Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

Icon

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০২ পিএম

থাইল্যান্ড–কম্বোডিয়া সীমান্তে ফের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

যুদ্ধবিরতি ভেঙে তীব্র গোলাগুলি, উভয় দেশের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ| অবস্থার অবনতি ঠেকাতে মালয়েশিয়াসহ আন্তর্জাতিক মহলের শান্তি আহ্বান|

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার বহু দশক ধরে চলমান সীমান্ত উত্তেজনা আবারও ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। দুই দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ও সার্বভৌমত্ব হুমকির অভিযোগ তুলছে। ফলে অঞ্চলে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দ্য গার্ডিয়ানের ৯ ডিসেম্বরের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সর্বশেষ সংঘর্ষে কম্বোডিয়ায় অন্তত সাতজন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে থাইল্যান্ড জানিয়েছে, তাদের তিনজন সেনা সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। গত জুলাইয়ে টানা পাঁচদিনের যুদ্ধের পর এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি।

ছয় সপ্তাহ আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতির পর এমন রক্তক্ষয়ী লড়াই নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।

কম্বোডিয়ার সিনেট প্রেসিডেন্ট হুন সেন বলেন, যুদ্ধবিরতির পর বেসামরিক নাগরিক সরিয়ে নেওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার বেশি অপেক্ষা করে তারা পাল্টা আক্রমণে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ফেসবুকে তিনি লিখেন, “কম্বোডিয়া শান্তি চায়, তবে ভূখণ্ড রক্ষায় পাল্টা আঘাত হানতেই হবে।” তিনি দাবি করেন, তাদের হাতে আধুনিক অস্ত্র ও শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।

অন্যদিকে থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল সুরাসান্ত কংসিরি বলেন, প্রয়োজন হলে সীমান্ত রক্ষায় পূর্ণ সামরিক শক্তি ব্যবহার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল আরও কঠোর ভাষায় জানান, এখন আর সংলাপ নয়। সংঘর্ষ থামাতে হলে কম্বোডিয়াকে শর্ত মেনেই এগোতে হবে।

থাই নৌবাহিনী দাবি করেছে, কম্বোডিয়ান বাহিনী ট্রাট প্রদেশের ভেতরে প্রবেশ করায় তারা অভিযান চালাচ্ছে। অন্যদিকে কম্বোডিয়া অভিযোগ করছে, থাইল্যান্ড বেসামরিক এলাকায় হামলা চালিয়ে মন্দিরসহ ঐতিহাসিক স্থাপনা বিধ্বস্ত করছে।

থাই সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, উবন রাতচাথানি, সিসাকেত, সুরিন ও বুরি রাম প্রদেশের প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষ যুদ্ধের কারণে আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। কম্বোডিয়ায় প্রেহ ভিহিয়ার, অডার মেনচে ও বানতেয় মেনচে তিন প্রদেশে অন্তত ২১ হাজারের বেশি মানুষ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, সোমবার নতুন করে গোলাগুলি শুরু হলে থাইল্যান্ড বিমান হামলা চালায়, যা ভোরে কম্বোডিয়ান গোলাবর্ষণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।

থাই–কাম্বোডিয়া উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে মালয়েশিয়া। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি মোহাম্মদ হাসান বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও মানুষের নিরাপত্তা মালয়েশিয়ার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

তিনি ২৮ জুলাইয়ের যুদ্ধবিরতিচুক্তির সপ্তম অনুচ্ছেদ মেনে বিরোধ সমাধানে তাৎক্ষণিক সংলাপে ফেরার পরামর্শ দেন।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহিমও সীমান্তে হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আসিয়ানের সদস্য হিসেবে উভয় দেশের সম্পর্ক ভেঙে পড়ার সুযোগ নেই। যুদ্ধ থামুক, বেসামরিক নাগরিক নিরাপদ থাকুক এবং সংলাপই হোক সমাধানের পথ।

দুই দেশের সীমান্ত বিরোধের সূচনা ২০ শতকের শুরুতে, ফরাসি ঔপনিবেশিক আমলে সীমান্ত মানচিত্র নির্ধারণকে কেন্দ্র করে। প্রায় ৮০০ কিমি সীমান্তব্যাপী বছরের পর বছর বহু সংঘর্ষ হয়েছে। চলতি বছরের মে–জুলাইয়ে উত্তেজনা বাড়ার পর পাঁচদিনের যুদ্ধে ৪৮ জন নিহত ও তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হলেও তা অনিশ্চিত গতিতে চলছিল। ল্যান্ডমাইন পুঁতে রাখা ও সীমানা লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়মিত উঠছিলই।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার