‘বাকস্বাধীনতা দমনের’ অভিযোগে বাতিল হতে পারে মার্কিন ভিসা আবেদন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৪৩ এএম
যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত দক্ষ কর্মীদের জন্য এইচ-১বি ভিসা আবেদনকারীদের ওপর বাড়তি যাচাই বাছাইয়ের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে বলা হয়, ‘ফ্রি স্পিচ নিয়ে সেন্সরশিপে’ (বাকস্বাধীনতা দমন) জড়িত থাকলে কোনও আবেদনকারীকে প্রত্যাখ্যানের জন্য চিহ্নিত করা যেতে পারে।
ডিসেম্বরের ২ তারিখে সব মার্কিন মিশনে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, এইচ-১বি ভিসা আবেদনকারী এবং তাদের সঙ্গে ভ্রমণকারী পরিবারের সদস্যদের জীবনবৃত্তান্ত বা লিংকডইন প্রোফাইল পরীক্ষা করতে হবে। তারা ভুল তথ্য প্রচার, বিভ্রান্তিকর তথ্য, কনটেন্ট মডারেশন, ফ্যাক্ট-চেকিং, কমপ্লায়েন্স বা অনলাইন নিরাপত্তা–সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না তা যাচাই করতে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, যদি আপনি কোনও প্রমাণ পান যে, আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষিত মতপ্রকাশকে সেন্সর বা সেন্সর করার প্রচেষ্টায় দায়ী ছিলেন বা এতে সহযোগিতা করেছেন, তাহলে আইএনএ–এর নির্দিষ্ট ধারার অধীনে তাকে অযোগ্য ঘোষণার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।
মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এইচ-১ বি ভিসার ওপর এত কড়াকড়ি সমস্যা তৈরি করতে পারে, কারণ বিশেষায়িত পেশাজীবীদের নিয়োগের বড় অংশ তারা এর মাধ্যমেই সম্পন্ন করে থাকে। এসব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রচুর ভারতীয় ও চীনা নাগরিক কর্মরত আছেন। অথচ, সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এসব কোম্পানি প্রধানদের অনেকেই ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিলেন।
এইচ-১বি ভিসার জন্য বাড়তি যাচাই—বিশেষত সেন্সরশিপ ও বাকস্বাধীনতার ওপর গুরুত্ব নিয়ে আগে কোনও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়নি। এই বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনও সাড়া দেয়নি।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নীতিটি সব ধরনের ভিসা আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও প্রযুক্তিখাতে কর্মরত এইচ-১বি আবেদনকারীদের জন্য বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন, কারণ তারা প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা আর্থিক প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন—যেখানে “সংরক্ষিত মতপ্রকাশ দমনের অভিযোগ করা হয়।”
নতুন ও পুরোনো—দুই ধরনের আবেদনকারীর জন্যই এই বাড়তি যাচাই কার্যকর হবে।
ট্রাম্প প্রশাসন মুক্ত মতপ্রকাশকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে—বিশেষত অনলাইনে রক্ষণশীল কণ্ঠস্বর দমনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের বক্তব্য দমনের অভিযোগ তুলে ওয়াশিংটন একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
অভিবাসন–বিরোধী মতামতকে ‘ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ’ উদ্যোগে দমন করা হচ্ছে বলে তারা দাবি করেছে।
গত মে মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হুমকি দিয়েছিলেন, মার্কিনিদের মতপ্রকাশ দমনকারী ব্যক্তিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে। তার ইঙ্গিত ছিল বিদেশি নীতিনির্ধারকদের দিকেও।
ট্রাম্প প্রশাসন শিক্ষার্থী ভিসার ক্ষেত্রেও কঠোর নীতিমালা চালু করেছে। মার্কিন কনস্যুলার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী কোনও পোস্ট আছে কি না, তা পরীক্ষা করতে।
অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ট্রাম্প সেপ্টেম্বর মাসে এইচ-১বি ভিসার ওপর নতুন ফি আরোপ করেন।
ট্রাম্প ও তার রিপাবলিকান মিত্ররা বারবার অভিযোগ করেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মতপ্রকাশ দমনকে উৎসাহিত করেছে। বিশেষত করোনার টিকা এবং নির্বাচন সম্পর্কিত ভুল তথ্য মোকাবিলার প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে এসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স