Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাজ্যে কঠোর আশ্রয় নীতি, চাপের মুখে শাবানা মাহমুদ

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:২৮ এএম

যুক্তরাজ্যে কঠোর আশ্রয় নীতি, চাপের মুখে শাবানা মাহমুদ

যুক্তরাজ্যের নতুন আশ্রয় নীতি নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে, কারণ হোম সেক্রেটারি শাবানা মাহমুদ ঘোষণা করেছেন যে নিরাপদ ও বৈধ তিনটি নতুন স্কিমের আওতায় প্রথমদিকে মাত্র “কয়েকশ” আশ্রয়প্রার্থীকে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। সরকার যখন পরিবার বহিষ্কার, সম্পদ জব্দের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন এই সীমিত সংখ্যার সিদ্ধান্ত নীতির মানবিকতা ও কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অধিকারকর্মী ও আইনপ্রণেতারা।

শাবানা মাহমুদ এর আগে যুক্তি দিয়েছিলেন যে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি তিনি “সৎ” ও নিপীড়িত মানুষের জন্য বৈধ পথ খুলে দেবেন। তবে সোমবার তিনি জানান, নতুন স্কিমগুলো শুরুতে “সীমিত” আকারে থাকবে এবং কত দ্রুত বা কীভাবে তা বিস্তৃত হবে—সে বিষয়ে তিনি কোনো সময়রেখা দেননি।

এদিকে লেবারের দুই ডজনেরও বেশি এমপি সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, প্রণোদনা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে পরিবারকে জোর করে বহিষ্কারের পরিকল্পনা অত্যন্ত কঠোর এবং পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, যুদ্ধ বা নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের কাছে সীমিত “নিরাপদ পথ” কোনো বাস্তব বিকল্প হতে পারে না।

রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী এনভার সলোমন সতর্ক করে বলেন, মাত্র কয়েকশ মানুষকে সহায়তা করবে এমন একটি পরিকল্পনা বিপজ্জনক নৌযাত্রা ঠেকাতে সক্ষম হবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, প্রতি বছর কতজনকে নেবে এবং কত দ্রুত পথগুলো বিস্তৃত হবে—সরকারকে তা স্পষ্ট করতে হবে। সঠিকভাবে ডিজাইনকৃত নিরাপদ পথই কেবল প্রাণহানি ঠেকাতে পারে।

লেবার এমপি স্টেলা ক্রিসি বলেন, আশ্রয় ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে হলে নিরাপদ ও বৈধ পথের বিস্তৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সরকারকে বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে এবং নীতির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানান।

সরকার তিনটি নতুন পথ চালুর ঘোষণা দিয়েছে—ইউক্রেন স্কিমের আদলে শক্তিশালী ‘কমিউনিটি স্পনসরশিপ’, সংঘাতে বাস্তুচ্যুত দক্ষ মানুষদের যুক্তরাজ্যে চাকরির সুযোগ, এবং নিপীড়িত শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ভিসা পথ। হোম সেক্রেটারি জানান, এসব পথের বার্ষিক সীমা প্রকাশ করা হবে এবং অগ্রাধিকার পাবে ইউএনএইচসিআর মনোনীত শরণার্থীরা।

তবে ইউএনএইচসিআর সতর্ক করে বলেছে, শরণার্থীদের যেন অর্থনৈতিক অভিবাসীর মতো করা না হয়। সংস্থার যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি ভিকি টেন্যান্ট বলেন, শরণার্থীদের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল মর্যাদা, পরিবার পুনর্মিলন এবং নতুন জীবন শুরু করার সুযোগ দিতে হবে; স্বল্পমেয়াদি অনিশ্চয়তা কেবল তাদের দুরবস্থা বাড়ায়।

এদিকে হোম অফিস জানিয়েছে, প্রত্যাখ্যাত পরিবারগুলোর আর্থিক সহায়তা বাতিলের প্রস্তাব আনা হবে, যার লক্ষ্য অবৈধ যাত্রা রোধ করা। তবে সমালোচকরা বলছেন, এ ধরনের নীতি শিশুদের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এবং তাদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠছে।

লেবার পিয়ার আলফ ডাবস, যিনি শিশু অবস্থায় নাৎসি নিপীড়ন থেকে পালিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় পেয়েছিলেন, বলেছেন—শিশুদের কেন্দ্র করে নীতি তৈরি অবশ্যই দরকার, কিন্তু শিশুদের ব্যবহার রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে করা অনৈতিক। তিনি পরিবার পুনর্মিলন ও শিশুদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান।

সরকার কঠোর নীতি ও সীমিত আশ্রয় পথের সমন্বয়ে একটি নতুন কাঠামো দাঁড় করাতে চাইলেও—মানবিকতা, স্বচ্ছতা ও বাস্তব প্রয়োজন বিবেচনায় এসব নীতি কতটা কার্যকর হবে—তা নিয়ে বিতর্ক এখনো জোরালো।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার