Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

শীর্ষ ৩৮ ধনী দেশের অভিবাসনে বড় পরিবর্তন, গবেষণায় উঠে এল কারণ

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩৮ এএম

শীর্ষ ৩৮ ধনী দেশের অভিবাসনে বড় পরিবর্তন, গবেষণায় উঠে এল কারণ

ধনী দেশগুলোর শ্রমবাজারে মন্দা, কঠোর ভিসানীতি এবং ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাবে ২০২৪ সালে কর্মসংস্থানভিত্তিক আন্তর্জাতিক অভিবাসন ২১ শতাংশ (এক-পঞ্চমাংশের বেশি) কমে গেছে বলে জানিয়েছে প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ওইসিডি। ৩৮টি উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির এই সংস্থার নতুন তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে স্থায়ী কাজের উদ্দেশ্যে অভিবাসন কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ লাখ ৩৪ হাজারে-যা কোভিড-পরবর্তী ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতিকে থমকে দিয়েছে। 

ওইসিডি’র আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিভাগের প্রধান জ্যাঁ-ক্রিস্তফ দ্যুমঁ বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ‘কম অনুকূল’ হওয়ায় শ্রমভিত্তিক অভিবাসন কমার প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৫ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে ২ দশমিক ৮ শতাংশে নামানোকে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধ বৈশ্বিক বাণিজ্য ও শ্রমবাজারকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে।

যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে কঠোর ভিসানীতি অভিবাসন কমায় সরাসরি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাজ্যে ২০২৪ সালে নেট মাইগ্রেশন ৪০ শতাংশেরও বেশি কমেছে। এমনকি যেসব ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশ ভিসা কাঠামো পরিবর্তন করেনি, সেখানেও শ্রমভিত্তিক অভিবাসন ২০১৯ সালের (করোনা পূর্ববর্তী) নিচে নেমে গেছে। দ্যুমঁ জানান, ইউক্রেন থেকে আসা ৫১ লাখ আশ্রয়প্রার্থী অনেক ইউরোপীয় দেশে শ্রম ঘাটতি পূরণ করায় বিদেশি কর্মীর চাহিদা কমেছে। 

শিক্ষা সংক্রান্ত অভিবাসনেও পতন হয়েছে। ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ওইসিডিভুক্ত সদস্যদেশে আন্তর্জাতিক ছাত্রসংখ্যা কমেছে ১৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার কঠোর ভিসানীতি-বিশেষত ‘জালিয়াতি রোধ’ ও আবাসন সংকটের কারণে-এই প্রবণতা তীব্র হয়েছে। তবে মানবিক কারণভিত্তিক অভিবাসন বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় সোমবার (১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনে এমন সব তথ্য উঠে এসেছে। 

যুক্তরাষ্ট্রে বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিকে আশ্রয় আবেদন দ্রুত বেড়েছে এবং যুক্তরাজ্যে সাম্প্রতিক কয়েক মাস ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে ছোট নৌকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। ফলে শ্রমভিত্তিক ও শিক্ষাভিত্তিক অভিবাসন কমলেও ২০২৪ সালে মোট স্থায়ী অভিবাসন মাত্র ৪ শতাংশ কমেছে। 

ওইসিডিভুক্ত দেশে ২০২৪ সালে নতুন আসা মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ লাখে-যা মহামারি-পূর্ব সময়ের চেয়ে ১৫ শতাংশ বেশি।

২০২৩ সালে রেকর্ড ৬৫ লাখ মানুষ ওইসিডি দেশগুলোতে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছে। কানাডা, ফ্রান্স, জাপানসহ এক-তৃতীয়াংশ সদস্যদেশে শরণার্থীবহির্ভূত অভিবাসন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে ১২ লাখ বৈধ স্থায়ী অভিবাসী পৌঁছায় এবং ট্রাম্প ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসন কমানোকে প্রধান ইস্যু করেন। যদিও গোল্ডম্যান স্যাকসের গবেষণায় দেখা যায়-কানাডা, সুইডেন, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের কর্মসংস্থান বেড়ে যাওয়ার পেছনে অভিবাসীদের ভূমিকা অন্যতম। 

ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দ্যুমঁ বলেন, ২০২৫ সালে অভিবাসন প্রবাহ কিছুটা কমলেও তা ঐতিহাসিকভাবে বেশিই থাকবে। যুক্তরাজ্যে বিদেশি শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হার ‘৭৬ শতাংশ’, যা স্থানীয়দের তুলনায় সামান্য বেশি। তার মতে, উচ্চ দক্ষতার ভিসা কর্মসূচি এবং নিম্নদক্ষতার সেক্টরে স্থানীয় কর্মীর অনীহাই এই হারকে উঁচু রাখছে। 

আইএলও’র অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ফাবিওলা মিয়েরেস বলেন, ‘কৃষি, নির্মাণ ও স্বাস্থ্যখাত-যেখানে অভিবাসীরা বেশি কাজ করেন-সেসব খাতে স্থানীয় শ্রম ঘাটতির মূল কারণ নিয়ে বিশ্বকে নতুন করে ভাবতে হবে।’ তিনি মনে করেন, নিম্ন প্রবাহের মধ্যেও অভিবাসনবিষয়ক রাজনীতি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে উত্তেজনা অব্যাহত রাখবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার