রাস্তায় ফেলে যাওয়া নবজাতককে রাতভর পাহারা দিল একদল কুকুর
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:৩০ পিএম
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার নবদ্বীপে রেলকর্মীদের এক কলোনিতে ঘটেছে অবিশ্বাস্য ঘটনা। ভোরের আগের নিস্তব্ধ সময়, যখন পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার এই নদীঘেঁষা শহরটি শীতের আকাশের নিচে প্রায় সম্পূর্ণ নীরব, তখন রেলওয়ে কর্মীদের কলোনির একটি বাথরুমের বাইরে ঠাণ্ডা মাটির ওপর এক নবজাতক শিশুকে একা ফেলে রাখা হয়।
শিশুটি তখন মাত্র কয়েক ঘণ্টার, জন্মের রক্ত এখনো লেগে ছিল শরীরে, কোনো কম্বল নেই, কোনো চিরকুট নেই, আশপাশে কেউ নেই। তবু সে পুরোপুরি একা ছিল না।
এরপর যা ঘটেছে, তা এখন মানুষের মুখে মুখে ফিরছে, অলৌকিক বলেই যেন বিশ্বাস করা যায়। প্রতিদিন যেসব পথকুকুরকে মানুষ তাড়িয়ে বেড়ায়, সেই কুকুরগুলোর একটি দল নবজাতকের চারদিকে নিখুঁত বৃত্ত তৈরি করে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা না ঘেউ ঘেউ করেছে, না নড়েচড়ে উঠেছে, শুধু পুরো রাত পাহারা দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রাতভর সেই কুকুরগলো ভোরের আলো ছাড়া আর কাউকে বা কোনো কিছুকেই নবজাতকের কাছাকাছি ঘেঁষতে দেয়নি।
প্রথম যারা শিশুটিকে দেখতে পান, সেই সুকলা মণ্ডল বলেন, ঘুম থেকে উঠে আমরা এমন কিছু দেখলাম যা এখনও আমাদের গা ছমছম করায়। কুকুরগুলি আক্রমণাত্মক ছিল না, বরং খুবই সজাগ ছিল। যেন তারা বুঝতে পারছিল যে শিশুটি বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে।
আরেক বাসিন্দা সুভাষ পাল বলেন, তিনি ভোরের দিকে শিশুর ক্ষীণ কান্না শুনেছিলেন। আমি ভেবেছিলাম হয়তো কলোনির কোনো পরিবারে অসুস্থ শিশু আছে। ভাবিনি যে বাইরে একটি নবজাতক শুয়ে আছে আর কুকুররা তাকে পাহারা দিচ্ছে। তারা সত্যি পাহারাদারের মতো আচরণ করছিল, তিনি স্মরণ করেন।
অবশেষে সুকলা মণ্ডল ফিসফিস করে কাছে গেলে কুকুরগুলি তাদের তৈরি বলয়টি ধীরে ধীরে আলগা করে। তিনি দ্রুত নিজের ওড়না দিয়ে শিশুটিকে মুড়ে প্রতিবেশীদের সাহায্যে ডাকেন।
নবজাতকটিকে প্রথমে মহেশগঞ্জ হাসপাতালে এবং পরে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ডাক্তাররা পরে জানান, শিশুটির কোনো আঘাত লাগেনি, এবং মাথায় থাকা রক্ত সম্ভবত জন্মদাগ। তাঁদের ধারণা, প্রসবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নয়, বরং কয়েক মিনিটের মধ্যেই শিশুটিকে পরিত্যক্ত করা হয়েছিল।
পুলিশ এবং শিশু সহায়তা কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে এবং শিশুটির দীর্ঘমেয়াদী যত্নের জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে।
কর্মকর্তারা কাজ শুরু করলেও, নবদ্বীপের মানুষজন কুকুরগুলোর সেই অবিশ্বাস্য সুরক্ষার দৃশ্য ভুলতে পারছে না। এক রেলকর্মী মন্তব্য করেন, এরাই সেই কুকুর যাদের নিয়ে আমরা অভিযোগ করি। কিন্তু তারা শিশুটিকে ফেলে যাওয়া ব্যক্তির চেয়ে বেশি মানবতা দেখাল।