মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দান করুন।’ (সুরা আরাফ: ১২৬)
আল্লাহ তাআলা আমাদের তাঁর কাছে বেশি বেশি চাওয়ার এবং উল্লিখিত বিষয়গুলো চেয়ে নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।