Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

বেবি শার্কের বাজিমাত : এক গানেই আয় ৪০ কোটি ডলার

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৫১ এএম

বেবি শার্কের বাজিমাত : এক গানেই আয় ৪০ কোটি ডলার

দেশের শিশু-কিশোরদের ভিডিও দেখা নিত্যদিনের ঘটনা। মোবাইল ফোন হাতে থাকা শিশুদের প্রায় সবাই পিংকফং কিডস সং’স অ্যান্ড স্টোরিস, দক্ষিণ কোরিয়ার ইউটিউব চ্যানেল ‘বেবি শার্ক ডু ডু ডু ডু’ শিরোনামের গানটা দেখেছে। গানটি তাদের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করে ৯ বছর আগে। ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত গানটি দেখা হয়েছে এক হাজার ৬০০ কোটি বার। এই ভিডিও থেকে পিংকফং কিডস সং’স অ্যান্ড স্টোরিস ইউটিউব চ্যানেলটি ৪০ কোটি ডলার আয় করেছে; যা বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার সমান। এই ভিডিওটা বাংলাদেশের শিশু থেকে বয়স্ক সবারই অনেক পরিচিত। এতে বিদেশে দুই শিশু এই গানের সঙ্গে নাচ ও অভিনয় করছে। সম্প্রতি বেবি শার্ক ডু ডু ডু ডু শিরোনামের গানটি নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইম সংবাদ প্রকাশ করেছে।

যাদের বাসায় এখন ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু আছে, তারা জানে গত এক দশকে শিশুরা কোন কোন ছড়া-গান শুনেছে। এ প্রজš§ ইউটিউব ভিডিওর সঙ্গে বেড়ে উঠেছে। আর সময় বিবেচনায় এই বয়সী শিশুদের জন্য কনটেন্ট বানিয়ে অনেকেই বিপুল অর্থ উপার্জন করছেন।

বিষয়টি হলো ‘বেবি শার্ক’ নামের ৯০ সেকেন্ডের এক শিশুতোষ গানের ভিডিও এখন ইউটিউবের সর্বাধিক দেখা কনটেন্ট। ভিউ ছাড়িয়েছে ১৬ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৬০০ কোটি। ২০২০ সালেই এটি ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও কনটেন্টের স্বীকৃতি পায়। এরপর তা থেমে থাকেনি-অগ্রগতি চলছেই।

ফলে এই ভিডিও যারা বানিয়েছে, অর্থাৎ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান পিংকফংয়ের বাজার মূলধন ৪০০ মিলিয়ন ডলার বা ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৯০৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ারবাজারে পিংকফংয়ের লেনদেন শুরু হয়। প্রথম দিনেই শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। এর মূল কারণ এই বেবি শার্ক ডু ডু ডু, তা আর নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না।

এর জনপ্রিয়তা কেমন, সে-বিষয়ক এক বাস্তব উদাহরণ দেয়া যাক। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের এক মা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, সন্তানকে ঘুম পাড়ানোর পর বা অনেক ক্ষেত্রে কাজের সময় তার কানে যেন এক শিশুতোষ ছড়াগান বাজতে থাকে। সেটি হলো, বেবি শার্ক ডু ডু ডু, বেবি শার্ক। যাদের বাড়িতে ইন্টারনেট এবং ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু আছে, তাদের মধ্যে খুব কম মানুষই আছেন, যিনি এই গান শোনেননি।

এই ভিডিও দুনিয়াজোড়া ঠিক কেমন আলোড়ন তুলবে, সেটি নিশ্চিতভাবেই কেউ আগে ভাবেননি। ২০১৬ সালের জুনে ভিডিওটি প্রকাশের অনুমতি দেন পিংকফংয়ের প্রধান নির্বাহী কিম মিন-সিওক। তিনি বলেন, ‘আমরা ভাবিনি, এটি অন্য কনটেন্ট থেকে আলাদা কিছু হবে। পরে বুঝেছি, এটি আমাদের বৈশ্বিক যাত্রাপথের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।’

২০১০ সালে ‘স্মার্টস্টাডি’ নামে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি মূলত ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করত। মাত্র তিনজন কর্মচারী নিয়ে শুরু করা কোম্পানিটি পরবর্তী সময়ে ছোট শিশুদের দিকে মনোযোগ দেয়। কনটেন্টে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। একপর্যায়ে কর্মীর সংখ্যা ১০০ জনে পৌঁছায়। এরপর তারা সহজ, শিক্ষাভিত্তিক গেম ও কনটেন্টকে অগ্রাধিকার দেয় এবং তখনই বেবি শার্কের বাজার মাত করে।

ব্রিটিশ মিডিয়া বিশ্লেষক কেভিন চিউর মতে, বেবি শার্ক গানটি ‘শিশুদের কাছে আকর্ষণীয়, যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে সম্ভবত বিরক্তিকর। তবে কিম মিন-সিওকও এই গানে আসক্তি ধরানোর ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত। তিনি বলেন, ‘এটি কে-পপ গানের মতো খুব দ্রুত লয়ের ও ছন্দময়। ফলে আসক্তি তৈরি করতে পারে।’

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শিশুদের মধ্যে এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। অনলাইনে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে বেবি শার্ক গানটি ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিওর স্বীকৃতি অর্জন করে। এমনও হয়েছে, ভিডিওটি প্রকাশের পর প্রথম দিকে এই কোম্পানি যত আয় করেছে, তার প্রায় অর্ধেক এসেছে এই গান থেকে। সেই সঙ্গে নিত্যনতুন কনটেন্ট তো তারা বানিয়েছে।

২০২২ সাল থেকে পিংকফং কোম্পানির অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি যেমন বেবেফিন ও সিলুকেরও দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে কোরিয়া ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মিন জাং কিম বলেন, কোম্পানিকে প্রমাণ করতে হবে, এই সফলতা শুধু বেবি শার্কের ওপর নির্ভরশীল নয়।

কিম মিন-সিওকের জোর দাবি, বেবি শার্ক ছাড়া অন্যান্য কনটেন্ট থেকেও তাদের ব্যবসা বাড়ছে। বর্তমানে পিংকফংয়ের আয়ের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসছে বেবি শার্ক থেকে। বেবেফিন থেকে আসছে কোম্পানির আয়ের প্রায় ৪০ শতাংশ। স্টক মার্কেটে অভিষেক থেকে প্রায় ৫২ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ২০ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছে পিংকফং। কিম জানান, এই অর্থ কনটেন্ট ও চরিত্রের উন্নয়নে ব্যবহƒত হবে। উদ্ভাবনে পিছিয়ে থাকতে চায় না তারা। মানুষের পছন্দ কী, সে-বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করে প্রযুক্তিভিত্তিক কনটেন্ট বানাতে চায় তারা। কিম বলেন, অনেক নির্মাতা সারাজীবন ধরে যে স্বপ্ন দেখেন, পিংকফং এরই মধ্যে তা অর্জন করে ফেলেছে। এখন বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে হবে, তারা কেবল একটি হিট গাননির্ভর কোম্পানি নয়।

পিংকফংয়ের যাত্রাপথ একেবারে কণ্টকমুক্ত ছিল না। ২০১৯ সালে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযোগ এক মার্কিন সংগীতজ্ঞের সুর তারা নকল করেছে; কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সুপ্রিম কোর্ট এই অভিযোগ খারিজ করে দেয়। আদালত বলেন, জনপরিসরে প্রচলিত লোকগান থেকে তারা সুর নিয়েছে। আদালতের এই রায়ে তারা জোর পায়। সেই ধারাবাহিকতায় এখন তারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলো।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার