Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

৬০ লাখে একজন মানুষের শরীরেই মিলছে সোনার চেয়েও দামী রক্ত!

Icon

লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৫১ এএম

৬০ লাখে একজন মানুষের শরীরেই মিলছে সোনার চেয়েও দামী রক্ত!

আমাদের কারও কখনো দুর্ঘটনা, গুরুতর আঘাত কিংবা বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের কারণে রক্তের প্রয়োজন হলে আমরা অন্যের রক্তের ওপর নির্ভর করি। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছেন, যাদের ক্ষেত্রে এই প্রচলিত রক্তদান ব্যবস্থাও কার্যকর নয়। কারণ তাদের শরীরে থাকা রক্ত অত্যন্ত বিরল যা পরিচিত ‘গোল্ডেন ব্লাড’ নামে।

বিশ্বে প্রতি ৬০ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র একজনের শরীরে পাওয়া যায় এই বিরল রক্ত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় আরএইচ নাল (Rh Null) রক্ত। এই রক্তে কোনো ধরনের আরএইচ অ্যান্টিজেনই নেই। এখন পর্যন্ত বিশ্বে এই রক্ত শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৫০ জন মানুষের শরীরে।

এই বিরল রক্তধারীদের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো তারা অন্য কোনো রক্ত গ্রহণ করতে পারেন না। ফলে দুর্ঘটনা বা অস্ত্রোপচারের সময় তাদের জন্য উপযুক্ত রক্ত পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। সে কারণেই গবেষকরা এখন ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিমভাবে এই রক্ত তৈরি করার চেষ্টা করছেন।

কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই রক্ত?

মানবদেহে রক্তের ধরন নির্ধারিত হয় লাল রক্তকণিকার উপরিভাগে থাকা নির্দিষ্ট কিছু উপাদান বা অ্যান্টিজেনের ওপর। কারও শরীরে ভুল অ্যান্টিজেনযুক্ত রক্ত প্রবেশ করলে শরীর তা বিদেশি বস্তু হিসেবে শনাক্ত করে আক্রমণ করে, যা অনেক সময় প্রাণঘাতী হতে পারে।

সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এমন দুটি ব্লাড গ্রুপ সিস্টেম হলো—

এবিও (ABO)

রেসাস বা আরএইচ (Rh)

এ গ্রুপে থাকে ‘এ’ অ্যান্টিজেন, বি গ্রুপে ‘বি’ অ্যান্টিজেন, এবি গ্রুপে দুটোই এবং ও গ্রুপে কোনো অ্যান্টিজেনই থাকে না। প্রতিটি গ্রুপ আবার পজিটিভ বা নেগেটিভ হতে পারে।

কিন্তু আরএইচ নাল রক্তে ৫০টি আরএইচ অ্যান্টিজেনের একটিও নেই। ফলে এই রক্ত প্রায় সব মানুষের শরীরে দেওয়া সম্ভব, কিন্তু এ রক্তধারীরা অন্য কারও রক্ত নিতে পারেন না। এখানেই এই রক্তের মূল্য অপরিসীম। এ কারণেই চিকিৎসা ও গবেষণা মহলে একে ‘গোল্ডেন ব্লাড’ বলা হয়।

জিনগত পরিবর্তনেই সৃষ্টি এই বিরল রক্ত

সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে, আরএইচ নাল রক্ত তৈরি হয় একটি বিরল জিনগত রূপান্তরের কারণে। এতে লাল রক্তকণিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন আরএইচ অ্যাসোসিয়েটেড গ্লাইকোপ্রোটিন (RhAG) ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ল্যাবে কৃত্রিম গোল্ডেন ব্লাড তৈরির সাফল্য

২০১৮ সালে ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টোয়ে স্কারলেট ও তার গবেষক দল ল্যাবরেটরিতে প্রথমবারের মতো আরএইচ নাল রক্তের অনুকরণ তৈরি করতে সক্ষম হন। তারা সিআরআইএসপিআর-ক্যাস৯ (CRISPR-Cas9) প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবিও, আরএইচ, কেল, ডাফি ও জিপিবি—এই পাঁচটি প্রধান অ্যান্টিজেন সংশ্লিষ্ট জিন নিষ্ক্রিয় করেন।

এর ফলে তৈরি হয় এমন লাল রক্তকণিকা, যা সাধারণ রক্তের সঙ্গে যেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ, তেমনি বিরল আরএইচ নাল ও বোম্বে ফেনোটাইপ রক্তের সঙ্গেও মানানসই।

মানবদেহে কৃত্রিম রক্ত পরীক্ষার যুগে প্রবেশ

বর্তমানে অধ্যাপক টোয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রক্তের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ‘রিস্টোর’-এর। এই গবেষণায় দাতার স্টেমসেল থেকে তৈরি ল্যাব-উৎপাদিত লোহিত কণিকা স্বেচ্ছাসেবীদের শরীরে পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হচ্ছে। তবে এতে এখনো জিন এডিটিং ব্যবহার করা হয়নি।

এখনও দীর্ঘ পথ বাকি

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বৃহৎ পরিসরে মানব ব্যবহারযোগ্য কৃত্রিম রক্ত তৈরি করতে এখনো বহু গবেষণা, পরীক্ষা ও অনুমোদনের ধাপ পেরোতে হবে। জিন এডিটিং প্রযুক্তি বহু দেশেই এখনো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত ও বিতর্কিত।

তবে বিজ্ঞানীদের আশা আগামী দিনে বিরল রক্তের সংকট দূর করতে ল্যাবরেটরি-উৎপাদিত এই রক্তই হতে পারে মানবজাতির সবচেয়ে বড় ভরসা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার