Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

যেভাবে শোষণের শিকার যুক্তরাজ্যের অনেক অভিবাসী শ্রমিক

Icon

ইনফোমাইগ্রেন্টস

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪৪ এএম

যেভাবে শোষণের শিকার যুক্তরাজ্যের অনেক অভিবাসী শ্রমিক

আগের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে অভিবাসী শ্রমিকদের উপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করছে যুক্তরাজ্য৷ কিন্তু দেশটির শ্রম বিষয়ক বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং ফাঁকফোকর অভিবাসী কর্মীদের শোষণের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে৷

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান রেমিটলির সর্বশেষ তথ্য মতে, বিদেশি শ্রমিকেরা যুক্তরাজ্যের পরিবহণ, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ নানা খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন পাউণ্ডের অর্থনৈতিক অবদান রাখছে৷  

এদিকে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাদ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে কীভাবে অনিয়মিত অভিবাসীরা কিংবা আশ্রয়ের অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীদের কাজে যুক্ত করা হচ্ছে এবং কীভাবে তারা শোষণের শিকার হচ্ছেন৷  

এই দুই প্রতিষ্ঠানের বিপরীতধর্মী তথ্য এমন এক দেশে অভিবাসীদের পরিস্থিতির কথা বলছে, যে দেশের অর্থনীতি বিদেশি শ্রমিকদের হাত ধরে শক্তিশালী হয়েছে৷ 

ভৌতিক কোম্পানির বিশাল চক্র

বিবিসির অনুসন্ধানে এমন কিছু ছোট ও মাঝারি মানের প্রতিষ্ঠানের নাম বেরিয়ে এসেছে যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোম্পানির পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার মতো কাজ করছে৷ এর মধ্যে রয়েছে মিনি সুপারমার্কেট কিংবা নাপিতের দোকান৷

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক আশ্রয়প্রার্থীকে ব্যবসা পরিচালনার কাজে নিয়োগ দিচ্ছে৷ তাদেরকে মাসিক ৩০০ পাউণ্ড বেতনে কাজে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে এবং দেখানো হচ্ছে যে, তারা কোম্পানির পরিচালক৷

শোষণের শিকার অনেক অভিবাসী শ্রমিক

বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেওয়া অনেক দোকান শ্রমিক হয় আশ্রয়প্রার্থী কিংবা অনিয়মিত অভিবাসী৷ এই সকল মানুষেরা ঘণ্টায় চার পাউন্ডের বিনিময়ে কাজ করছেন৷ দৈনিক কাজের সময় ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত হয়ে থাকে৷ 

দ্য গ্যাংমাস্টার অ্যান্ড লেবার অ্যাবিউজ অথরিটি জানায়, ছোট খুচরা ব্যবসা এবং সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই ধরণের ঘটনা বেশি ঘটার ঝুঁকি থাকে৷

২০২৪-২৫ সালের প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, কার ওয়াশ, নির্মাণ, এবং খুচরা বিক্রির দোকানপাটগুলোতে অনিয়মিত শ্রমিকদের শোষণের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে৷

এদিকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট চিফ ইনস্পেক্টর অব বর্ডারস অ্যান্ড ইমিগ্রেশনের ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদন বলছে, এমন কাজের জন্য খুব কমই প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর জরিমানার ঘটনা ঘটে৷ বরং তা আটক হওয়া শ্রমিকদের উপর বেশি পড়ে৷

তবে এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও অবৈধ কাজের সাথে যুক্ত এমন কতজনকে আটক করা হয়েছে তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি৷

উল্লেখ্য, আশ্রয়প্রার্থীরা আশ্রয়ের আবেদন চলাকালীন সময়ে ব্রিটেনে কাজ করার সুযোগ পান না৷ এসময় তাদেরকে প্রতি সপ্তাহে ৪৯ পাউন্ড করে প্রদান করা হয়৷ এর ফলে অনেকেই টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন জায়গার কাজের সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে থাকেন৷ 

‘‘সত্যি বলতে কী, আমরা সবাই এখানে সংগ্রাম করছি এবং জানি না কী করতে হবে,’’ নিজের পরিস্থিতির কথা এভাবেই বললেন একজন কুর্দিশ আশ্রয়প্রার্থী৷

স্বাস্থ্য ও সেবা খাতের কর্মীদের নিরাপত্তা

চলতি বছরের এপ্রিলে সরকারের করা নতুন এক বিধি অনুযায়ী, স্বাস্থ্যখাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়োগ প্রদানের বেলায় প্রথমে যুক্তরাজ্যের ভেতর থেকে কর্মী পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে৷ ২০২০ সালে প্রণীত ‘হেলথ অ্যান্ড কেয়ার ওয়ার্কার ভিসার’ আওতায় যেসকল অভিবাসী কর্মী যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন তাদেরকে সুরক্ষা দিতেই এমন আইন প্রণয়ন করে সরকার৷

আগের আইন অনুযায়ী, এই খাতের কোনো কর্মীর চাকরি চলে গেলে নতুন চাকরি খুঁজে পেতে ৬০ দিন সময় দেওয়া হতো৷ এই সময়ের মধ্যে চাকরি বের করতে না পারলে ওই অভিবাসী শ্রমিককে নিজ দেশে ফেরত চলে যেতে হতো৷

এর ফলে স্বাস্থ্য ও সেবা খাতের অনেক কর্মী শোষণের শিকার হতেন বলে অভিযোগ রয়েছে৷ 

গত বছরের এপ্রিল ও জুন মাসে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শ্রমিক শোষণের ঘটনার ৬১ ভাগই স্বাস্থ্য সেবা কিংবা এই সংশ্লিষ্ট খাত থেকে আসছে৷  

ডিজিটাল আইডির বিধান

ইউরোপের অন্যান্য দেশে থাকলেও যুক্তরাজ্যে কোনো জাতীয় পরিচয়পত্রের বিধান নেই৷ এরফলে চাকরিদাতাদেরকে কর্মীদের কাজের অনুমতির বিষয়াদি যাচাইবাছাইয়ের জন্য তাদের পাসপোর্ট, বায়োমেট্রিক ডেটা এবং রেসিডেন্স পারমিটের উপর নির্ভর করতে হতো৷  

এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার ন্যাশনাল ডিজিটাল আইডি তৈরির ঘোষণা দেয়৷ এই আইডির মাধ্যমে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কিংবা বাসাভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে তথ্য যাচাইবাছাই করা যাবে৷

সরকারের দাবি, নতুন এই পদ্ধতি অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে৷

বিদেশি শ্রমিকদের উপর যুক্তরাজ্যের নির্ভরতা

যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠান রেমিটলি জানায়, যুক্তরাজ্যের পরিবহণ এবং যোগাযোগ খাতের ২৭ ভাগই বিদেশি বংশোদ্ভূত কর্মী৷ আর ২০১৮ সালের পর থেকে উৎপাদন খাতে ইইউর বাইরের দেশের শ্রমিকের সংখ্যা ৬৬ ভাগ বেড়েছে৷ এদিকে যুক্তরাজ্যে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া এবং স্লোভাকিয়ার শ্রমিকের সংখ্যা ১৬ ভাগ কমেছে৷  

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইগ্রেশন অবজারভেটরি জানায়, বিদেশিদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেশটির স্বাস্থ্য এবং সেবা খাত সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে৷ গত পাঁচ বছরে, এই খাতে বিদেশি বংশোদ্ভূত শ্রমিকের সংখ্যা ১১৬ গুণ বেড়েছে৷ এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ২০২৮ সাল নাগাদ যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য এবং সেবা খাতে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা ১৮ লাখে দাঁড়াবে৷

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার