
আমাদের প্রত্যেকটি কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত বা প্রত্যেকটি কাজের প্রতিদান আমরা পাবো আমাদের নিয়ত অনুযায়ী। ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। (সহিহ বুখারি: ১)
নিয়ত হল মনে কোনো কাজের দৃঢ় ইচ্ছা করা। এই ইচ্ছা সব আমলের জন্য জরুরি। নামাজের জন্যও জরুরি। কেউ যখন নামাজে দাঁড়াবে, তার অন্তরে নিয়ত থাকতে হবে, তার জানা থাকতে হবে যে সে নামাজ শুরু করছে, কোন নামাজ শুরু করছে, কত রাকাত নামাজ সে পড়বে ইত্যাদি। অন্তরের এই ইচ্ছা ও জানা থাকার নামই নিয়ত।
মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরি নয়
মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরি নয়। তবে কেউ যদি অন্তরের নিয়তের পাশাপাশি নিয়তের বিষয়টি মুখেও উচ্চারণ করতে চায় তবে তারও অবকাশ আছে। কেউ মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করলে তা নাজায়েজ বা বিদআত হবে না।
৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের নিয়ত
ফরজ নামাজগুলোতে কোন নামাজ আদায় করা হচ্ছে তা নির্দিষ্ট করে জানা থাকা জরুরি। যেমন, ফজরের ফরজ নামাজ পড়ছি, জোহরের ফরজ নামাজ পড়ছি এভাবে কোন ফরজ নামাজ সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট নিয়ত থাকতে হবে।
এখানে আমরা ৫ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের বাংলা নিয়ত তুলে ধরলাম:
১. ফজরের নামাজের নিয়ত (২ রাকাত ফরজ)
নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে বলবে, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিবলামুখী হয়ে ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করছি’। তারপর আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করবে।
২. জোহরের নামাজের নিয়ত (৪ রাকাত ফরজ)
নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে বলবে, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিবলামুখী হয়ে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করছি’। তারপর আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করবে।
৩. আসরের নামাজের নিয়ত (৪ রাকাত ফরজ)
নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে বলবে, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিবলামুখী হয়ে আসরের চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করছি’। তারপর আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করবে।
৪. মাগরিবের নামাজের নিয়ত (৩ রাকাত ফরজ)
নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে বলবে, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিবলামুখী হয়ে মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করছি’। তারপর আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করবে।
৫. ইশার নামাজের নিয়ত (৪ রাকাত ফরজ)
নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে বলবে, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিবলামুখী হয়ে ইশার চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করছি’। তারপর আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করবে।
কাজা নামাজের নিয়ত
ফরজ নামাজ ছুটে গেলে কাজা আদায়ের ক্ষেত্রেও ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করে নিয়ত থাকা জরুরি। কাজা নামাজের জন্যও উল্লিখিত পদ্ধতিতেই নিয়ত করবে। শুধু নামাজের সঙ্গে ‘কাজা’ যুক্ত করবে। যেমন ফজরের নামাজ ছুটে গেলে পরবর্তীতে কাজা আদায় করার জন্য দাঁড়ালে মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে বলবে, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কিবলামুখী হয়ে ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজের কাজা আদায় করছি’। তারপর আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করবে।
কারো যদি কাজা নামাজ অনেক বেশি হয় এবং কাজা হওয়ার দিন-তারিখ মনে না থাকে, তাহলে এভাবে নিয়ত করবে যে ’আমার জিম্মায় কাজা হিসেবে থাকা সর্বশেষ জোহরের নামাজের কাজা আদায় করছি’। এভাবে প্রত্যেক ওয়াক্তের কাজা নামাজ আদায় করার সময় নিয়ত করতে হবে। যতদিন তার মন এ সাক্ষ্য না দেবে যে তার জিম্মায় আর কোনো কাজা নামাজ বাকি নেই, ততদিন পর্যন্ত কাজা নামাজ আদায় করতে থাকবে।
সুন্নত ও নফল নামাজের নিয়ত
ফরজের সাথে প্রতি ওয়াক্তে আমরা যে সুন্নত নামাজগুলো আদায় করি, সেগুলোতে ওয়াক্ত নির্দিষ্ট করে নিয়ত থাকা ভালো, কিন্তু জরুরি নয়। এ সব নামাজ শুধু ‘নামাজ আদায় করছি’ এ রকম নিয়তে আদায় করলেও হয়ে যাবে। কেউ যদি ফজরের আগে দুরাকাত, জোহরের আগে চার রাকাত, মাগরিবের পর দুরাকাত বা ইশার পর দুরাকাত নামাজ শুধু নামাজ পড়ার নিয়তে আদায় করে তাহলে তা ওই ওয়াক্তের সুন্নত হিসেবেই আদায় হবে। আর বিতর নামাজের সময় ‘বিতর নামাজ পড়ছি’ এ রকম নিয়ত করতে হবে।
এ ছাড়া অন্যান্য নফলের ক্ষেত্রেও শুধু ‘নামাজ আদায় করছি’ বা ‘নফল নামাজ আদায় করছি’ এমন নিয়ত থাকাই যথেষ্ট।
নামাজের নিয়ত কখন করতে হবে? নামাজ শুরু করার পর নিয়ত পরিবর্তন করা যাবে?
নামাজের নিয়ত করতে হবে নামাজ শুরু করার আগেই। এক নিয়তে নামাজ শুরু করার পর নামাজের ভেতরে নিয়ত পরিবর্তন করা যায় না। কেউ নিয়ত পরিবর্তন করলেও তা কার্যকর হয় না।
যেমন কেউ যদি ফজরের সুন্নত আদায়ের নিয়তে নামাজ শুরু করে, এরপর নামাজের ভেতরে নিয়ত করে যে, আমি এই নামাজ গতকালের ফরজের কাজা হিসেবে আদায় করছি, তাহলে তা শুদ্ধ বা কার্যকর হবে না। ওই নামাজ ফজরের সুন্নত হিসেবেই আদায় হবে।