জন্ম সূত্রে নাগরিকত্ব মামলার যুক্তি শুনতে রাজি সর্বোচ্চ আদালত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৪ এএম
যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া বহিরাগত দম্পতির শিশুদের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নিয়ে মামলার যুক্তি শুনতে রাজি হয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
চলতি বছর জানুয়ারিতে প্রথম দিনেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে থাকা ব্যক্তিদের সন্তানদের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব দেওয়ার নিয়ম বাতিল করেন। তবে একাধিক নিম্ন আদালত সে সিদ্ধান্ত স্থগিত করে।
সর্বোচ্চ আদালতে কখন শুনানি হবে তা এখনও নির্ধারিত হয়নি, এবং রায় পেতে আরও কয়েক মাস সময় লাগবে।
আদালতের সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে, একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্বের ধারণাও বদলে যেতে পারে।
প্রায় ১৬০ বছর ধরে মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী বলে আসছে, কূটনীতিবিদ এবং বিদেশি সেনাসদস্যদের সন্তান বাদে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী যে কেউ মার্কিন নাগরিক।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী, যারা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করছে বা অস্থায়ী ভিসায় এসেছে, তাদের সন্তানরা নাগরিকত্ব পাবে না। এটি অভিবাসন ব্যবস্থায় সংস্কার আনা এবং জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলার বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ।
প্রশাসনের দাবি, ১৪তম সংশোধনী এমন শিশুদের বাদ দেয় যাদের বাবা–মা স্থায়ী বা বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকে না।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের (আকলু) জাতীয় আইনি পরিচালক সিসিলিয়া ওয়াং বলেন, কোনও প্রেসিডেন্টই ১৪তম সংশোধনীর জন্মগত নাগরিকত্বের মৌলিক নিশ্চয়তা পরিবর্তন করতে পারেন না। ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এটি আইন এবং জাতীয় ঐতিহ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে জন্ম নেওয়া প্রত্যেকে জন্মসূত্রে নাগরিক। আমরা এই বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে এবার চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি করার অপেক্ষায় আছি।
বিশ্বে প্রায় ৩০টি দেশ—মূলত আমেরিকা মহাদেশে— দেশের মাটিতে জন্মালে স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব দেয়।
ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করার পর কয়েকটি ফেডারেল আদালত রায় দেয়, ওই আদেশ সংবিধানবিরোধী। দুইটি ফেডারেল সার্কিট কোর্টও নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে।
এরপর ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান। সুপ্রিম কোর্ট জুনে রায় দেয়, নিম্ন আদালতগুলোর দেওয়া নিষেধাজ্ঞা তাদের এখতিয়ারের বাইরে ছিল। তবে আদালত জন্মগত নাগরিকত্বের বৈধতা বিষয়ে তখন কোনও মন্তব্য করেনি।
মার্কিন গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে মুক্ত আফ্রিকান–আমেরিকানদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে ১৪তম সংশোধনী পাস হয়।
মার্কিন সলিসিটর জেনারেল ডি জন সাওয়ার যুক্তি দিয়েছেন, সংশোধনীটির উদ্দেশ্য ছিল মুক্ত দাস ও তাদের সন্তানদের নাগরিকত্ব দেওয়া, অস্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিদেশি বা অবৈধভাবে থাকা ব্যক্তির সন্তানদের নয়।
তার দাবি, জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের প্রচলিত ব্যাখ্যা “ভুল ধারণা”, এবং এর “বিধ্বংসী পরিণতি” হয়েছে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অননুমোদিত অভিবাসী বাবা–মায়ের সন্তান জন্মেছিল প্রায় আড়াই লাখ। ২০২২ সালে এমন বাবা–মায়ের সন্তান নাগরিকের সংখ্যা ছিল ১২ লাখ।
মে মাসে মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট ও পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় বলা হয়, জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিল হলে ২০৪৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অননুমোদিত জনসংখ্যা আরও ২৭ লাখ এবং ২০৭৫ সালের মধ্যে ৫৪ লাখ বাড়তে পারে।
সূত্র: বিবিসি