Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

সম্রাট আকবর ও টিপুর নাম থেকে ‘গ্রেট’ মুছে দিল ভারত, কী বার্তা দিচ্ছে মোদি সরকার?

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০১:২৯ পিএম

সম্রাট আকবর ও টিপুর নাম থেকে ‘গ্রেট’ মুছে দিল ভারত, কী বার্তা দিচ্ছে মোদি সরকার?

নতুন পাঠ্যপুস্তকে মোগল সম্রাট আকবর ও মহিশূরের শাসক টিপু সুলতানের ‘গ্রেট’ পদবি বাদ দেওয়া নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের রাজনীতি। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।

এ বছর ভারতের জাতীয় শিক্ষাবিষয়ক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কাউন্সিল (এনসিইআরটি) নতুন যে পাঠ্যপুস্তক ছাপিয়েছে, সেখানে মোগল সম্রাট আকবর ও মহিশূরের শাসক টিপু সুলতানের নাম থেকে ‘গ্রেট’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে।

কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে দেশের ইতিহাসকে মেলাতে গিয়ে ভারতের ইতিহাসকে সংকুচিত করছে।

কংগ্রেস এ জন্য বিশেষ করে মোগল আমলের শাসকদের প্রতি বর্তমান বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক বিরাগের দিকে ইঙ্গিত করেছে।

কিন্তু বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে যে সংশোধনের প্রয়োজন ছিল, এই পরিবর্তনগুলো তারই অংশ।

এনসিইআরটির ছাপা নতুন পাঠ্যপুস্তকগুলো ভারতজুড়ে ২৪ হাজারের বেশি মাধ্যমিক স্কুলে (সিবিএসই) পৌঁছে গেছে।

এ প্রসঙ্গে ভারত সরকারকে দেশের ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কংগ্রেসের সংসদ সদস্য ইমরান মাসুদ বলেন, আকবর ও টিপু সুলতানরা ৭০০ বছর ধরে এ দেশ শাসন করেছেন। তারা এক দিন বা দুই দিনের শাসক ছিলেন না।

আরও পড়ুন
ইমরান মাসুদ সরকারের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আরও বলেন, পদবি সরিয়ে নিয়ে বা যোগ করে কী অর্জন করা যাবে? তিনি ওই দুই শাসকের সময়ে ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে এএনআইকে বলেন, ‘তাদের শাসনামলে জিডিপি ছিল ২৭ শতাংশ। ভারতকে সে সময় সোনার পাখি বলে ডাকা হতো।’

মাসুদ ব্রিটিশদের (ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি) হাতে শেষ মোগল সম্রাটকে ফাঁসির সাজা দেওয়ার এবং তার সন্তানদের কঠোর শাস্তি পেতে দেখার অপমানের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন।

মাসুদ বলেন, ‘সেই (মোগল) শাসকদের বংশধরেরা এখন কলকাতার রাস্তায় বাসন ধুয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর যারা ব্রিটিশদের সেবা করেছেন, তারা বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় বসে আছেন।’

তীব্র বিদ্রূপের সুরে মাসুদ প্রশ্ন তোলেন, ‘কে রানি লক্ষ্মী বাঈয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন? কেন তার বংশধরেরা বর্তমান সরকারের মন্ত্রীর পদে বসে আছেন? এটা নিয়ে কেন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে না?’

কংগ্রেস নেতা কে মুরালিধরনও পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসের পরিবর্তন করার সমালোচনা করেন।

মুরালিধরন বলেন, ‘আকবর ছিলেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাজা। তিনি হিন্দু ধর্মকেও গ্রহণ করেছিলেন। আর টিপু সুলতান ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। এ কারণেই তাকে জীবন দিতে হয়েছিল। তারা দুজনই মহান শাসক ছিলেন। তাঁদের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের এই আচরণ একেবারেই ঠিক নয়।’

আরও পড়ুন
উত্তরাখণ্ড কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা হরিশ রাওয়াত বলেন, (পাঠ্যপুস্তক থেকে) এসব বিষয় বাদ দেওয়া বৃহত্তর এক পরিকল্পনার অংশ।

রাওয়াত সাংবাদিকদের আরও বলেন, ‘আমাদের এখন খেয়াল রাখতে হবে, বিজেপি আর কী কী বাদ দেয়।’

এই কংগ্রেস নেতা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘যদি তারা সুযোগ পায়, তবে তারা আরও অনেক কিছু বাদ দিয়ে দেবে।’

কংগ্রেস নেতা রাওয়াত ২০২৯ সালের জাতীয় নির্বাচনকে একটি মোড়-ঘোরানো মুহূর্ত হিসেবে তুলে ধরে বলেন, ‘পরিবর্তন ২০২৭ সাল থেকেই শুরু হবে।’ 

আরএসএস নেতা সুনীল আম্বেকর বলেন, ‘ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনা হয়েছে।’

গত শনিবার নাগপুরে এক অনুষ্ঠানে সুনীল আরও বলেন, তাদের পদবি বাদ দেওয়া হয়েছে। তারা কেউ পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ পড়েননি।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সুনীল বলেন, ‘তাদের নিষ্ঠুর কাজগুলো সম্পর্কেও জানতে হবে।’ ভবিষ্যতে পাঠ্যপুস্তকে আরও পরিবর্তন আনা হবে বলেও জানান তিনি।

তথ্যসূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার