আমেরিকায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় যুক্ত হতে পারে আরও ১৩ দেশ
বাংলাদেশিদের জন্য কী বার্তা?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩৬ এএম
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যের ওপর সাম্প্রতিক গুলিবর্ষণের ঘটনার জের ধরে অভিবাসন ও ভ্রমণ নীতিতে নজিরবিহীন কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ বা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ১৯টি দেশের নাগরিকদের নাগরিকত্ব ও গ্রিন কার্ড কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করেছে এবং এই তালিকা বাড়িয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩২টি দেশে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ডের ওপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন আফগান নাগরিক, যিনি ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। এই ঘটনার পর ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, বর্তমান যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া বা ‘ভেটিং সিস্টেম’ যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। তাই জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো থেকে লোক আসা বন্ধ বা সীমিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার তালিকাটি দুই ভাগে বিভক্ত হতে পারে।
ক. বর্তমানে কার্যক্রম স্থগিত রাখা ১৯টি দেশ: ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ নির্দেশনার মাধ্যমে নিচের দেশগুলোর নাগরিকদের অভিবাসন সুবিধা (যেমন—স্থায়ী বসবাসের অনুমতি বা গ্রিন কার্ড, রাজনৈতিক আশ্রয় এবং নাগরিকত্ব প্রদান) সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে:
এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য: আফগানিস্তান, ইরান, ইয়েমেন, সিরিয়া, উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমার, কিরগিজস্তান।
আফ্রিকা: সুদান, সোমালিয়া, লিবিয়া, শাদ, ইরিত্রিয়া, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া।
অন্যান্য: ভেনেজুয়েলা, হাইতি, কিউবা, নিকারাগুয়া।
খ. সম্ভাব্য নতুন যেসব দেশ যুক্ত হতে পারে: হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বা স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগের পরামর্শে এই তালিকায় আরও ১০-১২টি দেশ যুক্ত করে মোট ৩০ বা ৩২টি দেশে উন্নীত করার কথা ভাবা হচ্ছে। যদিও চূড়ান্ত তালিকা এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে মার্কিন গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকদের মতে নিচের দেশগুলো প্রবল ঝুঁকির মুখে রয়েছে:
আফ্রিকা অঞ্চল: মিশর, ইথিওপিয়া, ঘানা, কেনিয়া, ক্যামেরুন, কঙ্গো, মালি, মৌরিতানিয়া।
এশিয়া অঞ্চল: পাকিস্তানের নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া কম্বোডিয়া এবং তাজিকিস্তানের মতো মধ্য এশিয়ার কিছু দেশও তালিকায় থাকতে পারে।
নিষেধাজ্ঞার ধরন কেমন হবে?
নতুন এই নীতিমালার আওতায় তিন ধরনের বিধিনিষেধ আসতে পারে:
পূর্ণাঙ্গ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা: নির্দিষ্ট দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
অভিবাসন স্থগিতাদেশ: যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করছেন কিংবা যারা ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন কিন্তু গ্রিন কার্ড বা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন, তাদের আবেদন প্রক্রিয়া অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা।
চরম যাচাই-বাছাই (এক্সট্রিম ভেটিং): ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সময় নেওয়া এবং আবেদনকারীর অতীত ইতিহাস, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা তন্ন তন্ন করে খোঁজা।
বাংলাদেশের ওপর কি প্রভাব পড়বে?
এখন পর্যন্ত পাওয়া খবরে বাংলাদেশের নাম সরাসরি “নিষিদ্ধ” বা “কালো তালিকাভুক্ত” দেশের মধ্যে নেই। তবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও পাকিস্তানের নাম আলোচনায় থাকায় এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশিদের জন্যও কিছু পরোক্ষ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে:
ভিসা প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা: বাংলাদেশ থেকে যারা শিক্ষার্থী, ভ্রমণ কিংবা পারিবারিক ভিসার জন্য আবেদন করবেন, তাদের আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা।
প্রশাসনিক বিলম্ব: নিরাপত্তা ছাড়পত্র বা ‘সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স’-এর জন্য ভিসা প্রসেসিংয়ের সময় বেড়ে যেতে পারে।
নজরদারি বৃদ্ধি: যারা রাজনৈতিক আশ্রয় বা ‘অ্যাসাইলাম’-এর আবেদন করবেন, তাদের ক্ষেত্রে নিয়মকানুন অত্যন্ত কঠোর করা হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন দেশগুলোর চূড়ান্ত তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে পারে। অভিবাসন আইনজীবীরা পরামর্শ দিচ্ছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রে আছেন এবং যাদের অভিবাসন সংক্রান্ত কাগজপত্র প্রক্রিয়াধীন, তারা যেন কোনোভাবেই আইনি জটিলতায় না জড়ান এবং নিজেদের নথিপত্র হালনাগাদ রাখেন।
পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তনশীল, তাই পরবর্তী সরকারি ঘোষণার দিকে নজর রাখা জরুরি।