বকেয়া বেতন চাওয়ায় মক্কায় অভিবাসী শ্রমিক গ্রেপ্তার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:২২ পিএম
সৌদি আরবের মক্কায় অন্তত ৬০০ জন অভিবাসী শ্রমিক টানা আট মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছেন। তাদের নিয়োগকর্তা ‘সৌদি এরাবিয়ান বাইতুর কনস্ট্রাকশন কোম্পানি’ প্রায় ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ‘মাসার পুনর্গঠন প্রকল্পে’ কাজ করছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মিশর ও তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা এই প্রকল্পে কর্মরত রয়েছেন।
এই প্রকল্পটি অর্থায়ন করছে সৌদি সরকারের সার্বভৌম তহবিল পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (পিআইএফ)।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) জানিয়েছে, মাসের পর মাস ধরে বেতন না পাওয়ায় শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে নেমেছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১১ জনকে সৌদি কর্তৃপক্ষ গ্রেপ্তারের পর মুক্তি দিয়েছে।
তবে সংস্থাটি বলেছে, মক্কার মতো পবিত্র নগরীতে বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে নিম্নআয়ের শ্রমিকদের বেতন আটকে দেওয়া সৌদি আরবের শ্রম সুরক্ষা ব্যবস্থার ভঙ্গুর চিত্র প্রকাশ করেছে।
শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, গত দুই বছর ধরে অনিয়মিতভাবে তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছিল। এমনকি গত আট মাসে এক টাকাও পাননি তারা। কেউ কেউ ‘আজাদ ভিসা’ (যে ভিসা নির্দিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত নয়) নিয়ে কাজ করছিলেন। বাইতুর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
একজন প্রাক্তন তুর্কি শ্রমিক জানান, তিনি প্রায় দেড় লাখ সৌদি রিয়াল (প্রায় ৪০ হাজার মার্কিন ডলার) বেতন ও অন্যান্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। গত দুই বছর ধরে শুধু আশ্বাস পেয়েছেন তিনি। “টাকা আসছে”, “ব্যাংকে আটকে আছে”, “সই বাকি” এসব অজুহাতেই সময় কেটেছে তার।
এদিকে, গত সেপ্টেম্বরে অনলাইনে ছড়ানো এক ভিডিওতে দেখা যায়, শতাধিক শ্রমিক বাইতুরের ক্যাম্পে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রতিবাদ করছেন। তাদের হাতে লেখা রয়েছে,“আমাদের টাকা পরিশোধ করুন”, “বাইতুর কর্মকর্তারা কোথায়?”, “আমাদের জীবন বাঁচান”।
ভিডিওতে এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা এখন নির্বাসিতদের মতো, যারা ঋণ শোধ করতে পারছি না। পরিবারের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না।’
গ্রেপ্তার হওয়া শ্রমিকদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমরা জানতাম না ধর্মঘট করা অপরাধ। আমাদের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে হাতকড়া পরানো হয়েছিল।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, সৌদি আরবে শ্রমিকদের ধর্মঘট, ট্রেড ইউনিয়ন গঠন বা সমষ্টিগত দরকষাকষি আইনত নিষিদ্ধ। এ কারণে অধিকাংশ শ্রমিক কথা বলতে ভয় পান। তুরস্কের প্রগ্রেসিভ কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি ওজগুর কারাবুলুত বলেন, ‘আমরা বন্ধুদের নিরাপত্তার কারণে প্রকাশ্যে কিছু করতে পারছি না। কিন্তু আমাদের পাওনা আদায়ের লড়াই চলবে।’
সৌদি আরবের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি তদন্ত করেছে এবং সংশোধনী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে কতজন শ্রমিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন বা মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
বর্তমান বিধি অনুযায়ী, সৌদি আরবের ওয়েজ ইনসিওরেন্স সার্ভিস সর্বোচ্চ ১৭ হাজার ৫০০ রিয়াল (প্রায় ৪,৬০০ ডলার) পর্যন্ত বেতন ফেরত দেয়। তবে এতে দীর্ঘমেয়াদি শ্রমিকদের শেষ পাওনা বা গ্র্যাচুইটি অন্তর্ভুক্ত নয়। ফলে বহু শ্রমিক লক্ষাধিক রিয়ালের দাবি হারিয়ে ফেলতে পারেন।
এ ছাড়া ২০৩৪ সালে সৌদি আরব ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনে প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং দেশজুড়ে নতুন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই চলমান পরিস্থিতি সৌদি আরবের শ্রমনীতি ও বাস্তব চিত্রের করুণ উদাহরণ।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক উপপরিচালক পেজ বলেন, ‘দুর্বিসহ গরম আর কঠিন পরিবেশ সহ্য করে পরিবারকে রোজগার পাঠানো শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা না দেওয়ার কোনো অজুহাত থাকতে পারে না।’