সৌদি আরবের রূপান্তরের কেন্দ্রবিন্দু কিদিয়া সিটি, বিশ্বের প্রথম ‘পাওয়ার অব প্লে’ভিত্তিক নগরী। বিনোদন, সংস্কৃতি ও ভবিষ্যৎ আরব আতিথেয়তার মেলবন্ধনে এটি বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য নতুন স্বপ্নলোক। সৌদি আজ যে নতুন ভবিষ্যৎ নির্মাণ করছে, তার কেন্দ্রেই দাঁড়িয়ে কিদিয়া সিটি। বিশ্বের প্রথম এমন একটি নগরী, যা গড়ে উঠছে ‘পাওয়ার অব প্লে’ ধারণাকে কেন্দ্র করে। আনন্দ, সৃজনশীলতা আর অনুসন্ধানের শক্তি দিয়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করা ও সক্ষমতা উন্মোচনের মাধ্যম হিসেবে দেখা হয় এখানে।
রিয়াদের মহিমান্বিত তুওয়াইক ক্লিফের প্রান্তে প্রায় ৩৭৬ বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এই নগরী গড়ে তুলছে কিদিয়া ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি (কিউআইসি), যা চলতি বছরের শেষেই পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সম্পূর্ণ চালু হলে প্রতিবছর প্রায় ৪ কোটি ৮০ লাখ দর্শনার্থী এখানে আসবেন বলে ধারণা করা হয়, আর আতিথেয়তা, বাণিজ্য ও সৃজনশীল শিল্পে সৃষ্টি হবে ৫০ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান। কিদিয়া হয়ে উঠতে চলেছে বিনোদন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিশ্ব রাজধানী, সৌদির নতুন যুগের এক প্রতীক।
বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য কিদিয়া শুধু একটি নতুন গন্তব্য নয়, এটি আরবীয় অভিজ্ঞতার ভবিষ্যৎ ও আধুনিক হালাল আতিথেয়তার দ্বার।
খেলায় যেখানে প্রাণ ফিরে পায় শহর
ভাবুন এক নগরী, যেখানে উত্তেজনা, সৃজনশীলতা ও ভাগ করা আনন্দ প্রতিদিনের জীবনের অংশ। কিদিয়া গড়ে উঠছে ২৫টি বিশেষায়িত ডিস্ট্রিক্টে, যেখানে থিম পার্ক, মোটরস্পোর্টস, শিল্পকলা, সংস্কৃতি ও বিনোদনের প্রতিটি আলাদা ও অন্যভাবে সাজানো।
সিক্স ফ্ল্যাগস কিদিয়া সিটি
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিক্স ফ্ল্যাগস পার্ক, ২৮টি রোমাঞ্চকর রাইডসহ, তাদের মধ্যে ফ্যালকনস ফ্লাইট হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ, উঁচু ও দ্রুততম রোলারকোস্টার। রোমাঞ্চপ্রেমী বাংলাদেশিদের জন্য এটি এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা এনে দেবে।
অ্যাকুয়ারাবিয়া ওয়াটার পার্ক
সৌদির প্রথম ও বৃহত্তম ওয়াটার পার্ক, ২০টির বেশি আকর্ষণীয় জলকেন্দ্রিক রাইডসহ। পরিবার, দম্পতি বা নবদম্পতিদের জন্য আরাম, ব্যক্তিগত ও আনন্দের এক চমৎকার সমাহার।
ড্রাগন বল থিম পার্ক
অ্যানিমে-ভক্তদের জন্য স্বপ্নের দুনিয়া, ড্রাগন বলের প্রথম থিম পার্ক, যেখানে গোকু ও তার মহাবিস্ময়কর অভিযাত্রা জীবন্ত হয়ে উঠবে বিভিন্ন ইমারসিভ জোনে।
কিদিয়া স্পিড পার্ক ও মোটরস্পোর্টস কমপ্লেক্স
কিদিয়া স্পিড পার্ক ও মোটরস্পোর্টস কমপ্লেক্স, উভয়ই দিবে দারুণ অভিজ্ঞতা। বিশেষত মোটরস্পোর্টসপ্রেমীদের জন্য বিশ্বমানের রেস সার্কিট আর ট্র্যাকের ওপর থেকে দেখা যায় এমন ২০ তলা উঁচু ভিউয়িং টাওয়ার, দ্য ব্লেড। সঙ্গে রয়েছে মার্সিডিজ-এএমজি ওয়ার্ল্ড অব পারফরম্যান্স-ইন্টারঅ্যাকটিভ রেসিং অভিজ্ঞতার জন্য।
সংস্কৃতি ও সৃজনশীলতার হৃৎস্পন্দন
উত্তেজনার বাইরে কিদিয়া হয়ে উঠবে শিল্প ও সংস্কৃতির এক প্রাণকেন্দ্র। তুওয়াইক পর্বতের পাশে নাটকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়ানো পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে সারা বছর চলবে কনসার্ট, থিয়েটার ও উৎসব, যেখানে মিলবে সৌদি ও বৈশ্বিক শিল্প-সংস্কৃতি।
বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য এখানে পাওয়া যাবে বিশ্বমানের বিনোদন, আবার থাকবে ইসলামী মূল্যবোধসম্মত, পরিবার-বান্ধব পরিবেশ-দুয়ের দারুণ মেলবন্ধন।
যে কারণে কিদিয়া হবে বাংলাদেশিদের পরবর্তী অবশ্য-দেখা গন্তব্য
১. সহজ যাতায়াত
রিয়াদ শহর থেকে মাত্র ৪০ মিনিট দূরে কিদিয়া। এক্সপ্রেসওয়ে আর ভবিষ্যৎ হাইস্পিড রেলের মাধ্যমে সরাসরি যাতায়াত। ঢাকা-রিয়াদ দৈনিক ফ্লাইটের কারণে সপ্তাহান্তের অল্প দিনের সফরও সহজ।
২. হালাল আতিথেয়তা
এখানকার আতিথেয়তা পুরোপুরিই আরবীয়। শতভাগ হালাল খাবার, পরিবারবান্ধব পরিবেশ, পরিচিত স্বাদের ঘরোয়া খাবারের ছোঁয়া, সব মিলিয়ে আরাম আর আগলানো উষ্ণতা।
৩. আধ্যাত্মিক বা ব্যবসায়িক ভ্রমণের বাইরে নতুন অভিজ্ঞতা
বাংলাদেশিদের জন্য সৌদি দীর্ঘদিন ছিল মূলত ওমরাহ বা ব্যবসার গন্তব্য। কিদিয়া সেই পরিসরকে বাড়িয়ে দিচ্ছে, পরিবার, বন্ধু বা একাকী ভ্রমণে বিনোদন, সংস্কৃতি আর অনুসন্ধানের নতুন জগৎ।
৪. সব বাজেটের জন্য উপযোগী
ফ্রি পার্ক ও সাংস্কৃতিক আয়োজন থেকে শুরু করে প্রিমিয়াম থিম পার্ক ও রিসোর্ট। যে কেউ নিজের বাজেট অনুযায়ী অভিজ্ঞতা সাজিয়ে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য কিছু টিপস
সেরা ভ্রমণ সময়: অক্টোবর থেকে মার্চ, খোলা আকাশের আরামদায়ক আবহাওয়ার জন্য।
ভিসা: যেকোনো ভিসায় এখন বাংলাদেশিরা ওমরাহ পালন করতে পারেন।
যাতায়াত: রিয়াদ থেকে সরাসরি ট্যাক্সি, রেন্ট-এ-কার বা ট্যুর বাস পাওয়া যায়।
আবাসন: কিদিয়া সিটির ভেতরেই বিভিন্ন মানের হোটেল ও রিসোর্ট নির্মাণাধীন।
পোশাক: শালীন ও সম্মানজনক পোশাক উত্তম, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য নিয়ম তুলনামূলক শিথিল।
ভাষা: ইংরেজি বহুল ব্যবহৃত; কিছু আরবি শুভেচ্ছা শিখে নিলে বাড়তি সৌহার্দ্য পাওয়া যায়।
বিস্তারিত তথ্যের জন্য ঢুঁ দিতে পারেন এই ওয়েবসাইটে:https://www.visitsaudi.com/en/stories/saudi-s-3-largest-projects।