Logo
Logo
×

ইসলাম

জানাজার নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম

জানাজার নামাজের নিয়ত, নিয়ম ও দোয়া

জানাজার নামাজের নিয়ত

আমাদের প্রত্যেকটি কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত বা প্রত্যেকটি কাজের প্রতিদান আমরা পাবো আমাদের নিয়ত অনুযায়ী। ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। (সহিহ বুখারি: ১)
নিয়ত হল মনে কোনো কাজের দৃঢ় ইচ্ছা করা। এই ইচ্ছা সব আমলের জন্য জরুরি। নামাজের জন্যও জরুরি। কেউ যখন নামাজে দাঁড়াবে, তার অন্তরে নিয়ত থাকতে হবে, তার জানা থাকতে হবে যে সে নামাজ শুরু করছে, কোন নামাজ শুরু করছে, কত রাকাত নামাজ সে পড়বে ইত্যাদি। অন্তরের এই ইচ্ছা ও জানা থাকার নামই নিয়ত।

মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করা জরুরি নয়। তবে কেউ যদি অন্তরের নিয়তের পাশাপাশি নিয়তের বিষয়টি মুখেও উচ্চারণ করতে চায় তবে তারও অবকাশ আছে। কেউ মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করলে তা নাজায়েজ বা বিদআত হবে না।

জানাজার শুরু করার আগে মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে বলুন, ‘আমি সামনে উপস্থিত হওয়া মৃতের জানাজার নামাজ এই ইমামের ইমামতিতে আদায় করছি’। তারপর ‘আল্লাহু আকবার’ কলে জানাজার নামাজ শুরু করুন।

জানাজা ও অন্যান্য নামাজের নিয়ত আরবিতে করা জরুরি নয়। তাই আরবি নিয়ত মুখস্ত করার প্রয়োজন নেই।

জানাজার নামাজের নিয়তের সময় ‘চার তাকবিরের সাথে’ ‘অমুক ইমামের পেছনে’ ‘অমুক মৃতের জন্য’ ‘পুরুষের জন্য’ বা ‘নারীর জন্য’ বা `শিশুর জন্য\' ইত্যাদি জানা থাকা, মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করে বলা জরুরি নয়।

জানাজার জন্য উপস্থিত হওয়া মৃত ব্যক্তি পুরুষ নাকি নারী, শিশু নাকি বয়স্ক তা জানা না থাকলেও জানাজার নামাজ শুদ্ধ হবে। তবে শিশু ও বয়স্কদের জানাজার নামাজের দোয়া যেহেতু আলাদা, তাই উপস্থিত মুসল্লিদের অনেকে মৃতের পরিচয় না জানার সম্ভাবনা থাকলে নামাজ শুরু করার আগে মুসল্লিদের জানিয়ে দেওয়া উচিত মৃত ব্যক্তি শিশু নাকি বয়স্ক।

জানাজার নামাজের ফরজ ও সুন্নত

জানাজার নামাজের ফরজ ২টি: ১. চারটি তারবির বলা। ২. জানাজার নামাজ দাঁড়িয়ে পড়া। ওজর ছাড়া জানাজার নামাজ বসে পড়া জায়েজ নয়।
জানাজার নামাজের সুন্নত ৩টি: ১. প্রথম তাকবিরের পর সানা পড়া। ২. দ্বিতীয় তাকবিরের পর রসুলুল্লাহর (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওপর দরুদ পড়া। ৩. তৃতীয় তাকবিরের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা।

চতুর্থ ও সর্বশেষ তাকবিরের পর সালাম ফেরানোর মাধ্যমে জানাজার নামাজ শেষ করতে হয়। চতুর্থ তাকবিরের পর কোনো দোয়া-দরুদ পড়ার নিয়ম নেই।

জানাজার নামাজের নিয়ম ও দোয়া

জানাজার নামাজে দাঁড়িয়ে নিয়ত করে ইমামের সঙ্গে ‘আল্লাহ আকবার’ বলে কান পর্যন্ত দুই হাত ওঠাবেন, তারপর অন্যান্য নামাজের মতো হাত বাঁধবেন। প্রথম তাকবিরের পর সানা পড়বেন:

سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالِىْ جَدُّكَ وَ لَا اِلَهَ غَيْرُكَ

উচ্চারণ: সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম অতি বরকতময়। আপনি সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী এবং আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।

তারপর ইমাম দ্বিতীয় তাকবির বললে হাত ওঠানো ছাড়াই দ্বিতীয় তাকবির বলবেন। দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ পড়বেন:

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম-মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বারাকতা আলা ইবরাহিম ওয়া আলা আলি ইবরাহিম ইন্নাকা হামিদুম-মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ! উম্মি নবি মুহাম্মাদের ওপর এবং মুহাম্মাদের পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহিমের ওপর এবং ইবরাহিমের পরিবারের ওপর। উম্মি নবি মুহাম্মাদ ও তার পরিবারকে বরকত দান করুন, যেমন ইবরাহিম ও তার পরিবারকে বরকত দান করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত, মহিমান্বিত।

তারপর ইমাম তৃতীয় তাকবির বললে হাত ওঠানো ছাড়াই তৃতীয় তাকবির বলবেন। তৃতীয় তাকবিরের পর মৃত ব্যক্তি প্রাপ্তবয়স্ক হলে এ দোয়া পড়বেন:

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِ نَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَنَا اَللّٰهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلٰى الْاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلٰى الْاِيْمَانِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা-গফিরলি হায়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনছানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াহতাহু মিন্না ফাআহয়িহী আলাল ইসলামি ওয়া মান তাওয়াফ ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহ আলাল ইমান।

অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত ও মৃত উপস্থিত ও অনুপস্থিত, ছোট ও বড় এবং পুরুষ ও নারী সবাইকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাদের জীবিত রেখেছেন ইসলামের ওপর জীবিত রাখেন আর যাদের মৃত্যুদান করেছেন তাদের ইমানের সঙ্গেই মৃত্যুদান করুন।

অপ্রাপ্তবয়স্ক মৃতের জানাজার নামাজে তৃতীয় তাকবিরের পর এ দোয়া পড়বেন:
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَّذُخْرًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّمُشَفَّعًا

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা-জআলহু লানা ফারতাও ওয়া-জআলহু লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়া-জআলহু লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফাআন।

অর্থ: হে আল্লাহ! তাকে আমাদের অগ্রবর্তী ব্যবস্থাপক (কোনো সফরে যে আগে আগে চলে এবং পেছনের লোকেরা পরে তার সাথে মিলিত হয়) বানিয়ে দিন, তাকে আমাদের জন্য সঞ্চয় ও সওয়াবের উপকরণ বানিয়ে দিন এবং তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী ও গ্রহণযোগ্য সুপারিশকারী বানান।

তারপর ইমাম চতুর্থ তাকবির বললে হাত ওঠানো ছাড়াই চতুর্থ তাকবির বলবেন। চতুর্থ তাকবিরের পর ইমামের সঙ্গে সালাম ফেরাবেন।

জানাজার নামাজে শুধু প্রথম তাকবির বলার সময় হাত ওঠবেন, বাকি তাকবিরগুলোতে হাত ওঠাবেন না যেমন ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম তাকবিরের পর অন্যান্য নামাজের মতো নাভির ওপর হাত বেঁধে রাখবেন।

জানাজা শেষে কখন হাত ছাড়তে হবে এ বিষয়ে আলেমদের দুটি মত পাওয়া যায়। অনেকে বলেছেন, চতুর্থ তাকবিরের পর উভয় হাত ছেড়ে দিতে হবে। আরেকটি মত হলো, উভয় দিকে সালাম ফেরানোর পর হাত ছাড়তে হবে। দুইটি মতই শুদ্ধ, যে কোনোটির ওপর আমল করা যায়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার