ব্রিটেনে ড্রাইভিং টেস্ট : পাঁচশ পাউন্ডে বিক্রি হচ্ছে পরীক্ষার সিট
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:২২ এএম
যুক্তরাজ্যের ড্রাইভিং টেস্ট ব্যবস্থা নিয়ে চলছে এক বিশাল জালিয়াতি যেখানে অসাধু প্রশিক্ষকরা টাকার বিনিময়ে তাদের লগইন তথ্য তুলে দিচ্ছেন দালালদের হাতে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে দালাল চক্র সরকারি পরীক্ষার স্লটগুলো আগেভাগেই দখল করে চড়া দামে বিক্রি করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে। বিবিসি-র এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই ভয়াবহ তথ্য যেখানে নামমাত্র মূল্যের একটি স্লট পেতে এখন গুনতে হচ্ছে প্রায় ৫০০ পাউন্ড। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী যারা মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না।
লন্ডন, বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টারের মতো বড় শহরগুলোতে সক্রিয় রয়েছে এই দালাল চক্র। অনুসন্ধানে অনিল আহমেদ নামের এক ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে, যিনি ছদ্মনামে প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে লগইন তথ্য কেনেন। তিনি দাবি করেন, প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুজন করে প্রশিক্ষক তার সাথে যুক্ত হন এবং তাদের একাউন্ট ভাড়া বাবদ মাসে ২৫০ পাউন্ড পর্যন্ত দেওয়া হয়। এই একাউন্ট ব্যবহার করে দালালরা সরকারি সিস্টেম থেকে সব সিট বুক করে রাখে।
সরকারিভাবে ব্রিটেনে একটি ড্রাইভিং টেস্টের খরচ মাত্র ৬২ থেকে ৭৫ পাউন্ড, কিন্তু দালালরা হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে তা ৩০০ থেকে ৫০০ পাউন্ডে বিক্রি করছে। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ছয় লাখ ৪২ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছেন। সাধারণ নিয়মে একটি পরীক্ষার তারিখ পেতে গড়ে ২১ সপ্তাহ বা প্রায় পাঁচ মাস সময় লাগছে, যা শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছে দালালদের কাছে যেতে।
ইয়ান পিন্টো নামের এক অভিভাবক জানান, তার সন্তানরা গত দুই বছর ধরে চেষ্টা করেও কোনো সিট পাচ্ছে না, অথচ দালালরা টাকার বিনিময়ে ঠিকই সিট দিচ্ছে। পূর্ব লন্ডনের গুডমেয়াস সেন্টারের ছাত্র মো. রহমত উল্লাহ মেহেদী বলেন, উপায় না দেখে তিনি ১২০ পাউন্ড বেশি দিয়ে দালালদের কাছ থেকে স্লট কিনতে বাধ্য হয়েছেন। ড্রাইভিং প্রশিক্ষক জ্যাগ সিং ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ফেল করলে কান্নায় ভেঙে পড়ে কারণ পুনরায় ৫০০ পাউন্ড খরচ করার সামর্থ্য তাদের নেই।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্রিটেনের পরিবহন মন্ত্রী হেইডি আলেকজান্ডার নতুন নিয়ম আনার ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী বসন্তকাল থেকে আর কোনো প্রশিক্ষক বা তৃতীয় পক্ষ শিক্ষার্থীদের হয়ে টেস্ট বুক করতে পারবে না, শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরাই নিজেদের স্লট বুক করতে পারবেন। ডিভিএসএ জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই নিয়মভঙ্গের অভিযোগে শত শত একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে এবং এই চক্র ভাঙতে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।