Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বিধি, গ্রেফতার হলেই জরিমানা ৫ হাজার ডলার

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:০৩ এএম

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বিধি, গ্রেফতার হলেই জরিমানা ৫ হাজার ডলার

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন মোকাবিলায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এ অবস্থানে নতুন সংযোজন হিসেবে অবৈধভাবে প্রবেশ বা অবস্থানরত ব্যক্তিদের জন্য মাথাপিছু ৫ হাজার ডলার জরিমানার বিধি কার্যকর করা হয়েছে। শুক্রবার মার্কিন সীমান্ত টহল বাহিনীর প্রধান মাইকেল ব্ল্যাঙ্কস নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ঘোষণায় এ তথ্য জানান।

ব্ল্যাঙ্কস জানান, মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রমের পর ধরা পড়া অভিবাসীসহ অতীতে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে এসে বৈধতা পাননি এমন সবাই এ জরিমানার আওতায় আসবেন। ১৪ বছর বা তার বেশি বয়সী যেকোনো অভিবাসীর ক্ষেত্রে এই জরিমানা প্রযোজ্য হবে।

এই নতুন বিধানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে চলতি বছরের জুনে কংগ্রেসে পাস হওয়া ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’-এ। পাশাপাশি পুরোনো আইনে উল্লেখ ছিল, অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করলে প্রতিদিন ৫০০ ডলার হারে জরিমানা দিতে হবে—যদি কেউ স্বেচ্ছায় দেশ ত্যাগের অঙ্গীকার করে তা না মানেন। সাম্প্রতিক সময়ে এ বিধানও ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির কারণে দৈনিক জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ৯৯৮ ডলার করা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, আগামী চার বছরে অবৈধ অভিবাসী গ্রেফতার ও বহিষ্কারের কাজে ১৭০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। সেই অর্থ সংগ্রহের অন্যতম উপায় হিসেবেই জরিমানার বিধান কঠোরভাবে কার্যকর করা হচ্ছে। দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ২১ হাজার ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মোট ৬.১ বিলিয়ন ডলারের জরিমানা নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে।

অন্যদিকে, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট দাবি করেছে, মাথাপিছু ১ হাজার ডলার করে প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়ার পর প্রায় ১৯ লাখ অবৈধ অভিবাসী স্বেচ্ছায় যুক্তরাষ্ট্র ছেড়েছেন। একই সময়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে ৫ লাখ ৯৩ হাজার অভিবাসীকে। এছাড়া ৫ লাখ ৭৯ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেফতারের পর বহিষ্কারের প্রক্রিয়া চলছে। এসব কারণে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে বলে দাবি প্রশাসনের।

সেনা সদস্যকে লক্ষ্য করে গুলি, নীতি আরও কঠোর

২৬ নভেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে টহলরত ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও উত্তেজিত করেছে। গুলিবিদ্ধ দুই সেনার একজন মারা গেছেন, অন্যজন হাসপাতালে। হামলাকারী রহমানউল্লাহ (২৯) আফগানিস্তানের নাগরিক; ২০২১ সালে তালেবান উত্থানের পর মার্কিন বাহিনীর সহযোগী হিসেবে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় দেওয়া হয়। ২০২৪ সালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন করলে বর্তমান প্রশাসন তা অনুমোদন করে। এই ঘটনার পর অবৈধ অভিবাসনবিরোধী নীতিতে আরও কঠোরতা এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আশ্রয় আবেদনেও ফি, বাড়ছে অনিশ্চয়তা

চলমান অভিবাসনবিরোধী অভিযানে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনে প্রথমবারের মতো ফি আরোপ করা হয়েছে। পূর্বে এ আবেদনে কোনো ফি লাগত না। একইভাবে, আবেদন পেন্ডিং থাকাকালে ওয়ার্ক পারমিটের ক্ষেত্রেও ফি নির্ধারণ করেছে প্রশাসন। এতে আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

এ ছাড়া বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ৯৭ জন অভিবাসন বিচারককে বরখাস্ত করা হয়েছে। নতুন বিচারক নিয়োগ না হওয়ায় বিচারপ্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ধীর হয়ে পড়েছে। পারিবারিক কোটায় ভিসার আবেদনকারীদের কেউ কেউ ১৮ বছরেও ইন্টারভিউয়ের তারিখ পাচ্ছেন না। বৈধ অভিবাসী, গ্রিন কার্ডধারী এবং কাগজপত্রহীন—সবার মধ্যেই তৈরি হয়েছে চরম উদ্বেগ।

অভিবাসন–আইন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, গ্রিন কার্ড বা বৈধতার যেকোনো নথি সবসময় সাথে রাখতে হবে। যাদের বৈধতার আবেদন চলমান, তাদের নিজ আইনজীবীর যোগাযোগ নম্বরও কাছে রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিবাসী কমিউনিটিতে বর্তমান নীতিমালাকে ঘিরে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা ক্রমেই বাড়ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার