Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

শরণার্থীদের স্থায়ী বসবাসের আবেদনসীমা বাড়িয়ে ২০ বছর করছে ব্রিটেন

Icon

ইনফোমাইগ্রেন্টস

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১৫ এএম

শরণার্থীদের স্থায়ী বসবাসের আবেদনসীমা বাড়িয়ে ২০ বছর করছে ব্রিটেন

অনিয়মিত অভিবাসন রোধে বড় ধরনের সংস্কার পরিকল্পনা পার্লামেন্টে উপস্থাপন করছে যুক্তরাজ্যের লেবার সরকার। আশ্রয়প্রার্থীদের সুরক্ষা কমানো, সামাজিক সহায়তা সীমিত করা এবং শরণার্থীদের স্থায়ী রেসিডেন্স পারমিটের আবেদনের জন্য অপেক্ষার সময়সীমা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ২০ বছর করার পরিকল্পনায় রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সরকারের দাবি, অনিয়মিত অভিবাসন এখন দেশটিকে ‘‘বিভক্ত’’ করে ফেলেছে এবং ছোট নৌকায় আগমনের ঘটনা রোধ করতে বড় ধরনের সংস্কারই একমাত্র পথ।

শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিকল্পনার দুইটি প্রধান দিক প্রকাশ করে। আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) পার্লামেন্টে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা উপস্থাপিত হওয়ার কথা রয়েছে।

শরণার্থীদের ‘অস্থায়ী স্ট্যাটাস’ 

ব্রিটিশ সরকারের এই সংস্কারে শরণার্থীদের মর্যাদা অস্থায়ী করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দেশটিকে ‘নিরাপদ’ ধরা হলে তাদের ‘‘নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে’’ এমন বিধান যুক্ত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শরণার্থীর পরিস্থিতি প্রতি ৩০ মাসে একবার পুনর্বিবেচনা করা হবে।

স্থায়ী বসবাসের আবেদন করার অপেক্ষার সময় ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ২০ বছর করা হচ্ছে। যা মূলত ডেনমার্কের অভিবাসন মডেল থেকে নেওয়া।

এছাড়া, আশ্রয় প্রত্যাখ্যানের পর আপিলের সুযোগ কমিয়ে আনা হবে।

সরকার একই সঙ্গে ‘‘নতুন বৈধ অভিবাসন পথ’’ খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত এখনো জানানো হয়নি।

চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজার ২৯২ জন ছোট নৌকায় চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। যা ২০২৪ সালের চেয়ে বেশি। তাদের প্রায় সবাইই যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেই আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

সামাজিক সহায়তা সীমিত করার প্রস্তাব

লেবার সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য স্বয়ংক্রিয় সাপ্তাহিক আর্থিক সহায়তা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

বর্তমানে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ভাতা ও আবাসনের ব্যবস্থা সরকারই করে থাকে। তবে বিপুল ব্যয়ে হোটেল ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

যারা কাজ করার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কাজ করেন না অথবা অপরাধে দণ্ডিত তাদের জন্য সামাজিক সহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ করা হতে পারে।

ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড দ্য সান–এর খবর অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থীদের ব্যক্তিগত সম্পদ বা অর্থ থেকে তাদের আবাসনের খরচ আদায় করার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি৷  

তবে, সরকারের অভিবাসন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালেক্স নরিস টাইমস রেডিও–কে বলেন, ‘‘যাদের সম্পদ আছে, তাদের পক্ষে নিজেদের ব্যয়ের একটি অংশ বহন করা স্বাভাবিক।’’

মানবাধিকার সুরক্ষায় বড় পরিবর্তন

সরকার ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশন (ইসিএইচআর)–এর যুক্তরাজ্যে প্রয়োগের নিয়ম পরিবর্তন করতে চায়, যাতে অনিয়মিত অভিবাসীদের ‘ডিপোর্ট’ বা নিজ দেমে ফেরত পাঠানো সহজ হয়।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শাবানা মাহমুদ কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ৮–এর (ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের অধিকার) পরিসর কমানোর পরিকল্পনা করছেন। কেবলমাত্র যুক্তরাজ্যে নিকটাত্মীয় যেমন সন্তান বা অভিভাবক থাকলেই কেউ অনিয়মিত হয়েও সেখানে থাকতে পারবেন।

এছাড়া ইসিএইচআর–এর অনুচ্ছেদ ৩ থেকে উদ্ভূত আধুনিক দাসত্ব প্রতিরোধ আইনের প্রয়োগও সংকুচিত করার কথা ভাবছে সরকার, যাতে এই আইনের মাধ্যমে আশ্রয়ের দাবি করা কঠিন হয়ে যায়।

দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাজ্য এই অনুচ্ছেদ সংশোধনে আলোচনাও শুরু করতে চায়।

ব্রিটিশ সরকারি হিসেবে, ২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয় আবেদনের হার ১৩ শতাংশ কমেছে। 

২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ৪ লক্ষের বেশি আশ্রয় আবেদন নথিভুক্ত হয়েছে। যা ২০১১–২০১৫ সালের মধ্যে নথিভুক্ত ১ লাখ ৫০ হাজার আবেদনের তুলনায় অনেক বেশি।

ভিসা সীমিত করার হুমকি

অনিয়মিত অভিবাসী পুনরায় গ্রহণে অনীহা দেখানোর অভিযোগে ব্রিটিশ সরকার অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রকে ভিসা সীমিত করার হুমকি দিয়েছে।

সরকারের অভিবাসন প্রতিনিধি অ্যালেক্স নরিস স্কাই নিউজ–কে বলেন, সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ‘‘এক মাস’’ সময় দেওয়া হয়েছে।

 লন্ডনের দাবি, এই দেশগুলোর ‘‘হাজার হাজার’’ নাগরিক বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অনিয়মিত অবস্থায় আছেন।

ভবিষ্যতে আরও কিছু দেশকে ভিসা সীমিতকরণের আওতায় আনা হতে পারে। বিশেষ করে যেসব দেশের নাগরিকরা বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেও ‘‘উচ্চ হারে’’ আশ্রয় আবেদন করছেন।

সমালোচনার ঝড়

সোমবার বিকেলের মধ্যে পার্লামেন্টে বিলের পূর্ণ পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হলেও লেবার পার্টির ভেতরেই তীব্র আপত্তি উঠেছে।

লেবার এমপি টনি ভন বলেন, এই নীতি ‘‘বিভেদের সংস্কৃতি উৎসাহিত করছে’’।

শরণার্থী অধিকার সংগঠন রিফিউজি কাউন্সিল পদক্ষেপগুলোকে ‘‘কঠোর’’ এবং ‘‘অকার্যকর’’ বলে অভিহিত করেছে।

জরিপে পিছিয়ে থাকা লেবার সরকারকে অনেকেই রিফর্ম ইউকে–র ডানপন্থি অবস্থান অনুকরণের অভিযোগ করছেন। তবে প্রতিমন্ত্রী অ্যালেক্স নরিস বলেন, ‘‘এতে কোনো রাজনৈতিক হিসাব নেই।’’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার