
প্রশ্ন: আমি অমুসলিমদের মাঝে দাওয়াতি কাজ করে থাকি। আমাদের একটা দাওয়াহ সেন্টার আছে। সঙ্গে একটি মসজিদও আছে। একদিন এক হিন্দু যুবককে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে আমাদের মসজিদে নিয়ে আসি। সেখানে বসে তার সঙ্গে কথা বলি ও তাকে ইসলামের দাওয়াত দিই।
পরে স্থানীয় এক লোক বলল, অমুসলিমদের জন্য মসজিদে প্রবেশের সুযোগ নেই। তাকে মসজিদে নিয়ে এসে আপনি ঠিক করেননি।
জানার বিষয় হল, তার কথা কি ঠিক? এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী?
উত্তর: না, লোকটির ওই কথা ঠিক নয়। মসজিদের আদব-সম্মান রক্ষা করে অমুসলিমদের জন্যও মসজিদে প্রবেশ করার অনুমতি আছে। আর দাওয়াতি উদ্দেশ্যে হলে তো কোনো সমস্যাই নেই। সুতরাং আপনি তাকে মসজিদে এনে কোনো অন্যায় করেননি।
উসমান ইবনে আবিল আস রা. বর্ণনা করেন–
أنَّ وَفْدَ ثَقِيْفٍ لَمَّا قَدِمُوْا عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أنْزَلَهُم الْمَسْجِدَ، لِيَكُوْنَ أرَقَّ لِقُلُوْبِهِمْ.
অর্থাৎ যখন ছাকীফ গোত্রের প্রতিনিধিদল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসল, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মসজিদে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। যেন তাদের দিল নরম হয়। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩০২০)
হানাফি মাজহাব মতে, অমুসলিমরা কোনো প্রয়োজন হলে মুসলমানদের অনুমতি নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে।
ইমাম শাফেয়ি (রহ)-এর মতে, অমুসলিমরা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে পারবে না, তবে অন্য যেকোনো মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে।
ইমাম আহমদ (রহ.)-এর মতে, অমুসলিমরা হেরেম শরিফে প্রবেশ করতে পারবে না, তবে অন্য যেকোনো মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে।ইমাম মালেক (রহ)-এর মতে, অমুসলিমদের মসজিদুল হারামসহ কোনো মসজিদেই প্রবেশ করা বৈধ নয়। কেননা কাবা শরিফ ও মসজিদুল হারামকে কেন্দ্র করেই অন্য সব মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ বিষয়ে আল্লামা রশিদ রেজা (রহ.) লিখেছেন, ইসলামের ইতিহাস ও মহানবী (সা.)-এর জীবনচরিত সম্পর্কে বোদ্ধা মহল ভালোভাবেই জানে যে মুসলমানরা লেনদেন ও সামাজিকতার ক্ষেত্রে অমুসালমদের সঙ্গে মিলেমিশেই থাকত। বিশেষত হুদাইবিয়ার সন্ধির পর বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে অমুসলিমদের কষ্ট দেওয়া, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ নিষিদ্ধ করা হয়।
সেই সময় তাদের প্রতিনিধিরা মহানবী (সা.)-এর কাছে আসত এবং মসজিদে নববীতে প্রবেশ করত। একইভাবে নাজরানের ইহুদি-খ্রিস্টানরাও এসেছে। তাদের সঙ্গে কখনো ‘অপবিত্র' আচরণ করা হয়নি। তাদের দেহ মিলিত হওয়ার দরুন কোনো কিছু ধৌত করতেও বলা হয়নি।’ (তাফসিরে মানার : ১/২৪২)
প্রতিনিধিরা নবী করিম (সা.)-এর কাছে এলে তাদের মসজিদে নববীতে অবস্থান করতে দেওয়া হয়। অথচ তারা তখনো অমুসলিম ছিল। (মা'আরেফুল কুরআন)
সূত্র: সহিহ ইবনে খুযাইমা, হাদিস ১৩২৮; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ৩/৮৮; শরহুস সিয়ারিল কাবীর, সারাখসি ১/৯৭; তাকমিলাতুল বাহরির রায়েক ৮/২০৩; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৪৬; রদ্দুল মুহতার ৬/৩৮৭