যে কারণে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ-পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ভর্তি বন্ধ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১২ পিএম
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ভর্তির আবেদন স্থগিত বা বাতিল করছে। দেশটির অভিবাসন নীতি আরও কঠোর হওয়ার পর ভিসার অপব্যবহারজনিত উদ্বেগের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে ‘ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’ জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যের অন্তত ৯টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘উচ্চ ঝুঁকির’ দেশ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চাইছে, প্রকৃত শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিশ্চিত করা হোক। এর পেছনে মূল কারণ, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন বৃদ্ধি পাওয়া। সীমান্ত নিরাপত্তামন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা ইগল সম্প্রতি সতর্ক করে বলেছেন, ভিসাব্যবস্থাকে ব্রিটেনে ‘স্থায়ী থাকার পেছনের দরজা’ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
বিশেষ করে নিম্নলিখিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিবর্তন এসেছে— ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার: পাকিস্তান থেকে সব ধরনের ভর্তি আগামী শরৎকাল পর্যন্ত স্থগিত। ইউনিভার্সিটি অব উলভারহ্যাম্পটন: বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে স্নাতক শিক্ষার্থীদের আবেদন বন্ধ। ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট লন্ডন:পাকিস্তান থেকে ভর্তি স্থগিত। এছাড়া লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সান্ডারল্যান্ড, অক্সফোর্ড ব্রুকস, বিপিপি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
কোথাও সরাসরি নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও শিক্ষার্থীরা ভর্তি নিশ্চয়তাপত্র (CAS লেটার) পাচ্ছেন না বা আবেদনই গ্রহণ করা হচ্ছে না। উদাহরণস্বরূপ, সান্ডারল্যান্ড ও কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভর্তির আবেদন স্থগিত করেছে। হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয় আগামী সেপ্টেম্বরে পর্যন্ত এই দুই দেশের শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখবে। লন্ডন মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, তাদের ভিসা আবেদন নাকচ হওয়া শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশ বাংলাদেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন ভিসা কমপ্লায়েন্স নীতি, যা সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভিসা স্পনসর করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রতিবছর ‘বেসিক কমপ্লায়েন্স অ্যাসেসমেন্ট’ (BCA) উত্তীর্ণ হতে হয়। এখানে তিনটি সূচক দেখা হয়—ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার, কোর্সে উপস্থিতি না থাকা, এবং মাঝপথে কোর্স ত্যাগের হার। নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ভিসা আবেদনের ৫ শতাংশের বেশি বাতিল হলে তাদের স্পনসর লাইসেন্সের মান অবনমন, ভর্তি স্থগিত বা লাইসেন্স বাতিলের ঝুঁকি থাকে। এর আগে সীমা ছিল ১০ শতাংশ।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা আবেদন বাতিলের হার ২২ শতাংশ এবং পাকিস্তানি শিক্ষার্থীদের ১৮ শতাংশ। হোম অফিস ২৩,৩৬৩টি আবেদন নাকচ করেছে, যার অর্ধেক বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের। এছাড়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানি নাগরিকদের আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনও বেড়েছে।
লাহোরভিত্তিক অ্যাডভান্স অ্যাডভাইজর্সের প্রতিষ্ঠাতা মরিয়ম আব্বাস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই সিদ্ধান্ত প্রকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য হৃদয়বিদারক।
গ্লোবাল অ্যাডমিশনের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. মুস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ থাকলেও সম্প্রতি ৫–৭টি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আবেদন নিচ্ছে না। মূল কারণ, ছাত্র ভিসায় এসে অনেক শিক্ষার্থী কোর্স শেষ না করে আশ্রয় প্রার্থনা করে বা ভিসা ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে। তিনি সতর্ক করেছেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচিত যুক্তরাজ্যকে ছাত্র ভিসার ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার না করা।