Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

চিকিৎসক বলেছিলেন আয়ু আছে ৩ঘণ্টা, এখন কোটি ডলারের সাম্রাজ্য যুবকের

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৫০ এএম

চিকিৎসক বলেছিলেন আয়ু আছে ৩ঘণ্টা, এখন কোটি ডলারের সাম্রাজ্য যুবকের

১৮ বছর বয়সে চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, ঝেংহুয়া ইয়াংয়ের হাতে সময় আছে আর মাত্র তিন ঘণ্টা। সেই তরুণই আজ তৈরি করেছেন ১ কোটি ডলারের গেমিং সাম্রাজ্য। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা তাকে এমন গেম বানাতে অনুপ্রাণিত করেছে, যা মানুষের জীবন বদলে দেয়। খবর এনডিটিভি

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার প্রথম বছরে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে পড়েন ঝেংহুয়া ইয়াং। ২০০৮ সালের প্রথম সেমিস্টারে নাক দিয়ে রক্ত পড়ার মতো সাধারণ ঘটনা থেকে শুরু হওয়া সমস্যা দ্রুতই প্রাণঘাতী সংকটে পরিণত হয়। পরে ধরা পড়ে তিনি ক্রনিক রিফ্র্যাক্টরি আইডিওপ্যাথিক থ্রম্বোসাইটোপেনিক পারপুরা রোগে আক্রান্ত। এটি এক ধরনের বিরল অটোইমিউন রোগ।

শরীরে প্লাটিলেট বিপজ্জনকভাবে কমে যাওয়ায় সেসময় চিকিৎসকেরা তার আয়ু আর তিন ঘণ্টা আছে বলে জানিয়ে দেন। সেই যাত্রায় অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও পরের দুই বছর তাকে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতে হয়েছে হাসপাতালে।

আর সেই কঠিন সময়েই ইয়াং আশ্রয় খুঁজে নেন ভিডিও গেমে— লিগ অব লিজেন্ডস, মাইনক্রাফট, ওয়ার্ল্ড অব ওয়ারক্রাফটের মতো গেম সেসময় তার মানসিক সান্ত্বনা হয়ে ওঠে। এখান থেকেই তার মাথায় আসে এমন এক গেম বানানোর ভাবনা, যা মানুষের আবেগে ছাপ ফেলবে এবং ভাবনার জগতকে নাড়া দেবে। পরে মাত্র এক হাজার ডলার বিনিয়োগ করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গেম ডেভেলপমেন্ট স্টুডিও ‘সেরেনিটি ফোর্জ’। এটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই ছিল অর্থবহ অভিজ্ঞতা দেবে এমন গেম তৈরি করা।

বিশ্বখ্যাত আমেরিকান ব্যবসায়িক ম্যাগাজিন ফরচুন-কে ইয়াং বলেন, ‘লিগ অব লিজেন্ডসের মতো গেম আমাকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে বানানো হয়নি। তবুও সেগুলো শেষ পর্যন্ত আমার জীবন বাঁচিয়েছে। যদি আমি ইচ্ছা করেই মানুষের জন্য সহায়ক গেম বানাতে শুরু করি— তাহলে সেটার শক্তি কতটা হতে পারে?’

এক দশকেরও বেশি সময় পর তার স্টুডিও এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০টি গেম প্রকাশ করেছে, যার মধ্যে ডোকি ডোকি লিটারেচার ক্লাব-এর মতো জনপ্রিয় টাইটেলও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বছরে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি ডলার আয় করে থাকে। তবে অর্থ উপার্জন করাই ইয়াংয়ের কাছে সফলতার মানদণ্ড নয়, বরং তার প্রতিষ্ঠানের বানানো গেম মানুষের জীবনে কী পরিবর্তন আনছে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণে লাভজনক অনেক প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছে স্টুডিওটি।

ইয়াং বলেন, ‘অনেক গেম আমাদের কাছে এসেছে যেগুলো বানালে হয়তো ২ কোটি ডলার আয় হতো। কিন্তু আমরা না বলেছি, কারণ সেটি ‘সেরেনিটি ফোর্জ’-এর গেম নয়’। তিনি জানান, কিশোর বয়সী ভক্তরা লাইনে দাঁড়িয়ে তাকে ধন্যবাদ দেন, অনেকে কাঁদেন, আলিঙ্গন করেন। কেউ কেউ জানান, তার তৈরি গেম বুঝতে সাহায্য করেছে যে তারা একটি নিপীড়নমূলক সম্পর্কে ছিলেন এবং সেখান থেকে বেরিয়ে এসে এখন অনেক ভালো আছেন।

ইয়াং বলেন, ‘এই ধরনের গল্পই আমাকে চালিত করে। আর্থিক লাভ, কর্মীর সংখ্যা... এসবের চেয়ে মানুষের জীবনে শিল্পের প্রভাবই আমার কাছে বড়’। গেমিং উদ্যোক্তাদের জন্য তার মূল উপদেশ: ‘দ্রুত ভুল করো, ঘন ঘন ভুল করো’। তার মতে, প্রতিযোগিতামূলক শিল্পে টিকে থাকতে হলে দ্রুত ব্যর্থতা সামলে শেখার ক্ষমতাই সফলতার আসল চাবিকাঠি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার