Logo
Logo
×

আন্তর্জাতিক

জানুয়ারিতে শুরু হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ পরীক্ষা

Icon

জাগো বাংলা প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০২:২১ এএম

জানুয়ারিতে শুরু হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ পরীক্ষা

যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ পাওয়ার জন্য যারা ২০ অক্টোবরের পর আবেদন করেছেন, তাদের পরীক্ষা হবে নতুন নিয়মে। ইতিমধ্যে এই নিয়ম চালু হয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যারা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নোটিশ পাবেন, তারা সিভিক টেস্টের জন্য ১২৮টি প্রশ্ন পড়ে প্রস্তুতি নেবেন। ১২৮টি প্রশ্ন-সংবলিত প্রস্তুতি বুক ইতিমধ্যে ইউএসসিআইএসের সাইটেও রয়েছে। নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এই পরীক্ষা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সিটিজেনশিপ পরীক্ষায় চারটি ধাপ থাকবে। এগুলো হলো প্রার্থীর ইংরেজি বোঝার, জানার, বলার ও লেখার ক্ষমতা আছে কি না; যুক্তরাষ্ট্রের সরকার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সরকার কাঠামো সম্পর্কে ধারণা আছে কি না; তিনি একজন গুড মোরাল কারেক্টারের অধিকারী ও নিরপরাধ ব্যক্তি কি না এবং পরীক্ষার আগে প্রার্থীর ব্যাকগ্রাউন্ড চেকসহ তিনি কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না তাও বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা হবে। প্রার্থীর প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও তার ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হতে পারে। যারা সকল ধাপে উত্তীর্ণ হবেন, তাদের ডাকা হবে মূল ইন্টারভিউয়ের জন্য।

অভিজ্ঞজনরা বলছেন, ইউএসসিএসআই যেদিন ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকবে, সেদিনই যাওয়া উচিত। তারিখ পরিবর্তন না করাই ভালো। ইন্টারভিউ শুরুর কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট আগে পৌঁছাতে হবে। কেউ চাইলে তার অ্যাটর্নিকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। তবে সব প্রশ্নের উত্তর প্রার্থীকেই দিতে হবে। অ্যাটর্নি কোনো কিছুর উত্তর দেবেন না। তিনি সঙ্গে থাকবেন এবং দেখবেন সবকিছু সঠিকভাবে হচ্ছে কি না। কোনো ধরনের ডিসক্রিমিনেশন হয় কি না বা অফিসার এমন কিছু করছেন কি না, যেটি করা উচিত নয়। এমন কিছু হলে অ্যাটর্নি আপত্তি জানাতে পারেন। তবে যারা মনে করেন নিজেরাই সাহসী, একাই পারবেন, তারা একাই যেতে পারেন। ইন্টারভিউ শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট অফিসার প্রার্থীর পাসপোর্ট, আইডি, গ্রিনকার্ড প্রভৃতি দেখতে চাইতে পারেন। সেগুলো দেখাতে হবে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারভিউতে সিভিল টেস্টের পার্টে ২০টি প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে। এই ২০টি প্রশ্নের মধ্যে প্রার্থীকে পাস করার জন্য কমপক্ষে ১২টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে। কেউ ৯টি প্রশ্নের ভুল উত্তর দিলে তিনি এই পার্টে ফেল করবেন। তাকে আবার পরীক্ষা দিতে হবে।

লেখার ক্ষমতা বোঝার জন্য ইংরেজি বাক্য লিখতে দেওয়া হবে। বাক্য সঠিকভাবে লিখতে হবে। প্রথমটি লিখতে পারলেই পাস। কেউ ভুল লিখলে তাকে আবার সুযোগ দেওয়া হবে। 

পড়ার জন্য বাক্য পছন্দ করে দেবেন অফিসার। প্রার্থীকে সেই ইংরেজি বাক্য নির্ভুলভাবে পড়ে শোনাতে হবে। এই পরীক্ষায় পাস করতে না পারলে আবার সুযোগ দেওয়া হবে।

পরীক্ষার সময় আবেদনকারীকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, তিনি যেসব তথ্য দিচ্ছেন ও ফরম পূরণের সময় যেসব তথ্য দিয়েছিলেন, তা যেন হুবহু একই হয়। তথ্যে কোনোভাবেই গরমিল করা যাবে না। কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা থাকলে, কোনো অপরাধের তদন্ত চলতে থাকলে তা উল্লেখ করাই ভালো। কারণ ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করার সময় এসব বিষয় ধরা পড়লে সমস্যা হতে পারে। মামলা নিষ্পত্তি হয়ে থাকলে সেই নথিও সঙ্গে রাখা ভালো, প্রয়োজন হলে সেটি দেখানো যাবে। ট্যাক্স রিটার্নের কপি ও ট্যাক্স ট্রান্সক্রিপ্ট সঙ্গে রাখতে হবে। 

ট্যাক্স রিটার্ন দেখা হয় মূলত আবেদনকারীর নিয়মিত ট্যাক্স ফাইল করেন কি না এবং সরকার তার কাছে করের কোনো বকেয়া অর্থ পাবে কি না। তাই সিটিজেনশিপ পরীক্ষা দেওয়ার আগে সকল বকেয়া কর পরিশোধ করতে হবে। সেই নথিও সঙ্গে রাখতে হবে। 

এ ছাড়া সিটিজেনশিপের আবেদনে যেসব প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ এবং না দুভাবেই দেওয়া যায়, সেসব প্রশ্নের উত্তর জেনে-বুঝে সঠিকভাবে দিতে হবে। কারণ সেখানে যৌন অপরাধ, সন্তান-সন্ততির ভরণ-পোষণ না দেওয়া, আগের কোনো স্বামী/স্ত্রী থাকলে সেসব বিষয়, কোনো ক্রিমিনাল সংগঠন বা নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য কি না প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। অনেকে সাবওয়েতে কিংবা গাড়ি চালাতে গিয়ে টিকিট পান, এ ধরনের কোনো টিকিট পেলে এর বর্তমান পরিস্থিতি এবং নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এর প্রয়োজনীয় নথিপত্র রাখতে হবে। মোটকথা একজন গুড মোরাল ক্যারেক্টার ও নিরাপদ মানুষের যেসব যোগ্যতা থাকা দরকার, আবেদনকারীর সেই সব যোগ্যতা থাকতে হবে।

এ বিষয়ে একজন অ্যাটর্নি বলেন, ২০ অক্টোবর থেকে যারা আবেদন জমা দিয়েছেন, তাদের আবেদন পর্যালোচনা শেষে ও ব্যাকগ্রাউন্ড চেক শেষে পরীক্ষা শুরু হতে পারে আগামী দু-তিন মাস পর। এটি আগামী জানুয়ারিতে শুরু হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ সিটিজেনশিপ আবেদন করার পর সব মিলিয়ে তিন থেকে পাঁচ মাসের মতো সময় লাগছে। আবেদন করার পর সব কাজ দ্রুত হলে এর চেয়ে কম সময়েও পরীক্ষা হতে পারে। কেউ যদি কোনো সেকশনে পাস না করেন, তাহলে তাকে পরবর্তীতে যে সেকশনে ফেল করবেন, সেই সেকশনের পরীক্ষা দিতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি সিটিজেনশিপ পরীক্ষায় পাস করার পর যদি দেশের বাইরে যান বা কোনো ধরনের অপরাধ করেন, তাহলে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। প্রার্থীদের শপথ গ্রহণের আগ পর্যন্ত ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয়। কেউ অপরাধ করে থাকলে তার শপথ হবে না। কেউ দেশের বাইরে গেলে কত দিন ছিলেন এবং ওই সময়ে কোনো অপরাধ করেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হয়। এ কারণে শপথ বিলম্ব হতে পারে। তাই যারা সিটিজেনশিপ পরীক্ষায় পাস করবেন, তাদের উচিত শপথ নেওয়ার পর আমেরিকান পাসপোর্ট পেয়ে বাইরে যাওয়া। যে দেশে যাবেন, সেই দেশের ভিসা বা নো রিয়ার সিল নিয়ে ভ্রমণ করা।

সিটিজেনশিপের শেষ ধাপ হলো শপথ নেওয়ার পর সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। এর আগে যাদের ওয়ার্ক অথরাইজেশন কার্ড ও গ্রিনকার্ড রয়েছে, সেগুলো অফিসারের কাছে জমা দিতে হবে। এরপর নাগরিক সনদ নিতে হবে। কেউ চালাকি করে যদি আগে ইস্যু করা কোনো নথি নিজের কাছে রাখেন, তাহলে তার শপথ গ্রহণ নাও হতে পারে। কারও শপথ গ্রহণের সময় কোনো কারণে এসব নথি নিয়ে যেতে ভুলে গেলে তার বাসার কাউকে দিয়ে সেটি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানস্থলে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। সিটিজেনশিপের সনদ হাতে পাওয়া এবং শপথ গ্রহণের ভবন থেকে বের হওয়ার পরই কোনো ব্যক্তি স্বাধীন ও পুরোপুরি আমেরিকান নাগরিক।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: মহিউদ্দিন সরকার