নিউইয়র্ক সিটির অভিবাসীদের জন্য অর্থসহায়তা ‘ক্যাশ অ্যাসিস্টান্স’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
নিউ ইয়র্ক সিটি শুধু আলো ঝলমলে নয়, হাজার হাজার অভিবাসীর জীবন সংগ্রামের প্রতীকও এ নগর। কেউ নতুন করে শুরু করছেন, কেউবা চেষ্টা করছেন তিল তিল করে গড়ে তোলা নতুন জীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে। সেই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে শহরের মানবিক সংস্থা হিউম্যান রিসোর্সেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন- এইচআরএর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি, যার নাম ‘ক্যাশ অ্যাসিস্ট্যান্স’।
ক্যাশ অ্যাসিস্ট্যান্স কী?
এটি মূলত নগদ আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি। যারা আর্থিকভাবে প্রতিকূল অবস্থায় আছেন, চাকরি হারিয়েছেন বা মাসের শেষে খরচ সামলাতে পারছেন না, তাদের জন্যই এ উদ্যোগ। এ সহায়তা পাওয়া যায় ইবিটি কার্ডে, যা দিয়ে কেনাকাটা করা যায় অথবা ব্যাংকের এটিএম থেকে নগদ অর্থ তোলা যায়।
এ সহায়তা শুধু অ্যামেরিকার নাগরিকদের জন্য নয়। অভিবাসী বা গ্রীন কার্ডধারী নন, এমন লোকজনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ সাহায্য পেতে পারেন।
নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের নীতি অনুযায়ী, মানবিক প্রয়োজনের ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব নয়, প্রয়োজনটাই মুখ্য। অর্থাৎ আপনি যদি শুধু এখানে বৈধভাবে বসবাস করেন এবং আপনার আয় খুব সীমিত হয়, তবে এ নগদ সহায়তার জন্য আবেদন করা সম্ভব।
বাংলাদেশি অ্যামেরিকানদের জন্য এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
অনেকেই এ শহরে ছোটখাটো কাজের সঙ্গে যুক্ত। রেস্টুরেন্ট, ডেলিভারি, ট্যাক্সি বা টিউশনি। অনেকে আবার শিক্ষার্থী, যাদের হাতে মাস শেষে টাকাটা শেষ হয়ে যায় খুব দ্রুত।
সে সময়টায় এ সহায়তা হতে পারে একটুখানি ভরসা। এটা কোনো দান নয়; বরং শহরের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার অংশ, যাতে কোনো মানুষ একেবারে শূন্য হাতে না থাকে।
কারা আবেদন করতে পারবেন?
এ কর্মসূচিতে আবেদন করতে হলে কিছু মৌলিক শর্ত পূরণ করতে হয়। আপনার পরিবারের আয় ও সম্পদ নির্দিষ্ট সীমার নিচেই থাকতে হবে। যদি আপনার পরিবারের সদস্যসংখ্যা বেশি হয় বা আপনার যদি সন্তান থাকে, তাহলে ফ্যামিলি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামের আওতায় সহায়তা পেতে পারেন। আর যদি আপনি একা হন, তাহলে সেফটি নেট অ্যাসিস্ট্যান্স নামের আরেকটি শাখা রয়েছে।
কী কী কাগজপত্র লাগবে?
আবেদনের সময় আপনার পরিচয়পত্র দিতে হবে। যেমন: পাসপোর্ট বা আইডি কার্ড। এ ছাড়া যেখানে থাকেন, তার প্রমাণ দিতে হবে। যেমন: ভাড়া রসিদ বা লিজ চুক্তি। আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা আয় বা কর্মস্থলের তথ্য দিতে হবে। সবচেয়ে ভালো দিক হলো এইচআরএর অফিসে বাংলা ভাষায় সহায়তা পাওয়া যায়। অর্থাৎ আপনি চাইলে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেন এবং অনুবাদকের সহায়তার জন্য অনুরোধ করতে পারেন।
সহায়তার ধরন কী রকম
নগদ এ সহায়তার পরিমাণ নির্ভর করে আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা এবং অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর। সাধারণভাবে একজন অবিবাহিত ব্যক্তির জন্য মাসিক গড়ে প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ ডলার পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হয়। যদি আপনার জরুরি সমস্যা থাকে, যেমন বাড়ি ভাড়া কিংবা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া বা খাবারের সংকট, তাহলে ইমারজেন্সি ক্যাশ অ্যাসিস্ট্যান্স বা এককালীন জরুরি অনুদানও পাওয়া যায়।
কীভাবে আবেদন করবেন?
এ সহায়তা পাওয়ার জন্য এক্সেস এইচআরএ ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে খুব সহজেই আবেদন করা যায়। আপনি চাইলে এইচআরএ বেনিফিট এক্সেস সেন্টারে গিয়েও আবেদন জমা দিতে পারেন। আবেদন জমা দেওয়ার পর একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়, যেখানে কর্মকর্তারা আপনার আর্থিক অবস্থার প্রমাণ চান। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সহায়তা দেওয়া শুরু হয়।
কিছু সতর্কতা
এই সহায়তা পাওয়া মানেই আপনি বড় অঙ্কের অর্থ পাবেন, বিষয়টা আসলে তা নয়। এটি সাময়িক আর্থিক সহায়তা, যা আপনার কঠিন সময়টায় কাজে আসতে পারে।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এ নগদ সহায়তা আপনার অভিবাসন প্রক্রিয়ায় সাধারণত কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না, তবে আপনি যদি ভিসা বা ইমিগ্রেশন প্রসেসে থাকেন, সেই ক্ষেত্রে আবেদনের আগে একজন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া ভালো।
শেষ কথা
নিউ ইয়র্ক একটি বহুজাতিক, বহু জীবনের শহর। এখানে কেউ একা নন।
বাংলাদেশি অ্যামেরিকানদের অনেকেই এখন এ সহায়তা নিচ্ছেন; ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন।
এ কর্মসূচির লক্ষ্য সেটাই। আপনাকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করা; নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ দেওয়া।
সাহায্য চাওয়া দুর্বলতা নয়, এটা সচেতনতার পরিচয়। তাই যদি প্রয়োজন হয়, এক্সেস এইচআরএ ওয়েবসাইটে যান আর আবেদন করুন।