ইমিগ্রেশনবান্ধব নিউইয়র্কের ৮ বিচারক বরখাস্ত করলো ট্রাম্প প্রশাসন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৪৪ এএম
নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনের ফেডারেল প্লাজার ৮ জন ইমিগ্রেশন বিচারককে একসাথে বরখাস্ত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। সোমবার হঠাৎ করেই একসাথে সহকারী প্রধান বিচারক আমিয়েনা এ. খানসহ আরো ৭ জনকে বরখাস্তের নির্দেশ পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ থেকে । বছরের পুরো সময় জুড়ে দেশে ইমিগ্রেশন কোর্টে যে অস্থিরতা চলছে, এটি তারই সর্বশেষ ধাপ। প্রশাসনের লক্ষ্য দ্রুত ডিপোর্টেশন প্রক্রিয়া বাড়ানো।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইমিগ্রেশন জাজেস এবং বিচার বিভাগের সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব বিচারক অভিবাসীদের প্রতি তুলনামূলক সহানুভূতিশীল ছিলেন। এজন্য প্রশাসন তাদেরই টার্গেট করে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে বিচার বিভাগ বরখাস্তের বিষয়ে কিছু জানায়নি। আমিয়না খান ছাড়া বরখাস্ত বাকি ৭ জনের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ৩৪ জন বিচারক ফেডারেল প্লাজায় অভিবাসন মামলা পর্যালোচনায় দায়িত্বরত ছিলেন। ৮ জনকে একসাথে বরখাস্ত করায় বিচারক সংকটে মামলা জট ও অভিবাসন প্রক্রিয়ায় ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
এদিকে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইমিগ্রেশন কোর্ট থেকে সর্বমোট ৯০ জন বিচারক বরখাস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নিউইয়র্কের ছিলেন ৬ জন বিচারক।
সারাদেশে মোট প্রায় ৬০০ ইমিগ্রেশন জজ কর্মরত থাকলেও, বরখাস্ত হওয়া ৯০ জনের মধ্যে মাত্র ৩৬ জনের জায়গায় নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সাবেক ইমিগ্রেশন জজ অলিভিয়া ক্যাসিন বলেন, ২৬ ফেডারেল প্লাজার ৩৪ জন জজের মধ্যে একদিনে আটজনকে বাদ দেওয়াকে উন্মোচন মনে হচ্ছে। কোর্টটি কার্যত খালি করে দেওয়া হয়েছে। এটা যেন সোমবার বিকেলের একটি গণছাঁটাই।
ইমিগ্রেশন জজ তদারককারী বিচার বিভাগীয় দপ্তর বরখাস্তের কারণ প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে আগে বরখাস্ত হওয়া কয়েকজন জজ অভিযোগ করেছেন, প্রশাসন অতিরিক্ত কোমল বা আশ্রয়প্রার্থী বান্ধব বিচারকদের টার্গেট করছে এবং একটি ভয়ভীতি পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে।
আগে বরখাস্ত হওয়া জজ কারমেন মারিয়া রে কালদাস বলেন, এখন সবাই ভাবছে পরবর্তী জন কে। আর এই উদ্বেগ তাদের নিরপেক্ষভাবে বিচার কার্য চালানোর ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করছে। তিনি ২০২২ সালে ইমিগ্রেশন জজ হওয়ার আগে অভিবাসী অধিকারকর্মী ছিলেন, যা নিয়ে রিপাবলিকানদের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন।
বরখাস্ত কার্যক্রমটি এমন সময়ে ঘটেছে যখন সপ্তাহান্তে লোয়ার ম্যানহাটনে প্রায় ২০০ জন বিক্ষোভকারী সম্ভাব্য একটি ICE অভিযানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, যা ফেডারেল কর্মকর্তাদের ক্ষুব্ধ করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন নিউইয়র্কে ডিপোর্টেশন জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং শহরের সাঙ্কচুয়ারি নীতিকে বারবার সমালোচনা করে আসছে।
হোয়াইট হাউসের কাছে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে গুলির ঘটনায় অভিযুক্ত আফগান নাগরিকের বিষয়ে ট্রাম্প আবারও বলেছেন, তিনি সব তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে অভিবাসন বন্ধ করতে চান।
২৬ ফেডারেল প্লাজার কোর্টরুম ও আটক সেলগুলো কয়েক মাস ধরে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির প্রতীক হয়ে উঠেছে। নিয়মিত চেক-ইন করতে আসা অভিবাসীদের গ্রেপ্তার, জনতার প্রতিবাদ, সাংবাদিক আহত হওয়া—সব মিলিয়ে কোর্টের বাইরে প্রায়ই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
জজ ক্যাসিন শেষে বলেন, বরখাস্ত হওয়া জজরা আইন মেনে চলেছেন, প্রতিটি পক্ষকে সমান সময় দিয়েছেন এবং স্বাধীন বিচারকের মতো কাজ করেছেন। তাদের সরিয়ে দেওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।