মামদানিকে দেশছাড়া করতে মরিয়া ট্রাম্পদলীয় নেতারা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৪৭ এএম
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র জোহরান মামদানি। দেশটিতে ৪ নভেম্বর মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তাকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা-সমালোচনা।
এরই মধ্যে মামদানিকে ঠেকাতে একবারে মরিয়া হয়ে উঠেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি। মামদানির নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন রিপাবলিকানরা। কোনো প্রমাণ ছাড়াই তারা অভিযোগ করছেন, মামদানি সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত এবং তিনি নাগরিকত্ব আবেদনের সময় মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দাবি আইনি বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও কার্যত অসম্ভব। আল-জাজিরা।
নির্বাচনের আগেও মামদানিকে আটকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল রিপাবলিকান পার্টি। অর্থকড়ি ঢেলে ও বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা চালিয়েও সফল হয়নি তারা। মামদানিকে নিয়ে নানা কথা বলেছিলেন ট্রাম্পও। এমনকি হুমকি দিয়েছিলেন, মামদানি মেয়র হলে নিউইয়র্কে কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ করে দেবেন তিনি। তবে কোনোভাবেই মামদানিকে না আটকাতে পেরে এবার তার নাগরিকত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে যেন কোনোভাবেই দায়িত্ব নিতে না পারেন নতুন মেয়র।
রিপাবলিকান কয়েকজন আইনপ্রণেতা মামদানির নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রক্রিয়া তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। অনেকেই আবার তার নাগরিকত্ব বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করার কথা বলেছেন। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান অ্যান্ডি ওগলেস ও র্যান্ডি ফাইন দাবি করেন, মামদানি নাকি নাগরিকত্ব পাওয়ার সময় মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন এবং সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের সম্পৃক্ততা গোপন করেছেন।
ওগলস যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডির কাছে মামদানির নাগরিকত্ব প্রক্রিয়া তদন্ত করার এবং তাকে দেশ থেকে বের করে দিয়ে উগান্ডায় ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করেছেন।
ওগলস বলেন, ‘যদি প্রমাণিত হয় মামদানি তার নাগরিকত্বের নথিতে মিথ্যা বলেছেন, তাহলে তিনি নাগরিক থাকার যোগ্য নন এবং নিউইয়র্কের মেয়র হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।’ নিউইয়র্কের মেয়র প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেন রিপাবলিকানরা। গত জুনে পাম বন্ডিকে লেখা একটি চিঠিতে মামদানির নাগরিকত্ব বাতিলের জন্য বিচার বিভাগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ওগলস। যদিও এ অভিযোগের এখনো কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি তারা।
রিপাবলিকানদের আরেকটি অভিযোগ হলো, মামদানি তার নাগরিকত্বের ফর্মে ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকা (ডিএসএ)-এর সদস্যপদ গোপন করেছেন। এটিকে তারা একটি কমিউনিস্ট সংগঠন বলে দাবি করছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডিএসএ কমিউনিস্ট দল নয়, এটি কমিউনিজমের বিকল্প হিসাবে উঠে আসা গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের একটি ধারা।
এদিকে মার্কিন ফ্যাক্ট চেকিং ওয়েবসাইট পলিটিফ্যাক্ট বলছে, নাগরিকত্ব আবেদনপত্রে কোনো তথ্যই গোপন করেননি মামদানি। জোহরান মামদানির জন্ম উগান্ডায়। ১৯৯৮ সালে মাত্র সাত বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে দেশটির নাগরিকত্ব পান।
অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন নাগরিকত্ব বাতিল বা ‘ডিন্যাচারালাইজেশন’ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বিরল পদক্ষেপ। এছাড়া এটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। এটি কেবল আদালতের আদেশে করা যায় এবং সরকারকে অকাট্য প্রমাণ দিতে হবে যে আবেদনকারী জেনেশুনে গুরুত্বপূর্ণ মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। অভিবাসনবিষয়ক আইনজীবী জেরেমি ম্যাককিনি বলেন, ‘মামদানির অযোগ্যতার কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আমি দেখিনি।’
সূত্র: আল-জাজিরা