মামদানির দায়িত্ব গ্রহণের আগেই নিউইয়র্কে বাড়ছে আইসের অভিযান
ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটিতে নতুন উদ্বেগ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৪৭ এএম
নিউইয়র্ক সিটির অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বর্ডার সিজার টম হোমানের সাম্প্রতিক ঘোষণা। ফেডারেল অভিবাসন সংস্থা আইস-এর অভিযান ও আইন প্রয়োগ কার্যক্রম সিটিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে হোমান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। আর এই ঘোষণা এসেছে সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির দায়িত্ব গ্রহণের আগমুহূর্তে।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হোমান বলেন- ‘আমি খুব দ্রুতই নিউইয়র্কে ফিরে আসছি। আমাদের দল ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে এবং এখানকার পরিস্থিতির ওপর নজরদারি করছে।’
নিউইয়র্ক সিটির দীর্ঘদিনের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটি’ নীতিকে আবারও কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, সিটির জননিরাপত্তার অবস্থা সামলাতে ফেডারেল পর্যায়ে উপস্থিতি বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
হোমান দাবি করেন, বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের সঙ্গে তাদের একসময় সমঝোতা হয়েছিল যাতে রাইকার্স আইল্যান্ডে একটি আইস কার্যালয় স্থাপন করা হবে। কিন্তু সিটি কাউন্সিল সেই উদ্যোগ আটকে দেয়। তার ভাষায়-
‘যদি শহর সহযোগিতা না করে, তাহলে আমরা নিজেরাই মাঠে নেমে কাজ করব।’ এদিকে, নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি অভিবাসন নীতিতে সম্পূর্ণ ভিন্ন অবস্থানের জন্য পরিচিত। আইস-এর আগ্রাসী অভিযান এবং ডিপোর্টেশন নীতি নিয়ে তিনি বরাবরই সরব। তার দায়িত্ব গ্রহণের আগেই হোমানের এমন ঘোষণা রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়িয়ে তুলেছে।
সিটির বাংলাদেশি, দক্ষিণ এশীয় এবং বৃহত্তর অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই দুশ্চিন্তার সুর শোনা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, জোহরানের প্রগতিশীল নীতি শহরে নতুন এক মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি আনবে। তবে ফেডারেল স্তরের এমন চাপ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে।
বাফেলোতে আটক ৩৭ : যুক্তরাষ্ট্র বর্ডার পেট্রল এজেন্সির অভিযানে নিউইয়র্কের বাফেলোয় ইন্টারস্টেট-৯০ থেকে ৩৭ জন অবৈধ অভিবাসী আটক করেছে। অপারেশন ‘বিয়ার কেভ’-এ আটক ৩৭ জনের মধ্যে ৩০ জনের কাছেই নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বাণিজ্যিক যানবাহন চালানোর লাইসেন্স (সিডিএল) ছিল।
৮ থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত আইস, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশন্স (এইচএসআই) এবং এনফোর্সমেন্ট অ্যান্ড রিমুভাল অপারেশনস (ইআরও)-এর সহযোগিতায় বাফেলো স্টেশনের বর্ডার পেট্রল এজেন্টরা থ্রুওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ১০টির বেশি স্থানে অভিবাসন বিরোধী তল্লাশি চালায়।
তল্লাশিতে দেখা যায়, আটক ৩০ জন অবৈধ অভিবাসীর কাছেই ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, ইলিনয়, ইন্ডিয়ানা, নিউ জার্সি, নিউইয়র্ক, ওহাইও, ওরেগন এবং পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের বৈধ কমার্শিয়াল ড্রাইভার লাইসেন্স রয়েছে।
এছাড়া আরও ৭জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়, যারা কোনো বাণিজ্যিক যানবাহন পরিচালনা করছিল না।
সব মিলিয়ে ৩৭ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর হেফাজতে হস্তান্তর করা হয়েছে, যেখান থেকে তাদের বিরুদ্ধে বহিষ্কার (ডিপোর্টেশন) প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বাফেলো সেক্টরের ভারপ্রাপ্ত চিফ প্যাট্রোল এজেন্ট জেমস ডি’আমাটো বলেন, ‘আমরা সম্প্রতি উদ্বেগজনকভাবে দেখছি যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বেআইনিভাবে অবস্থান করে বাণিজ্যিক যানবাহন চালাচ্ছে। যারা ইংরেজিতে কথা বলতে বা পড়তে পারে না-এমন চালকরা সড়কে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে, বিশেষ করে যখন তারা বড় যানবাহন চালায়, যেখানে দক্ষতা ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশজুড়ে এমন চালকদের কারণে বড় দুর্ঘটনার ঘটনা বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে জননিরাপত্তা রক্ষায় কঠোর নজরদারি ও প্রয়াস অব্যাহত রাখা জরুরি।’