দাতার শুক্রাণুতে পাওয়া গেল ক্যান্সারের জিন, ঝুঁকিতে দুই শতাধিক শিশু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৪১ পিএম
একজন শুক্রাণু দাতা নিজেই জানতেন না যে তার দেহে এমন একটি জিনগত পরিবর্তন (মিউটেশন) আছে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি করে। এই দাতার শুক্রাণু ব্যবহার করে ইউরোপজুড়ে অন্তত ১৯৭টি শিশুর জন্ম হয়েছে। কিছু শিশু ইতোমধ্যেই মারা গেছে। যারা এই জিনগত পরিবর্তন উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে, তাদের মধ্যে খুব কমই ক্যান্সার এড়াতে পারবে।
যুক্তরাজ্যের কোনো ক্লিনিকে এই দাতার শুক্রাণু বিক্রি হয়নি। তবে খুব সীমিত সংখ্যক ব্রিটিশ পরিবার ডেনমার্কে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার সময় এটি ব্যবহার করেছেন।
শুক্রাণুটি সরবরাহকারী ডেনমার্কের ইউরোপিয়ান স্পার্ম ব্যাংক জানিয়েছে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করছে এবং স্বীকার করেছে যে কিছু দেশে ওই দাতার শুক্রাণু দিয়ে অনেক শিশু জন্ম নিয়েছে।
দাতা ২০০৫ সালে ছাত্র থাকাকালীন অর্থের বিনিময়ে শুক্রাণু দান শুরু করেছিলেন এবং পরবর্তী ১৭ বছর ধরে বিভিন্ন নারী তার শুক্রাণু ব্যবহার করেছেন। তিনি সুস্থ ছিলেন এবং সমস্ত নিয়মিত স্ক্রিনিং পরীক্ষা পাস করেছিলেন, কিন্তু তার কিছু শুক্রাণুতে জন্মের আগে থেকে একটি বিপজ্জনক জিনগত পরিবর্তন (মিউটেশন) ঘটেছিল।
এই মিউটেশনটি TP53 জিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যা সাধারণত দেহের কোষকে ক্যান্সারে রূপ নেওয়া থেকে রক্ষা করে। দাতার দেহের অধিকাংশ অংশে এই জিন সচল থাকলেও তার প্রায় ২০ শতাংশ শুক্রাণুতে এটি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। এই আক্রান্ত শুক্রাণু থেকে জন্ম নেওয়া শিশুর প্রতিটি কোষে এই জিনগত পরিবর্তন থাকে।
এই অবস্থাকে লি-ফ্রমেনি সিনড্রোম বলা হয়, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে শিশুকাল এবং পরে জীবনের কোনো সময় স্তন ক্যান্সারের জন্য।
আক্রান্ত শিশুদের নিয়মিত এমআরআই ও আল্ট্রাসাউন্ড করতে হয়, এবং অনেক নারী ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে স্তন অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন।
ইউরোপিয়ান স্পার্ম ব্যাংক জানিয়েছে, দাতা নিজে বা তার পরিবার অসুস্থ নয় এবং এই ধরনের মিউটেশন আগেই ধরা সম্ভব নয়। সমস্যা শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাতাকে ব্লক করা হয়েছে।
ডাক্তাররা জানিয়েছেন, প্রথম ধাপ পর্যন্ত তাদের জানা ৬৭ শিশুর মধ্যে ২৩ জনের দেহে এই জিনগত পরিবর্তন পাওয়া গেছে, এবং এর মধ্যে ১০ জন ইতোমধ্যেই ক্যান্সারে আক্রান্ত। মোট সংখ্যা অন্তত ১৯৭ জন, তবে চূড়ান্ত নয়। এখনো সকল শিশুর মধ্যে কতজন এই বিপজ্জনক জিন পেয়েছে তা জানা যায়নি।