ভাইরাল সেই নারী সম্পর্কে যা জানা গেল
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:০৩ পিএম
গত কয়েক দিনে যদি আপনি ‘এক্স’ (পূর্বতন টুইটার)-এ চোখ বুলিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই ‘ব্লু শাড়িওয়ালি’ অর্থাৎ নীল শাড়ি পরিহিতা এক ললনাকে নিয়ে হওয়া আলোচনা দেখেছেন। যাঁর কথা সবাই বলছে, তিনি হলেন অভিনেত্রী গিরিজা ওক গোড়বোলে—যাঁকে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ বলছে ‘ইন্ডিয়ার সিডনি সুইনি’, আবার কেউ তুলনা করছেন মনিকা বেলুচির সঙ্গে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে মারাঠি এবং হিন্দি চলচ্চিত্রে কাজ করছেন এই অভিনেত্রী।
ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে গিরিজা জানিয়েছেন, “আমি মুগ্ধ এবং খানিকটা মজা পাচ্ছি! রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ আমার ফোনে কল, মেসেজের বন্যা বয়ে যায়।
আমি তখন নাটকের মহড়ায় ব্যস্ত ছিলাম, তাই ফোন ধরতে পারিনি। বন্ধুরা একে একে মেসেজ করতে শুরু করল—‘তুমি জানো, এক্স-এ কী চলছে?’”
তিনি আরো বলেন, “এক বন্ধু, এমনকি একটা পোস্ট পাঠাল যেখানে বিতর্ক হচ্ছিল—ছবিটা আমি, না অভিনেত্রী প্রিয়া বাপট! এরপর আমার দেওর জানাল, কিছু খারাপ মানের হ্যান্ডল আমার ছবিগুলো নিয়ে ‘ভাবি লাভার’ টাইপের পোস্ট করছে। কেউ কেউ আমার ছবি যৌনায়িত করছে। কিন্তু মারাঠি দর্শকরা বললেন, ‘তোমরা এখন চিনলে কী হবে, আমরা তো অনেক বছর ধরে ওকে চিনি!’”
‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে মিমে ভরে গেলেও গিরিজা সেটিকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন।
তাঁর কথায়, “বয়স ও অভিজ্ঞতার দোহাই দিয়ে বলি, এটা এক ধরনের ট্রেন্ড—আসবে, আবার মিলিয়ে যাবে। কিন্তু আমি যে কাজ করি, সেটা টিকে থাকবে। যদি এই সুযোগে কেউ আমার কাজ আবিষ্কার করে, সেটাই আমার কাছে আনন্দের।”
ভাইরাল হওয়া নিয়ে পরিবারের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গিরিজা বলেন, “আমার সৌভাগ্য, আমি এমন এক পরিবার থেকে এসেছি, যেখানে সবাই ছবির সঙ্গে জড়িত।
বাবা একজন অভিনেতা, শ্বশুর প্রযোজক, আর স্বামী একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। আমরা সবাই জানি, জনসমক্ষে থাকলে মতামত ও প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তাই এসব নিয়ে বাড়াবাড়ি করার প্রয়োজন হয় না। এই ইন্ডাস্ট্রির প্রকৃতিই এমন। নিজেকে যখন প্রকাশ্যে আনো, তখন আলোচনা হবেই।”
যে ভিডিওটি গিরিজাকে হঠাৎ করে সোশ্যাল মিডিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে, সেটি ছিল এক সাক্ষাৎকারের অংশ। সেখানে গিরিজা একটি কলেজ জীবনের ঘটনা শেয়ার করেছিলেন—যা নিয়ে এখন নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন।
সাক্ষাৎকারে গিরিজা জানান, একবার তাঁর পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্লাসে এসে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হোয়াট আর বেবস?’
প্রশ্নটি শুনে পুরো ক্লাস হতভম্ব। সবাই ভাবছিলেন, স্যর হঠাৎ এমন প্রশ্ন কেন করছেন! গিরিজা বলেন, “আমরা সবাই চুপ। স্যার এক ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি বলো, হোয়াট আর বেবস?’ সেও কিছু বলতে পারল না। তারপর স্যার এক মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হোয়াট আর বেবস?’ আমরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।”
শেষ পর্যন্ত বোঝা গেল, এটি আসলে একটি উচ্চারণজনিত ভুল-বোঝাবুঝি। অধ্যাপক আসলে বলতে চেয়েছিলেন ‘ওয়েভস’—কিন্তু উচ্চারণে সেটা ‘বেবস’ শুনিয়েছিল!
এই মজার মুহূর্তের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ক্লিপটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই গিরিজার নাম ট্রেন্ড করতে শুরু করে, আর অভিনেত্রীর ফোন ভরে যায় বন্ধুবান্ধব ও ভক্তদের বার্তা এবং কলে।
মারাঠি, হিন্দি ও কন্নড়—তিন ভাষার চলচ্চিত্রেই সমান দক্ষতায় অভিনয় করেছেন গিরিজা। বলিউডে তাঁর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে ‘তারে জমিন পর’, ‘শোর ইন দ্য সিটি’ , এবং সাম্প্রতিক ব্লকবাস্টার ‘জওয়ান’।
১৯৮৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর মহারাষ্ট্রের নাগপুরে জন্ম নেওয়া গিরিজা, বিশিষ্ট অভিনেতা গিরিশ ওক-এর কন্যা। ২০১১ সালে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা সুহৃদ গোড়বোলেকে বিয়ে করেন।
গিরিজা মুম্বাইয়ের ঠাকুর কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স থেকে বায়োটেকনোলজিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পাশাপাশি বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়েও পড়াশোনা করেছেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি থিয়েটার ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণই তাঁর অভিনয়জীবনের ভিত্তি তৈরি করে দেয়। মঞ্চাভিনয় থেকেই শুরু হওয়া এই যাত্রাই পরবর্তীতে তাঁকে এক বহুমুখী শিল্পী হিসাবে গড়ে তুলেছে।