Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

ভূমিকম্পে ১০ ফুট সরে গেছে শহর, জানুন ১২ বিস্ময়কর তথ্য

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৫০ এএম

ভূমিকম্পে ১০ ফুট সরে গেছে শহর, জানুন ১২ বিস্ময়কর তথ্য

বিশ্বজুড়ে প্রতিদিনই ভূমিকম্প আঘাত হানে। সম্প্রতি বড় ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়েছে। ভূমিকম্প হলে তার পরপরই এনিয়ে নানা ধরনের কথাবার্তা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক এই ঘটনা সম্পর্কে আমরা কতোটুকু জানি! এমন ঘটনাও ঘটেছে, যেখানে ভূমিকম্পে একটি শহর ১০ ফুট পশ্চিমে সরে গেছে।

এমন ১২টি বিস্ময়কর তথ্য তুলে ধরা হলো:

১) পৃথিবীতে বছরে লাখ লাখ ভূমিকম্প হয়

যুক্তরাষ্ট্রে ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জিওলজিক্যাল সার্ভে বলছে, প্রত্যেক বছর গড়ে ১৭টি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ৭ এর উপরে। আট মাত্রার ভূমিকম্প হয় একবার। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরে লাখ লাখ ভূমিকম্প হয়। এর অনেকগুলো হয়তো বোঝাই যায় না। বোঝা যায় না কারণ, খুব প্রত্যন্ত এলাকায় এসব হয় অথবা সেগুলোর মাত্রা থাকে খুবই কম।

২) ভূমিকম্পের কারণে দিনের দৈর্ঘ্য কম-বেশি হতে পারে

জাপানের উত্তর-পূর্ব দিকে ২০০৯ সালের ১১ মার্চ একটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার মাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৯। এর ফলে পরিবর্তন ঘটে পৃথিবীর ভরের বণ্টনে। এবং তার প্রভাবে পৃথিবী ঘুরতে থাকে সামান্য দ্রুত গতিতে আর তখন দিনের দৈর্ঘ্য কমে যায়। সেদিন দিন ১ দশমিক ৮ মাইক্রো সেকেন্ড ছোট ছিল।

৩) সান ফ্রান্সিসকো সরে যাচ্ছে লস অ্যাঞ্জেলসের দিকে

যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহর প্রত্যেক বছর গড়ে দুই ইঞ্চি করে লস অ্যাঞ্জেলসের দিকে সরে যাচ্ছে। এই একই গতিতে বাড়ে আমাদের আঙ্গুলের নখ। শহরের এই অবস্থান পরিবর্তনের কারণ হচ্ছে সান অ্যানড্রেয়াস ফল্টের দুটো দিক ক্রমশ একটি অপরটিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই গতিতে চলতে থাকলে এই দুটো শহর কয়েক লাখ বছর পর একত্রিত হয়ে পড়বে।

৪) ভূমিকম্পের আগে স্থির পানি থেকে গন্ধ বের হয়

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্পের আগে পুকুর, খাল-বিল, হ্রদ, জলাশয়ের স্থির পানি থেকে দুর্গন্ধ আসতে পারে। এমনকি সেই পানি সামান্য উষ্ণও হয়ে পড়তে পারে। প্লেট সরে যাওয়ার কারণে মাটির নিচ থেকে যে গ্যাস নির্গত হয় তার কারণে এটা হয়ে থাকে। এর ফলে ওই এলাকার বন্যপ্রাণীর আচরণেও পরিবর্তন ঘটতে পারে। ওপেন ইউনিভার্সিটির প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগ বলছে, ২০০৯ সালে ইটালিতে এক ভূমিকম্পের সময় এক ধরনের ব্যাঙ সেখান থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল এবং ফিরে এসেছিল ভূমিকম্পের পরে। বলা হয়, এই ব্যাঙ পানির রাসায়নিক পরিবর্তন খুব দ্রুত শনাক্ত করতে পারে।

৫. ভূমিকম্পের পরেও পানিতে ঢেউ উঠতে পারে

ভূমিকম্পের পরেও পুকুরে কিম্বা সুইমিং পুলের পানিতে আপনি কখনো কখনো ঢেউ দেখতে পারেন। একে বলা হায় শ্যাস। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্প হয়তো শেষ হয়ে গেছে কিন্তু তারপরেও কয়েক ঘণ্টা ধরে অভ্যন্তরীণ এই পানিতে তরঙ্গ অব্যাহত থাকতে পারে। মেক্সিকোতে ১৯৮৫ সালে একবার ভূমিকম্প হয়েছিলো ১৯৮৫ সালে যেবার এই মেক্সিকো থেকে ২০০০ কিলোমিটার দূরে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলের পানি ছিটকে পড়তে পড়তে শেষ হয়ে গিয়েছিল।

৬) ভূমিকম্পের কথা মনে রেখেই ইনকা সভ্যতা ও জাপানি বাড়িঘর তৈরি

ভূমিকম্পের কারণে যাতে বাড়িঘর ধসে না যায় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই ইনকা আমলের স্থাপত্য ভবন ও জাপানি প্যাগোডা নির্মিত হয়েছিল। ৫০০ বছর আগে ইনকার স্থাপত্য কর্মীরা যখন মাচু পিচু শহর নির্মাণ করে তারা বাড়িঘর নির্মাণের ব্যাপারে একটি আদিকালের জ্ঞান কাজে লাগিয়েছিল, যাতে ঘন ঘন হওয়া ভূমিকম্পের হাত থেকে তাদের বাড়িঘর বেঁচে যেতে পারে।

৭) বেশিরভাগ ভূমিকম্পেরই উৎস প্রশান্ত মহাসাগর

পৃথিবীতে যতো ভূমিকম্প হয় তার অধিকাংশ, ৯০ শতাংশই হয় রিং অফ ফায়ার এলাকাজুড়ে। এই এলাকাটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।

৮) ভূমিকম্পের কারণে চিলির একটি শহর ১০ ফুট পশ্চিমে সরে যায়

২০১০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বড় ধরনের এক ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল চিলির কনসেপসিওন শহরে। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিলো ৮.৮। এর ফলে পৃথিবীর শক্ত উপরিভাগে ফাটল ধরে এবং শহরটি ১০ ফুট পশ্চিমে সরে যায়।

৯) ভূমিকম্পে খাটো হয়ে যায় এভারেস্ট

নেপালে ২০১৫ সালের ২৫ এপ্রিল আঘাত হানে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। কমে আসে হিমালয়ের অনেক পর্বতের উচ্চতাও। মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা কমে গিয়েছিলো এক ইঞ্চির মতো।

১০) জাপানি পৌরাণিক কাহিনীতে ভূমিকম্প হয়েছিল বড় আকারের এক ক্যাটফিশের কারণে

ইতিহাসে দেখা যায় জাপানি এক দ্বীপে মাটির নিচে চাপা পড়ে গিয়েছিল নামাজু নামের বিশাল এক ক্যাটফিশ। পৌরাণিক কল্পকাহিনীতে বলা হয়, অনেক ভূমিকম্প হয়েছিল এই মাছটির কারণে।

প্রাচীন গ্রিকরা বিশ্বাস করতেন- সমুদ্রের দেবতা পজিডন রেগে গিয়ে পৃথিবীর উপর আঘাত করলে ভূমিকম্প হতো।

হিন্দু পুরাণে আছে এই পৃথিবীকে ধরে রেখেছে আটটি হাতি। এই হাতিগুলো দাঁড়িয়ে আছে একটি কচ্ছপের পিঠের ওপর। আর ওই কচ্ছপটি ছিল কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকা একটি সাপের উপর। এই প্রাণীগুলোর যে কোনো একটি যখন নড়ে উঠত তখনই ভূমিকম্প হতো।

১১) ভূমিকম্পের আগে প্রাণীর আচরণে পরিবর্তন ঘটে

ভূমিকম্পের ফলে যে শুধু ব্যাঙের আচরণেই পরিবর্তন ঘটে তা নয়, ইন্দোনেশিয়া এবং ২০০৪ সালে সুনামির আগে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন যে তারা অনেক পশু পাখিকে দেখেছেন উঁচু এলাকার দিকে ছুটে যেতে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভূমিকম্পের আগে ছোট ছোট কম্পন পশুপাখিরা টের পেয়ে যায়।

১২) ব্রিটিশ একজন বিজ্ঞানী ভূমিকম্পের কারণ চিহ্নিত করেছেন

ব্রিটেনের একজন প্রকৌশলী জন মাইকেল ভূমিকম্পের কারণ উদঘাটন করেছেন। এই আবিষ্কার হয়েছে ১৮০০ শতাব্দীর শুরুর দিকে। তাকে দেখা হয় ভূকম্পনবিদ্যার একজন জনক হিসেবে। তিনি বলেন, ভূ-পৃষ্ঠের বহু নিচে শিলাখণ্ডের অবস্থান পরিবর্তনের কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার