এইচ-ওয়ানবি ভিসায় ভারতীয়দের জালিয়াতি ফাঁস করলেন মার্কিন কূটনীতিক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৩৬ এএম
মার্কিন কূটনীতিক মাহভাশ সিদ্দিকী দাবি করেছেন যে চেন্নাইতে কনস্যুলার অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় তিনি জালিয়াতির বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন, কিন্তু রাজনৈতিক চাপের কারণে সেসময় কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ছবি: মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর
আমেরিকান কোম্পানিগুলো বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য এইচ-ওয়ানবি ভিসা ব্যবহার করে। আর এই ভিসার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হলো ভারতীয়রা। কিন্তু এবার এই ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য ফাঁস করলেন এক মার্কিন কূটনীতিক। মাহভাশ সিদ্দিকী নামের এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন কূটনীতিক দাবি করেছেন, ভারতীয়দের দেওয়া বেশিরভাগ কাজের ভিসাই জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া।
সম্প্রতি একটি পডকাস্টে এসে মাহভাশ এই অভিযোগ করেন। তিনি ২০০৫ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভারতের চেন্নাই কনস্যুলেটে কর্মরত ছিলেন। চেন্নাই বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ভিসা প্রসেসিং কেন্দ্র।
মাহভাশ সিদ্দিকী জানান, তিনি কূটনীতিক হিসেবে নয়, বরং ব্যক্তিগত জায়গা থেকে এসব কথা বলছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ভারতীয়দের দেওয়া ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ভিসাই ভুয়া। এর পেছনে রয়েছে ভুয়া ডিগ্রি বা জাল কাগজপত্র। অনেক আবেদনকারী আসলে যোগ্যই নন, তবুও তারা এই ভিসা পেয়ে যান।
চেন্নাইয়ে কাজ করার সময় মাহভাশ ও তাঁর দল এই জালিয়াতি ধরে ফেলেছিলেন। তিনি বলেন, 'আমরা দ্রুত এই জালিয়াতির বিষয়টি বুঝতে পারি। আমরা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে (সেক্রেটারি অব স্টেট) বিস্তারিত জানিয়ে চিঠিও লিখি। কিন্তু ওপর মহলের রাজনৈতিক চাপের কারণে আমাদের সিদ্ধান্তগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়।'
তিনি আরও জানান, তাদের এই জালিয়াতিবিরোধী অভিযানকে উল্টো 'বেআইনি অভিযান' বলে থামিয়ে দেওয়া হয়। মাহভাশের দাবি, অনেক রাজনীতিবিদ এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ভারতীয় রাজনীতিবিদদের খুশি রাখতেই তখন তদন্ত করতে দেওয়া হয়নি এবং তাদের ওপর প্রচুর চাপ ছিল।
ভুয়া প্রার্থী আর ঘুষের রাজত্ব
মাহভাশ সিদ্দিকী চেন্নাই কনস্যুলেটে দুই বছর কাজ করেছেন। এ সময় তিনি ৫১ হাজারেরও বেশি ভিসার আবেদন যাচাই করেছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই ছিল এইচ-ওয়ানবি ভিসা। আবেদনগুলো আসত হায়দরাবাদ, কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ু থেকে। তবে হায়দ্রাবাদের পরিস্থিতি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ।
পডকাস্টে তিনি বলেন, 'একজন ভারতীয়-আমেরিকান হিসেবে এটা বলতে আমার খারাপ লাগছে, কিন্তু ভারতে জালিয়াতি আর ঘুষ খুবই স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।'
তিনি জানান, এমনও দেখা গেছে যে ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকারের সময় আসল প্রার্থী আসেননি। তার বদলে অন্য কেউ বা 'প্রক্সি' প্রার্থী ইন্টারভিউ দিতে এসেছেন। আবার ইন্টারভিউ গ্রহণকারী যদি আমেরিকান হতেন, তবে অনেক প্রার্থী ভয়ে আসতেনই না। এছাড়া টাকার বিনিময়ে ভারতীয় ম্যানেজাররা ভারতীয়দের চাকরি দিতেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
বর্তমানে আমেরিকা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে কর্মী সংকটে ভুগছে—এমন ধারণাকেও সন্দেহের চোখে দেখেন বলে জানান মাহভাশ।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে এইচ-ওয়ানবি ভিসা পাওয়াদের ৭০ শতাংশই ছিল ভারতীয়। চেন্নাই কনস্যুলেট একাই ওই বছর ২ লাখ ২০ হাজার এইচ-ওয়ানবি ভিসা এবং তাদের পরিবারের জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার ভিসা ইস্যু করেছে।