Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ভারতে পুতিনের নৈশভোজে নিরামিষ, নেই মাংস

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫১ এএম

ভারতে পুতিনের নৈশভোজে নিরামিষ, নেই মাংস

ভারতে ৪-৫ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় সফর ও ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভ্লাদিমির পুতিনের আগমনকে ঘিরে নজর এখন মূলত কূটনৈতিক আলোচনায়। তবে এর আড়ালে নীরবে চলে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি, রাশিয়ান প্রেসিডেন্টের খাবারের নিরাপত্তা ও সরবরাহ ব্যবস্থা।

বেশিরভাগ রাষ্ট্রনেতার মতো সরকারি ভোজে বসে যে কেউ খাবার খান, পুতিনের ক্ষেত্রে চিত্রটি ভিন্ন। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে কড়াভাবে নিয়ন্ত্রিত খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাগুলোর একটি নিয়ে ভ্রমণ করেন। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশ সফরে তার খাবার প্রস্তুত করেন রাশিয়া থেকে সঙ্গে আসা একটি বিশেষায়িত দল। উপকরণ থেকে পরিবেশন, প্রতিটি ধাপই আগেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, যেন কোনো ধরনের ঝুঁকি না থাকে। কয়েক দশক ধরে এমন সতর্কতা কঠোরভাবে অনুসরণ করে আসছে মস্কো।

সফরে একটি আনুষ্ঠানিক নৈশভোজের আয়োজন থাকলেও পুতিন ঠিক কী খাবেন, ভারতীয় কোনো পদ তিনি গ্রহণ করবেন কি না- এসব নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কারণ খাবারের ক্ষেত্রেও তার ব্যক্তিগত পছন্দ, শৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা প্রটোকল এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পুতিন ভ্রমণে গেলে প্রায় সামরিক শুদ্ধতায় তার খাদ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়। তিনি সাধারণত হোটেল বা আয়োজক দেশের রাঁধুনিদের তৈরি খাবার খান না। প্রশিক্ষিত রুশ রাঁধুনি ও সহায়তা কর্মীরা সবসময় তার সঙ্গে থাকেন। একটি মোবাইল ফুড-টেস্টিং ল্যাবও থাকে বলে জানা যায়। নির্দিষ্ট নিরাপদ স্থানে স্থাপিত রান্নাঘরে খাবার রান্না হয় এবং পরিবেশনের আগে তা পরীক্ষা করেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি রাষ্ট্রীয় ভোজেও তিনি যে খাবার পরিবেশন পান, তা প্রায়ই তার নিজস্ব দলই প্রস্তুত করে থাকে।

নিরাপত্তা ঘিরে এত সতর্কতা থাকলেও পুতিনের খাদ্যাভ্যাস বেশ সাদামাটা। তিনি ভারী বা জটিল খাবারের বদলে সহজ, স্বাস্থ্যকর খাবার পছন্দ করেন। দিনের শুরুতে সাধারণত টোরোগ (রাশিয়ান কটেজ পনির), পোরিজ, মধু, ফলের রস এবং কখনো কাঁচা কোয়েলের ডিম বা অমলেট থাকছে তার পছন্দের তালিকায়। উচ্চ প্রোটিন ও কম চিনিযুক্ত খাবারের প্রতি তার আগ্রহ বেশি।

দুপুর বা রাতের খাবারে লাল মাংসের তুলনায় তিনি মাছ বেশি পছন্দ করেন, তাজা বা ধূমায়িত- এমন খাবারই তার তালিকায় থাকে। ভেড়ার মাংসও খান, তবে পরিমাণে সংযত। সাধারণত টমেটো-শসা অন্যান্য সবজি দিয়ে তৈরি সরল সালাদ থাকে তার প্লেটে। মাখন, ভারী বেকারি আইটেম বা চিনি- সমৃদ্ধ ডেজার্ট তিনি এড়িয়ে চলেন। বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া বিলাসী খাবারের প্রতি তার আগ্রহ নেই।

পানীয়তেও সংযমে আছেন পুতিন- তাজা রস, হারবাল ড্রিংক, কেফির, এবং মাঝে মাঝে রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী বিটরুট-হর্সরাডিশ মিশ্রিত পানীয় তার পছন্দের তালিকায়। তবে পেস্তা আইসক্রিমের প্রতি তার একটি বিশেষ দুর্বলতা আছে বলে জানা যায়।

তার খাদ্যাভ্যাসও তার রাজনৈতিক ভাবমূর্তির মতোই নিয়ন্ত্রিত, সুশৃঙ্খল এবং ঐতিহ্য-নির্ভর। পুষ্টি, প্রোটিন ও সরলতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া তাকে দীর্ঘ সময় কাজ করার সক্ষমতাও জোগায়। একইসঙ্গে খাবারকে ঘিরে যে কঠোর নিরাপত্তা, তা শুধু হুমকি মোকাবেলার কৌশল নয়; বরং একটি সুপ্রতিষ্ঠিত রুটিন ও পরিচিত সিস্টেমের প্রতি তার অনুরাগকেও ইঙ্গিত করে।

এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৪৮ ঘণ্টার সফরে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে বিশাল নৈশভোজের আয়োজন করে নয়াদিল্লি। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওই নৈশভোজে থাকা খাবারের মেন্যুর ছবি ও খাবারের নাম প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, পুতিনের খাবারে কোনো ধরনের মাংস রাখেনি ভারত। যদিও দেশটিতে মাংস খাওয়ার প্রচলন আছে। এছাড়া ভারত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাংস রপ্তানি করে।

পুতিনের জন্য আয়োজনে যে যে খাবার ছিল-

ঝোল মোমো

মুরুঙ্গলাই চারু স্যুপ (বা দক্ষিণ ভারতীয় রসম স্যুপ)

গুচি দুন চেতিন (বা আখরোট চাটনি সহ মাশরুমের পুর)

কালো ছোলার শিকমপুরী কাবাব

জাফরানি পনীর রোল

পালং মেথি মটর শাকের তরকারি

তন্দুরি পুর ভরা আলু

আচারি বেগুন

হলুদ ডাল ভাজা (বা মসুর/মুগ ডাল ভাজা)

বাদাম ও জাফরান পোলাও

লাচ্ছা পরোটা

মগজ নান

সাতানাজ রুটি

মিসি রুটি

বিস্কুটি রুটি

বাদামের হালুয়া

কেশর-পেস্তা কুলফি

গুড়ের সন্দেশ

মুরুক্কু

ডাল ভাজা

নানান ধরনের আচার ও সালাদ

ফলের ফ্রেশ জুস (যেমন: ডালিম, কমলা, গাজর ও আদার রস)

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার